এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ জুন : কলকাতার কসবা ল’কলেজে ছাত্রীকে গণধর্ষণে ৩ অভিযুক্তের নাম প্রকাশ্যে আনলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি । পাশাপাশি তিনি ইংরাজিতে লেখা ছাত্রীর ৬পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটিও নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে ভাগ করেছেন লকেট চ্যাটার্জি । বিজেপি নেত্রী লিখেছেন,”এম হলেন মনোজিৎ মিশ্র। জে হলেন জাইব আহমেদ। পি হলেন প্রমিত মুখার্জি। এই তিনজনই কসবা ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত। ছাত্রীটির নিজের অভিযোগটি পড়ুন : কলেজের রক্ষীকে গার্ড রুম ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল, যাতে তারা তাকে ভিতরে শ্লীলতাহানি করতে পারে। ছাত্রীটি রক্ষীদের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করে। তারা শোনেন নি। ইউনিয়ন রুমের গেটটি ভিতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল-যেখানে তাকে কলেজ রাজনীতিতে কোনও পদ চাইলে “টিএমসির প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে” বলা হয়েছিল। তাকে হকি স্টিক দিয়ে মারধর করা হয়, তার প্রেমিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে তার বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করা হবে।”
তিনি আরও লিখেছেন,’চতুর্থ পৃষ্ঠা পড়ুন-টিএমসির প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করতে বলা হয়েছে । পঞ্চম পৃষ্ঠা পড়ুন-রক্ষীদের ভূমিকা। ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় পড়ুন-মারধর, হুমকি এবং কীভাবে শেষ পর্যন্ত তাকে পাহারাদার ঘরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’ লকেট চ্যাটার্জির কথায়, “এটা শুধু ধর্ষণ নয়। এটি একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক বর্বরতা, যা টিএমসির ছাত্র রাজনীতির ব্যানারে করা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবশ্যই উত্তর দিতে হবে, এই দানবদের কে এত ক্ষমতা দিয়েছে? কে তাদের বলেছিল যে ধর্ষণ আনুগত্যের একটি বৈধ পরীক্ষা?”
শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’কলকাতার কসবা ল’ কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে এক তরুণীর উপর নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। এই জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত তিনজন অভিযুক্তের মধ্যে মূল মাথা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রভাবশালী নেতা মনোজিৎ মিশ্র (৩১)। পুলিশ তাকে গতকাল সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় শিশু উদ্যানের সামনে থেকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও, জাইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) নামে আরও দুই অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি অপরাধ নয়, এটি তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দ্বারা শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ। কলেজ ক্যাম্পাসের মতো পবিত্র জায়গা, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা জ্ঞান অর্জনের জন্য আসে, সেখানে এমন নৃশংসতা আমাদের সমাজের জন্য লজ্জাজনক। তৃণমূলের ছাত্র নেতারা বারবার তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভয় ও অরাজকতার পরিবেশ তৈরি করছে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’আমি দাবি জানাচ্ছি যে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক। অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের নেতারা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে পারে।’
গতকাল মন্ত্রী ফিরহাদ হামিক দাবি করেছিলেন যে মনোজিৎ মিশ্র তাদের দলের কেউ নয় । কিন্তু সেই ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেই মনোজিৎ মিশ্রর ছবি ভাইরাল হয়েছে । পাশাপাশি অভিষেক ব্যানার্জি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কুণাল ঘোষ,তৃণমূলের যুবনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, বিধায়ক অশোক দেবসহ তাবড় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে মনোজিৎকে ।
গত ২৫ জুন, কলকাতার কসবা এলাকায় দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীকে তিন অভিযুক্ত গণধর্ষণ করে (Kolkata Gangrape Case)। ঘটনার পর, ২৬ জুন সকালে, নির্যাতিতা কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করে। এরপর পুলিশ নির্যাতিতাকে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরীক্ষার রিপোর্টে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। নির্যাতিতা মেয়েটির শরীরে কামড়ের চিহ্ন এবং নখ দিয়ে আঁচড়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এছাড়াও, জোরপূর্বক ধর্ষণের বিষয়টিও প্রকাশ্যে এসেছে।২৬শে জুন ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট অনুসারে, একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে তদন্তের সময় পাওয়া প্রমাণগুলি কসবা থানায় দায়ের করা মহিলার অভিযোগে করা সমস্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কর্মকর্তা বলেন,”তার শরীরে জোর করে ধর্ষণ, কামড়ের চিহ্ন এবং নখের আঁচড়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মনোজিৎ মিশ্র নামে একজন ফৌজদারি আইনজীবী আইন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। সেই সময় অন্য দুই অভিযুক্ত কক্ষের বাইরে পাহারা দিচ্ছিলেন।প্রধান পুলিশ প্রসিকিউটর সোরিন ঘোষাল সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সকল ব্যক্তিকে জবাবদিহি করতে হবে, তারা ধর্ষণ করেছে কিনা তা নির্বিশেষে। ঘোষাল বলেন,”এই মামলায়, আরও দুজন ব্যক্তি ধর্ষণে সহায়তা করেছিলেন। অতএব, এটি একটি গণধর্ষণের ঘটনা এবং তারাও এই মামলায় অভিযুক্ত।”
এই মামলাটি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ শুরু হয়েছে। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস জানিয়েছে যে এই মামলায় ন্যায়বিচার করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী শশী পাঁজা গণধর্ষণ মামলার বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অভিযোগের ১২ ঘন্টার মধ্যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। পাঁজা আরও বলেন যে সমস্ত অভিযুক্তের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে এবং আরও তদন্ত চলছে। যদিও প্রথমে পুলিশের বিরুদ্ধে আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল।।