প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ এপ্রিল : অবৈধ খাদান খুলে দামোদর নদ থেকে বালি লুঠের অভিযোগ হামেশাই উঠে থাকে।এবার উঠলো দামোদর নদের কাছ থেকে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রী করার অভিযোগ। আর সেই অভিযোগে নাম জড়িয়েছে খোদ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ও জেলাপরিষদ সদস্যার স্বামীর বিরুদ্ধে ।তা ব্যাপক শোরগোল পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েত এলাকায় রাজনৈতিক মহলে।মাটি বিক্রীয় বিষয়টি নিয়ে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা আবার তাঁদের গণস্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ও মহকুমা শাসকের(বর্ধমান দক্ষিন)দফতরে জমা দিয়েছেন।এমনকি প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারী দিয়ে রেখেছেন অভিযোগকারী ওই তৃণমূল কর্মীরা ।
প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে তৃণমূলের কর্মীরা অভিযোগে জানিয়েছেন,দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গৌতম রায় তার ৮ নম্বর বালি খাদিন থেকে বালির পরিবর্তে নদির মানার কাছ থেকে মাটি কাটাচ্ছে।প্রতিদিন ৬০-৭০ টি ট্র্যাক্টরের ট্রলিতে সেই মাটি লোড করে তিনি বিক্রী করে দিচ্ছেন।অবৈজ্ঞানিক ভাবে মাটি কাটার জন্য নদির মানা ভেঙ্গে যাচ্ছে।এর ফলে বর্ষায় ব্যাপক নদি ভাঙ্গনের আশংকা তৈরি হয়েছে বলে ওই তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে পথে নেমে আন্দোলনও শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা ।
দলুইবাজার ২ অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী পিন্টু মল্লিক ও চন্দ্রশেখর গিরি জানিয়েছেন, উপপ্রধান গৌতম রায় দীর্ঘ ৭ বছর ধরে নদি থেকে মাটি কেটে বিক্রীর কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।গত একমাস হল তিনি একেবারে নদির মানার কাছ থেকে মাটি কাটিয়ে বিক্রী করে দিচ্ছেন ।এর ফলে নদির মানা যেমন ভেঙ্গে যাচ্ছে তেমনই এলাকায় জল সংকটের পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে ।পিন্টু মল্লিক এও বলেন ,’নদি থেকে মাটি কেটে
বিক্রীর বিষয়টি নিয়ে এলাকার লোকজন পূর্বে প্রতিবাদ করেছিল। যাঁরা প্রতিবাদ করেছিল তাদের নানা ভাবে ’হ্যাকেল’ করেছিলেন উপ-প্রধান গৌতম রায়। সেই ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষজন উপ-প্রধানের এই অন্যায় কাজ নিয়ে এখন আর প্রতিবাদ করার শাহস দেখান না। তবে এই ঘটনা নিয়ে এলাকার চাষি ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁষছেন’। অপর তৃণমূল কর্মী দেবাশীষ বনিক জানান ,“উপ-প্রধানের পাশাপাশি এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সীমা হালদারের স্বামী বাবুলাল হালদারও এখন তাঁর বালির খাদান থেকে মাটি কেটে দেদার বিক্রী করছেন “। দেবাশীষ বাবু এও বলেন ,“প্রশাসনের আধিকারিকরা মাঝে মধ্যে দু’ একটি মাটির গাড়ি ধরেই দায় সারেন ।তাই তাঁরা সহ এলাকার সকল বাসিন্দারা চাইছেন , নদির মানার কাছ থেকে মাটি কেটে বিক্রীতে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নিক।প্রয়োজনে ওইসব খাদানের লাইসেন্স বাতিল করে দিক প্রশাসন ।’
যদিও এইসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন ,দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গৌতম রায়। তিনি বলেন,’বৈধ ভাবে বালি খাদানের লিজ নিয়ে আমি খাদান চালাচ্ছি। তাই আমার খাদান থেকে গাড়িতে বালি-ই লোড হয়। নদির মানার কাছ থেকে মাটি কেটে ট্র্যাক্টরে লোড করে আমি বিক্রী করছি বলে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটা উদ্দেশ্য প্রণদিত ভাবে করা হচ্ছে। আসলে ওটা ধাস বালি ।তার সঙ্গে কিছু মাটির ঢেলা হয়তো রয়ে থাকতে পারে।ওই ধাস বালি যখন ট্র্যাক্টরে লোড হয়ে যাচ্ছে তখন বলা হচ্ছে ওটা নাকি নদির মানার কাছ থেকে কেটে নেওয়া মাটি বোঝাই ট্র্যাক্টর’। এমটা করার কারণ প্রসঙ্গে গৌতম বাবু জানান ,“তাঁর সঙ্গে মেমারি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্যের বনিবনা হচ্ছে না।তাই বিধায়কের ইশারাতেই তার অনুগামীরা তাঁকে সামাজিক ভাবে অপদস্ত করার এই খেলায় নেমেছে । একই রকম মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর খুড়তুতো বোন তথা জেলাপরিষদ সদস্য সীমা হালদার ও তার স্বামী বাবুলাল হালদারকেও অপদস্ত করা হচ্ছে’।একইসঙ্গে গৌতম রায় জানিয়েদেন ,’তিনি দলুইবাজার ২ পঞ্চায়েতকে ’করে খাওয়ার জায়গা’ হতে দেন বলেই স্বার্থান্বেষীরা এইসব মিথ্যা অভিযোগ এনে তাঁর বদনাম করতে চাইছে ’।বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য যদিও উপ-প্রধানকে কঠগড়ায় তুলে কোন কন্তব্য করতে চান নি । তিনি শুধু বলেন,’প্রশাসন বিষয়টি দেখছে ।প্রশাসনের তদন্তেই আসল সত্য সমনে আসবে’।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ঋদ্ধি ব্যানার্জী
জানিয়েছেন,’অভিযোগ পত্র এখনও হাতে পাই নি । অভিযোগ পত্র হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।একই ভাবে মহকুমা শাসক (দক্ষিণ)কৃষ্ণেন্দু কুমার মণ্ডলও অভিযোগ খতিয়ে দেখার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন ।।