প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ এপ্রিল : লোকসভা ভোট চলাকালীন সময়ে সন্দেশখালি থেকে বিদেশী অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধার নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি।এই ঘটনা নিয়ে চক্রান্তের তত্ত্ব খাড়া করে শনিবার আসানসোলের কুলটির জনসভা থেকে স্বোচ্চার হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যপোধায়।কিন্তু সন্দেশখালিতে অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধার নিয়ে কার্যতই এদিন স্পিকটি নট থাকলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমান,এই দুই জেলার কোন জনসভা থেকেই অভিষেক একটি কথা বলেন নি।সন্দেশখালি থেকে অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধার নিয়ে একই দলের দুই শির্ষ নেতা নেত্রী কেন এমন দু’রকম ভূমিকা নিয়ে চলছেন সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
সন্দেশখালির ত্রাস তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ সাহজাহান পুলিশে হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন জেলে বন্দি রয়েছে । সিবিআই ও ইডি এখন তাঁর যাবতীয় অন্যায় কাজ কর্মের তদন্ত চালাচ্ছে।
পর্দা ফাঁস করে যাচ্ছে সাহজাহানের একের পর এক কৃতকর্মের।শুক্রবার সাহজাহান ঘনিষ্ট সন্দেশখালির এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে প্রচুর আগ্নেআস্ত্র ও বিস্ফোরকের সন্ধান পায় সিবিআই । তার মধ্যে বিদেশী আগ্নেআস্ত্রও রয়েছে। সেইসব বিস্ফোরক ও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধারের জন্য সিবিআই ওইদিন এনএসজি(NSG) কমান্ডো ও বিশেষ প্রযুক্তি সম্পন্ন রোবটকেও কাজে লাগায়। দ্বিতীয় দফার লোকসভা ভোট চলার দিনে এই বিস্ফোরক ও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় ফেলে দেয় রাজ্য রাজনীতিতে।যদিও অস্ত্র উদ্ধারে ঘটনা কতটা সত্য আর কতটা ষড়যন্ত্র,সেই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার বিকাল থেকেই গলা ফাটানো শুরু করেদেন তৃণমূলের মুখপাত্ররা ।
তবে এ নিয়ে শুক্রবার বিকাল থেকেই তৃণমূলকে বিঁধতে আশরে নেমে পড়ে বিজেপি নেতারা।বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ থেকে বিজেপির তারকা নেতা মিঠুন চক্রবর্তী ,উভয়েই সন্দেশখালি থেকে অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধার নিয়ে তৃণমূলকে বেঁধা শুরু করে দেন।
পূর্ব বর্ধমানের সাতগেছিয়ায় রোড শোয়ে যোগ দিয়ে মিঠুন চক্রবর্তী বলেন,“পশ্চিমবঙ্গের সব জায়গাতে এভাবেই সার্চ করা উচিৎ”। আর একই রাজনৈতিক কর্মসূচী থেকে আরও একধাপ সুর চড়িয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন,“শেখ শাহজাহান সিপিএম আমলে পিস্তুল নিয়ে ঘুরতো,আর এখন একে ৪৭ নিয়ে ঘোরে সন্দেশখালিতে এত অস্ত্রশস্ত্র বোমা ,বন্দুক লুকানো আছে ,ওকে (সাজাহানকে) ঠেঙালে সব বের হবে। ওইসব অস্ত্রশস্ত্র আগে উদ্ধার করতেই হবে ,না হলে ভোটে অনেক জীবনহানি হবে। নির্বার্চান কমিশন,
সিবিআই ,ইডি যারা তদন্ত করছে তাদের দায়িত্ব ওসব উদ্ধার করা । না হলে আবার আর একটা সাজাহান তৈরি হবে। আবার জীবনহানি হবে। সন্দেশখালিতে এনএসজি (NSG) নামাতে হওয়া নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন,ওটা উপদ্রুত এলাকা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় যেমন উদ্ধার করা হয় ,তেমনই করা উচিৎ বলে দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেন ।
বিজেপি নেতাদের এইসব মন্তব্যের বিরোধীতা করে এদিন আসানসোলে শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে হওয়া জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেশখালিতে অস্ত্র ভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধারের দাবি নিয়ে সরব হন । তিনি বলেন,“এখানে (বাংলায়) চকোলেট বোমা ফাটলেও সিবিআই, এনআইএ, এনএসজি নেমে পড়ে । যেন কোনও যুদ্ধ হচ্ছে। সব একতরফা, রাজ্য পুলিশকে জানায়নি কিছু। কোথা থেকে পাওয়া গিয়েছে, কী পাওয়া গিয়েছে, হতে পারে নিজেরাই গাড়িতে ভরে এনে দেখিয়েছেন। কোনো প্রমাণ নেই যে ওখান থেকেই উদ্ধার হয়েছে ।
একই দিনে বীরভূম ও পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে জনগর্জন সভায় যোগদিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু সন্দেশখালিতে অস্ত্রভাণ্ডারের হদিশ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে একটিও কথা বলেন না। বরং তিনি, রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান ও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপকারিকার কথা তুলে ধরে কেন্দ্রর সরকার ও বিজেপিকে তুলোধনা করেন।
জনসভা থেকে অভিষেক বলেন,প্রথম দফার ভোটে বিজেপির মাথা ভেঙ্গেছে, দ্বিতীয় দফায় ঘাড় ভেঙ্গেছে তৃতীয় দফায় কোমর ভাঙবো , চতুর্থ দফায় পা ভাঙবে ,ষষ্ট দফায় ভাঙবে হাটে । আর শেষ দফায় আমার এলাকা ডায়মণ্ডহারবার চুর্ণবিচুর্ন করে দেবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর অত্যাচারে এগিয়ে আছে। যার মধ্যে একনম্বরে উত্তরপ্রদেশ, দু’নম্বরে রাজস্থান, তিন নম্বরে মহারাষ্ট্র। একই সঙ্গে অভিষেক জামালপুরের জনসভা থেকে ঘোষণা করেন, এবারে লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রে পরিবর্তন হতে চলেছে। ইণ্ডিয়া জোটের সরকার গঠন হবে। তাতে বাংলার বড় ভূমিকা থাকবে। তখন সারা দেশের জন্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করা হবে।তাই আপনারাই ঠিক করুন ,মোদির গ্যারান্টিকে বেছে নেবেন, না কি দিদির গ্যারান্টির সাথে থাকবেন।।