জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান), ২৭ এপ্রিল : মাঝে মাঝে জীবজন্তুদের উপস্থিত বুদ্ধি মানুষকে হতবাক করে দেয় । দূর্ঘটনায় আহত হলে বা ভিন প্রজাতির প্রাণীর দ্বারা আক্রান্ত হলে পশুপাখিদের সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে এসে আকুতি করতে দেখা গেছে । পশুপাখির নির্বাক চোখের ভাষায় মানুষ বুঝতে পারে তাদের মনের কথা । আজ শনিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের একটি হনুমান এমনই এক কান্ড ঘটিয়েছে যা দেখে বিস্মিত এলাকার বাসিন্দারা ।
আসলে আজ সকাল ৮ টাগাদ সাংসারিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের বাসিন্দা ডলি মুখার্জ্জী । বাড়ির উঠানে তিনি যখন বাসনপত্র ধুচ্ছিলেন তখন তিনি অনুভব করেন যে কেউ যেন তার শাড়ির আঁচল ধরে টানছে । তিনি পিছু ফিরে দেখতেই নজরে পড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমান তার আঁচল ধরে আছে । এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন । আত্মরক্ষার তাগিদে ডলিদেবীর হাতে থাকা বালতিটি হনুমানটির দিকে ছুড়ে মারার উপক্রম করেন । আর তখনই হনুমানটি না পালিয়ে দু’হাত জোর করে তার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে সেখানেই বসে থাকে । তার নির্বাক ভাষা বুঝতে অসুবিধা হয়না ডলিদেবীর । তিনি বুঝতে পারেন যে হনুমানটি যেন তাকে বলতে চাইছে আমায় আঘাত করোনা বড্ড বিপদে পড়েছি আমি, আমার সাহায্য করো ।
ডলিদেবী বলেন,’আমি হনুমানটি দিকে ভালোভাবে নজর বোলাদেই দেখি মাথার বামদিকে একটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । তার নড়াচড়ার ক্ষমতা ছিলনা। বুঝতে পারি সে সাহায্যের জন্যই আমার কাছে এসেছে ৷ এই দেখে আমি তার মাথার ক্ষতস্থান জল দিয়ে ধুয়ে দিই । তাকে জল খাওয়াই । আলু ও কলা খেতে দিই । খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পর হনুমানটি কিছুটা সুস্থ বোধ করে ।’
জানা গেছে,বিষয়টি পরিবারের লোকজনদের ডেকে দেখান ডলিদেবী । ইতিমধ্যে সেখানে ভিড় করে প্রতিবেশীরাও । তাদের মধ্য থেকে কেউ গুসকরা বনদপ্তরে খবর দেয় । কিছু পরেই বনদপ্তরের কর্মীরা হনুমানটিকে খাঁচায় ভরে নিয়ে যায় । আপাতত হনুমানটির প্রাথমিক চিকিৎসার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে সুস্থ হলে তাকে বর্ধমানের রমনাবাগানে ছেড়ে দিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন গুসকরা বনদপ্তরের আধিকারিক সমীরণ মুখার্জ্জী ।
ডলিদেবীর ভূয়সী প্রশংসা করে সমীরণবাবু বলেন, ‘এইসব অবলা প্রাণীদের প্রতি আমরা যদি একটু সহানুভূতিশীল হই তাহলে ওই অবলা পশুগুলোর উপকার হয় ।’ সাধারণ মানুষের কাছে তার আবেদন যে বন্যপ্রাণীদের আহত অবস্থায় দেখলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর যেন বনদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ।
যদিও ওই হনুমানটি কিভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল তা জানা যায়নি । ডলি দেবী বলেন,’আমি চাই ওই অবলা প্রাণীটি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’ কথা হচ্ছিল দত্তপুকুরের পশুপ্রেমী কলেজ ছাত্রী অদিতি গায়েনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি অসুস্থ বন্যপ্রাণীর পরিচর্যার জন্য যেভাবে সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। বনদপ্তরকেও ধন্যবাদ।’প্রসঙ্গত অদিতির সৌজন্যে ইতিমধ্যে স্থানীয় এলাকায় অসংখ্য সাপ ও বন্যপ্রাণী তাদের জীবন ফিরে পেয়েছে।।