এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৮ জুন : বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি দুর্গা মন্দির রাষ্ট্রীয়ভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে ৷ হিন্দুদের মন্দিরের উপর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানায় ভারত সরকার । হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্থান রক্ষার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায় ও ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে সব বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপচারিতার জন্য ভারত প্রস্তুত। এদিকে বাংলাদেশের আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক দাবি করেছেন যে মন্দিরটি রেলের নয়,বরঞ্চ হিন্দুদের জায়গার উপরেই নির্মিত ছিল । তিনি জানান, জমিটি ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র কুমার রায়চৌধুরীর নামে এখনো সিএস রেকর্ড আছে । তাই হিন্দুদের জমিতে মন্দির নির্মানের পূর্ণ অধিকার আছে । তিনি বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের সরকারকে “মৌলবাদী-নীচ-হিজরা” দের সরকার বলে অবিহিত করেন ।
প্রকাশ্য ভাষণে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক,’এই যে রাজধানী মার্কেট এবং রাজধানী মার্কেটে মন্দিরের ওপরে যে মসজিদ আছে এটাকেও সরাতে হবে । আপনারা অতগুলো উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন, কিন্তু একটাও হিন্দু উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন ? ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভিতরে এখনো পর্যন্ত মন্দির আছে৷ ওই মন্দির ফেরত দিন। এভাবে সরকারের প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ আমরা কখনো দেখি নাই । কিন্তু এবারের সরকার নিজে থেকে এই কাজ করল । পুলিশ নিজে মন্দিরের টিনের বেড়া টেনে টেনে খুলেছে । সেনাবাহিনী উপস্থিত ছিল । সরকারি কর্মকর্তারা ছিল । তারা মন্দির ভেঙেছে প্রতিমা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ।
তারা বলতে চায় এটা অবৈধ স্থাপনা । কিন্তু পাশেই মসজিদ রয়েছে । মাদ্রাসা রয়েছে । বিএনপির অফিস রয়েছে । আরো শত শত অবৈধ স্থাপনা এই রেলওয়ের জায়গায় আছে । তাহলে এই সমস্ত অবৈধ স্থাপনা না সরিয়ে আজকে শুধুমাত্র হিন্দু মন্দির ধ্বংস কেন ?’
তিনি বলেন,’তার মানে এই সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এবং সরকারের একদম উপর মহল পর্যন্ত মৌলবাদের আখড়া হয়ে গেছে । আজ আপনারা বলছেন যে মন্দিরের জায়গাটা রেলের সম্পত্তি । এটা কোথায় রেলের হলো ? সিএস রেকর্ড নিয়ে আসুন, এটা ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র কুমার রায়চৌধুরীর জমি । এই জমি একজন হিন্দুর জমি । কিন্তু রেলওয়ে কোনরকম ক্ষতিপূরণ ছাড়া হিন্দুর সম্পত্তি কেড়ে নিয়েছে। এই হিন্দুর সম্পত্তিতে হিন্দুরা মন্দির করবে এটাই স্বাভাবিক, এটা কোন অবৈধ নয় ।’
তিনি বলেন,’শুধু তাই নয়, উত্তরবঙ্গের হিন্দু পিতা পুত্রকে মাত্র ১০ টাকার জন্য মারধোর করে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে । আমরা মনে করেছিলাম এই সরকারের সময়ে মব লিঞ্চিং হবে না। আমরা অতীতেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখেছি। কিন্তু এরকম নীচ, হিজরা টাইপের, নপুংসক টাইপের সরকার আমরা কখনো দেখিনি । আগে আমরা দেখেছি সরকারের ভয়ে দুষ্কৃতি সন্ত্রাসীরা পালাতো। আর এখন হচ্ছে দুষ্কৃতী, সন্ত্রাসীরা যা বলে সরকার সেটাই পালন করে ।’ গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন,’আপনারা যদি বলেন একটা অবৈধ উচ্ছেদ করেছেন তাহলে পাশে মদনমোহন ঠাকুরের জমিতে মুক্তিযোদ্ধার নামে যে মার্কেট করেছেন, আমরা সাত দিন সময় দিয়ে গেলাম এই অবৈধ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট রাজধানী মার্কেট সরাবেন ।’
প্রসঙ্গত,আইনজীবী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক কট্টর ইসলামি মৌলবাদী দল বিএনপির সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন । শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতন আড়াল করতে তাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল মৌলবাদীরা । গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক মৌলবাদীদের ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর আক্রমণ অস্বীকার করতেন এবং এটিকে ভারতীয় প্রচারণা বলে অভিহিত করেছিলেন। ভারতের কট্টর ইসলামি মৌলবাদী কথিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডার মহম্মদ জুবের এবং অনেক ভারতীয় বামপন্থী ভন্ডের দল তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিল যে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন হয়নি, সেই হামলার ভিডিওগুলি ভুয়া বলে তারা প্রচার চালিয়েছিল। এখন সেই গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক হিন্দুদের উপর নৃশংস হামলার কথা স্বীকার করেছেন এবং ইউনূসকে হিন্দু-বিরোধী বলেছেন ।।