জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৬ সেপ্টেম্বর : ২০১৮ সালের আগষ্ট মাস। সুইডেনের একটি বিদ্যালয়ের বছর ১৬-র ছাত্রী গ্রেটা থুনবার্গকে দেখা গেল ‘ক্লাস’ চলাকালীন একটানা তিন সপ্তাহ ধরে প্রতদিন সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে বসে আছে। তার হাতে ছিল একটি প্লাকার্ড যাতে লেখা ছিল ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’। তার প্রতিবাদ জলবায়ুর পরিবর্তন অর্থাৎ বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে। তার দাবি ভাষণ নয় অবিলম্বে সরকারকে সদর্থক ও কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সরকারি স্তরে উদাসীনতার বিরুদ্ধে একটা বাচ্চা মেয়ের প্রাসঙ্গিক প্রতিবাদ দেখে গোটা বিশ্বে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। যে দাবি করা উচিত ছিল সমাজের তথাকথিত কেষ্টবিষ্টুদের সেটাই করল কিনা একটা বাচ্চা মেয়ে!
গ্রেটা থুনবার্গের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ও তার নেতৃত্বে জলবায়ুর সংকট মোকাবিলার জন্য বিশ্বজুড়ে শুরু হয় ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’ স্কুল ধর্মঘট। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত ১৫ ই সেপ্টেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পালিত হয় জলবায়ু সংক্রান্ত ধর্মঘট – জলবায়ুর সংকট মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে সরকারগুলির কাছে নীতি এবং পরিকল্পনা কার্যকর করার দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি ৷ এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানায় পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ৷
‘ধর্মঘট’ শব্দ বন্ধনী যুক্ত থাকলেও পরিচিত ধর্মঘট থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত টিফিনের বিরতির সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরকে মানব বন্ধন, পথসভা ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য প্রতীকী ধর্মঘটের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পালন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ আহ্বান জানায়।তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে গত শুক্রবার ১৫ সেপ্টেম্বর আউশগ্রামের এড়াল অঞ্চল উচ্চ বিদ্যালয়ে পালিত হয় ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’।
পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী টিফিনের বিরতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে ছাত্রছাত্রীদের মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিজিৎ রায় এবং পরিবেশ ও পৃথিবীকে রক্ষার শপথ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান সুশোভন কর্মকার। প্রাঞ্জল ভাষায় তারা পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরেন।
জল সংকট ও সম্পদ সংকট নিয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করে সবার প্রশংসা আদায় করে নেয় দুই শিক্ষার্থী আজমিরা খাতুন ও সোহম মন্ডল। বিশ্বের বর্তমান সমস্যা নিয়ে ওই দুই ক্ষুদের মত তাদের সমবয়সীরা যে চিন্তিত সেটা বারবার তাদের বক্তব্যে ফুটে ওঠে। কর্মসূচি পালনের সময় প্রতীকী হিসেবে বিদ্যালয়ের সমস্ত বৈদ্যুতিক পাখা ও আলো ১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবদীপবাবু বললেন,আমাদের বিশ্বাস বিশ্ব উষ্ণায়ন সহ জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই কর্মসূচি একদিন অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের গুসকরা শাখার পক্ষ থেকে অমল বাবু বললেন,এই বিশ্বকে আমরা যখন ধীরে ধীরে ভবিষ্যত প্রজন্মের বসবাসের অনুপযুক্ত করে তুলেছি তখন নিজেদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে আসে গ্রেটা থুনবার্গ। তার পথ অনুসরণ করে চলেছে আজকের প্রজন্ম। হয়তো তাদের দাবির কাছেই নতিস্বীকার করতে বাধ্য হবে দূষণ সৃষ্টিকারী শক্তি।
পৃথিবী আবার দূষণ মুক্ত হবে।।