প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ জানুয়ায়ি : স্বামী বিবেকানন্দর জন্মদিবসের দিনে তাঁর পৈত্রিক সম্পত্তি হস্তান্তর করা হল রামকৃষ্ণ মিশনকে। এই উপলক্ষে বৃহস্পতিার পূর্ব বর্ধমানের কালনার আনুখাল পঞ্চায়েতের দত্তদারিয়াটন গ্রামে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সেই অনুষ্ঠানে বর্ধমান রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দ ছাড়াও স্বামীজির আত্মীয় পরিবারের তরফে সুকান্ত ঘোষ, জেলাপরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু এবং এলাকার সমাজকর্মী তথা কালনা ২নং ব্লকতৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রণব রায় সহ বহু বিশিষ্ঠজন উপস্থিত থাকেন । এলাকার বাসিন্দাদের সাক্ষী রেখে দত্তদারিয়াটন গ্রামে থাকা বিবেকানন্দের পৈত্রিক ভিটার ৪৬ শতক জমি রামকৃষ্ণ মিশনকে হস্তান্তর করা হয় । পূণ্যদিনে এই ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে উচ্ছশিত দত্তদারিয়াটন গ্রামের বাসিন্দারা
জমি হস্তান্তরিত হওয়ার পর অজ্ঞেয়ানন্দজি বলেন ,“আজকের পূণ্য দিনে এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে । স্বামী বিবেকানন্দের পৈত্রিক এই জমিতে একটি গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি এখানে স্বনির্ভরতার পাঠও দেওয়া হবে। তাতে এলাকার যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে সমস্ত বিবেকানন্দ প্রেমী উপকৃত হবেন“।বিবেকান্দের আত্মীয় পরিবারের সদস্য সুকান্ত ঘোষ থাকেন সাওড়ার বালিতে । জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘বিবেকানন্দর পিসির সঙ্গে আমাদের পরিবারের এক পূর্বপুরুষের বিয়ে হয়েছিল। সেই সূত্রে আমাদের পরিবারের হাতে আসে এই সম্পত্তি।কিন্তু আমাদের পক্ষে এইসম্পত্তি দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছিল না। আজকের পূণ্য দিনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে বিবেকান্দের পৈত্রিক সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিতে পেরে আমরা অন্তর থেকে তৃপ্ত হয়েছি ।’ আর বিবেকান্দের ভক্ত সমাজকর্মী প্রণব রায় জানান, বিবেকানন্দর স্মৃতি বিজড়িত এই সম্পত্তি বেদখল হয়ে যাচ্ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত আনুখাল পঞ্চায়েত সীমানা প্রাচীর দিয়ে এতদিন এই সম্পত্তি রক্ষা করে। আজকের বিশেষ দিনে ষেই সম্পত্তি রামকৃষ্ণ মিশনকে হস্তান্তর করা হল।
এলাকার প্রবীণদের কথায় জানা যায়,বিবেকান্দের পূর্বপুরুষরা দত্তদারিয়াটন গ্রামে বসবাস করতেন। এখানে ৪৬ শতক জায়গার উপর ছিল স্বামীজির পূর্বপুরুষের তিনমহলা বাস্তুভিটে ছাড়াও বাড়ি লাগোয়া দত্ততালপুকুর ও আমবাগান ।বিবেকানন্দর বাবা বিশ্বনাথ দত্ত এই গ্রামেই জন্মেছিলেন বলে প্রবীণরা দাবি করেন। এই দাবির সমর্থনে তাঁরা বিবেকানন্দর ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্তর লেখা ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ গ্রন্থটির প্রসঙ্গও টানেন। এই গ্রন্থেই উল্লেখ রয়েছে ‘দত্তদারিয়াটনা’ গ্রামের কথা।গ্রন্থে লেখা আছে, প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই গ্রামে নবাবের দেওয়ান ছিলেন এক দত্ত। তাঁর কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়ে নবাব সেই দেওয়ানের নামকরণ করেন ‘দত্তদারিয়াটোনা’।ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত যে এই গ্রামে একাধিকবার এসেছিলেন, তার প্রমাণ আছে বলে
দত্তদারিয়াটন গ্রামের প্রবীণরা দাবি করেছেন।
। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, বিবেকান্দের পৈত্রিক এই সম্পত্তি রাভকৃষ্ণ মিশণের হাতে তুলে দেওয়ারর জন্য তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এদিন সেই দাবি পূরণ হওয়ায় তারা খুশি বলে জানান।।