এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৯ সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশ এখন আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি বা বিএনপি-এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির হাতে । প্রায় প্রতিদিন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর জিহাদি হামলার ঘটনা ঘটছে । শারদোৎসবের ঠিক মুখেই একের পর এক মন্দিরে হামলা এবং মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে । এমত পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় বহু দূর্গা পূজা উদ্যোক্তা এবারে পূজো করছেন না বলে জানা গেছে । এদিকে বাংলাদেশের এক জিহাদী তরুণী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি পোস্ট প্রকাশ্যে এসেছে । পাপিয়া নাসরিন(Papia Nasrin) নামে ওই জিহাদী হিন্দুদের হুমকি দিয়ে বলেছে,’ভারতে গিয়ে যত ইচ্ছা পূজো কর, এটা মুসলমানদের দেশ, বাড়াবাড়ি করলে ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে যা হয়েছিল সেটাই হবে ।’ প্রসঙ্গত,পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলি নৃশংস ও ভয়াবহ নরসংহারের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে অধূনা বাংলাদেশের নোয়াখালীর হিন্দু নরসংহার ছিল অন্যতম । ১৯৪৬ সালের ১০ অক্টোবর কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার দিন শুরু হয় গনহত্যা । চলে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে । ভারত ও বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) আন্ডার সেক্রেটারি আর্থার হেন্ডারসন হাউস অব কমন্সে পরে জানান, নোয়াখালীর হিন্দু গনহত্যার সময় ৫০০০০ হিন্দুকে হত্যা এবং ৭৫০০০ হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ ও ধর্মান্তরকরন করা হয় । ইসলামি মৌলবাদীদের হামলার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ৫,০০০ থেকে ৭,৫০০ হতভাগ্য হিন্দু কুমিল্লা, চাঁদপুর, আগরতলা ও অন্যান্য জায়গার অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে চলে যান । এছাড়া প্রায় ৫০,০০০ আক্রান্ত হিন্দু এলাকার মুসলিমদের অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন ।
বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ফেসবুক পেজে ওই জিহাদি তরুনীর হুমকি পোস্টের স্ক্রীন শর্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়ায় লেখা হয়েছে, ‘খুলনা জেলার দৌলতপুর ডে-নাইট কলেজের সহকারী অধ্যাপক পাপিয়া নাসরিনের বক্তব্যে আমরা অবাক হইনি । তার এই বক্তব্য ৯৫ শতাংশ মনের কথা ।’
এর আগে বাংলাদেশের জিহাদি পুরুষদের এই ধরনের বহু হুমকি পোস্ট সামনে এসেছিল । কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহিলা জিহাদীদের এই প্রকার হুমকি পোস্ট প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে ।
বাংলাদেশী জিহাদীদের হুমকির জেরে এবারে যশোর জেলায় কয়েকশো পুজো কমিটি পুজো করছেন না বলে জানা গেছে । ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, যশোরে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৭১৩ টি । ২০২৩ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩২ টি । কিন্তু এবারের সেই সংখ্যা কমে ৬৫৬ টিতে দাঁড়িয়েছে । শুধু যশোর জেলায় নয়, বাংলাদেশের বহু জেলায় এবারে দুর্গাপূজার সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গেছে । ফরিদপুর জেলায় এবারে ১০০ টি কমিটির দুর্গাপূজা হচ্ছে না বলে জানা গেছে ।
তবে শুধু দুর্গাপূজা বন্ধ করে দেওয়াই নয়, বাংলাদেশের হিন্দুরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মুসলমানদের দ্বারা । বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ফেসবুক পেজে শ্রাবণ সরকার নামে এক ব্যবহারকারী পোস্ট করেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শামসুন নাহার হলে মেয়েরা নিজ অর্থায়নে একটা ফিস্ট আয়োজন করতে চেয়েছিলো। সেখানে প্রথমে খাসির মাংসের আয়োজনের কথা বলা হয়। এরপরে অনেক মুসলিম মেয়েরা খাসির মাংস খায়না দেখে গরুর মাংস রাখার দাবি জানায়। এতে বলা হয় মুসলিম মেয়েদের জন্য গরুর মাংস থাকবে এবং হিন্দু মেয়েদের জন্য খাসির মাংস করা হবে। দুইটা আলাদা আলাদা করে করা হবে এবং দায়িত্বে থাকবে দুই ধর্মের মেয়েরাই যাতে কোনো ঝামেলা না হয়। কিন্তু হিন্দু ধর্মের মেয়েরা আলাদা গরুও করা হবে দেখে ফিস্ট বয়কট করে। তাদের নাকি সন্দেহ থেকে যাবে মিক্সিং-এ। যদিও ক্লিয়ার করে বলা হয়েছে দুইটা দুই মাঠে করা হবে এবং আলাদা হাড়ি পাতিল ব্যবহার করা হবে। কিন্তু তাতে তারা রাজি হয়নি। এটা নিয়ে ফেসবুকে ঝড় উঠেছে সনাতনী মেয়েরা কেনো রাজি হয়নি। তারা নিজেরাই নাকি সম্প্রীতি চায় না। বিধর্মীরা যা ইচ্ছা তাই বলছে। এটা হয়তোবা একটা প্ল্যান খাবারে গোমাংস মেশানো। ঈশ্বর ভালো জানেন। ভগবান সকলকে সুবুদ্ধি প্রদান করুক। এসব কিছুর মাঝে ঢাবির মেয়েদের এই কাজের জন্য তাদের প্রতি জানাই অনেক শ্রদ্ধা। কারণ তারা কম্প্রমাইজ করতে রাজি হয়নি।’
এরপর তিনি লিখেছেন,’উল্লেখিত প্রথম ঘটনাঃ-
চট্টগ্রামে কৃষ্ণ কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়া হিন্দু শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষিকা সায়েদা তাসলিম আইরিন ম্যাডাম বলে উঠেন
‘লাল-সুতা তো ইবলিশ শয়তানে পরে খুলে ফেলো এসব! কাল থেকে আর পরে আসবে না ।’ এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলি এবং নিশ্চিত হই।। তো সে ধারাবাহিকতায় আমরা বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণ প্র’তিবা’দ করি।
প্রতিবাদের কারনে আজ চট্টগ্রামে কৃষ্ণ কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। আজ সকালে উল্লেখিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত শিক্ষকমণ্ডলী এবং হাতের লাল সূতা খুলে আসতে বলা শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের উপস্থিতিতে বিষয়টা সমাধান করা হয়। এতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষিকা সায়েদা তাসলিমা আইরিন ম্যাডাম তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেনা। এই ঘটনার বিষয় ভিডিও স্টেটমেন্ট এবং লিখিত নেওয়া হয়েছে। যেটা শিক্ষিকার ও শিক্ষার্থীর সম্মানার্থে প্রচার করছি না। যদি এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় তবে সেসব জনসম্মুখে আনা হবে। নিম্নের বক্তব্য শিক্ষার্থীর মায়ের..
আমার মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া, কৃষ্ণকুমারী স্কুলের শিক্ষিকা সায়েদা তাসলিমা আইরিন ম্যাডামের বিষয়টি (শিক্ষার্থীর লাল সুতা পরিধান বিষয়ে) সুন্দরভাবে সমাধান হয়েছে। আশা করি, এটা নিয়ে কেউ আর অতিরঞ্জিত করবেন না প্লিজ। তিনিও মানুষ, ভুল হতেও পারে। তিনি আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার ভুল স্বীকার করেছে। আর ক্ষমা করার মতো মহৎ গুন আর কিছুই নেই। আর তিনিও একজন শিক্ষিকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবেন না। আসুন আমরা সব ধর্মকে সন্মান ও শ্রদ্ধা করতে শিখি। মানুষ হয়ে মনুষ্যত্ব, নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করি। বড় সুলতানপুর সনাতনী ফাউন্ডেশন, বোচাগঞ্জ, দিনাজপুর। সুজন চন্দ্র রায় ।
উল্লিখিত দ্বিতীয় য় ঘটনা :
কিছুদিন আগে আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে ইসলাম ধর্মের ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা নামের একটা সংগঠন তাদের ১৬ দফা দা’বি উপস্থাপন করে এবং আন্দো’লন করেন।। সেই ১৬ দফা দাবির মধ্যে একটি দাবি করা হয় “দুর্গাপূজাকে সার্বজনীন বলা যাবে না” এবং ১৬ দফা দাবি গুলোই ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ যা সনাতন ধর্মকে সরাসরি ক’টূ’ক্তি করে ধর্মীয় অ’বমান’না করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে IUBAT এর ইংরেজী বিভাগের শিক্ষিকা শ্রেষ্ঠা হালদার তার ফেসবুক স্টোরিতে ১৬ দফা দাবির সমর্থন করা ব্যাক্তিদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে কিছু লেখা শেয়ার করেন।
লেখা গুলো হলো : ‘১৬ দফা জাস্টিস করতে চান ভালো কথা, সেইম জাস্টিস নিতে পারবেন তো?… স্টার্টিং উইথ শুক্কুরবার দুপুরবেলা… যত্রতত্র..যাবে না, ঠিক আছে? দ্বিতীয় বড় ইদ এর সময়, পারবেন তো? যত্রতত্র.. যাবে না, ঠিক আছে? আর ধর্মতো সার্বজনীন না, তার মানে নবীও কি? প্রিফিক্স বিশ্ববাদ দেবো? জাস্টিস ঠিক হলো?’
এই লেখাগুলিতে না ছিলো কোন গালি, না ছিলো কোন প্রকার কটুক্তি, না ছিলো ধর্ম অবমাননার মত বিন্দুমাত্রও কোন ভাষা। সনাতন ধর্মকে কটূক্তি করা ১৬ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুরো লেখার এক লাইনে শুধুমাত্র একটা প্রশ্ন ছিলো সবখানেতো বাদ দিতে চাচ্ছো, প্রিফিক্স (বিশ্ব) কথাটা নবীর ক্ষেত্রেও কি বাদ দিতে পারবা? ব্যাস!এতদিন ধরে হিন্দু শিক্ষিকাকে টার্গেটে রাখা হা/ য়ে/ নাগুলা এটাকে তাদের ধর্ম অ’বমা’ননা বলে পোষ্ট করেছে। এরপর লেলিয়ে দেয়া কমশিক্ষিতরা না জেনে, না বুঝে লাফানো শুরু!!! শ্রেষ্ঠা হালদার তবুও ঐটুকু লেখার জন্যও বার বার ক্ষমা চেয়ে পোষ্ট করেছে। তারপরেও উগ্র ধর্মান্ধরা তাকে নিয়ে মিটিং, মিছিল শুরু করেছে। অনেকে জানেই না, শ্রেষ্ঠা কি লিখেছে, লেখাটার অর্থটা কি, কিভাবে সেটা ধর্ম অ’বমা’ননা হলো। কিন্তু এটুকু জানে একটা সুন্দরী হি’ন্দু মেয়েকে জ’ব্দ করার সুযোগ এসেছে, তাই মাঠে নামতে হবে এবং যে করেই হোক ব’হি’ষ্কার করাতে হবে।।
ঠিক তাই হলো বার বার ক্ষমা চাওয়ার পরেও তাকে ক্ষমা করা হয়নি বরং আজ শিক্ষিকা শ্রেষ্ঠা হালদারকে বহিষ্কার করা হয়।। শুধু তাই নয় এখনো দেখা যাচ্ছে শ্রেষ্ঠা হালদারের পিছনে উঠে-পড়ে লাগছে হায়নাগুলো এবং তার বিরুদ্ধে এখনো খারাপ মন্তব্য এবং হুমকি দিয়ে পোস্ট দিচ্ছে।
উপরের দুই ঘটনার মধ্যে প্রথম ঘটনাটিতে শিক্ষিকা সায়েদা তাসলিম আইরিন সরাসরি সনাতন ধর্মকে কটূক্তি করেছেন ক্ষমা চাওয়ার পর শিক্ষিকাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় অন্য দিকে দ্বিতীয় ঘটনাটিতে দুর্গাপূজা নিয়ে মুসলিমদের করা ১৬ দফা দাবি সেই দাবিগুলোতেও সনাতন ধর্মকে সরাসরি কটূক্তি করা হয় তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রশ্ন করে শিক্ষিকা শ্রেষ্ঠা হালদার স্টোরিতে কিছু লিখা লেখেন… পরে তিনি অনেকবার ক্ষমা চান কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হয়নি বরং মিথ্যা গু’জব রটিয়ে এই হিন্দু শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে।ব্যাক্তিগত মতামতঃ-
হিংস্রতার মাধ্যমে ধর্মের সৌন্দর্য কখনোই প্রাকাশিত হয় নাহ, ধর্মের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয় ক্ষমা ও শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে। উল্লেখিত প্রথম ঘটনায় ধর্মের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে উল্লেখিত দ্বিতীয় ঘটনায় ধর্মের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটে উঠেনি ফলে উল্টো অন্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ক্ষোভ ও ঘৃনার সৃষ্টি হয়েছে।
দ্বিতীয় ঘটনায় সনাতন ধর্মকে কটূক্তি করলো ১৬ দফা দাবি করা মুসলিমরা এবং তার প্রতিবাদ করার ফলেই মি’থ্যা গুজব রটিয়ে হুমকি ধা’মকি ও হিংস্রতা প্রকাশের মাধ্যমে হি’ন্দু শিক্ষিকাকে চাকরিচ্যুত করা হয় যা রীতিমতো অন্যায় করা হয়েছে এবং এর ফলে আপনারাই আপনার ধর্মের সৌন্দর্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন যার ফলে আপনাদের প্রতি যতটুকু শ্রদ্ধা ভালোবাসা ছিলো সংখ্যালঘু সনাতনীদের তা ধূলিস্যাৎ হতে চললো…. ভালোবাসলেই ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব হিংস্রতা প্রকাশের মাধ্যমে নয়। আশা করছি খুব দ্রুত শিক্ষিকা শ্রেষ্ঠা হালদারের ব’হিষ্কা’র পত্র তুলে নিয়ে তাকে আবার চাকরিতে ফিরানোর মাধ্যমে আপনাদের ধর্মের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলবেন।।