এইদিন ওয়েবডেস্ক,২৬ এপ্রিল : গুজরাটের পাটনের রাণী রুদাবাই তুর্কি সুলতান বেঘার বুক ছিঁড়ে তার হৃৎপিন্ড হৃদয় বের করে কর্ণাবতী শহরের মাঝখানে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন এবং তার মাথাটি শরীর থেকে আলাদা করার পর পাটন রাজ্যের মাঝখানে ঝুলিয়েছিলেন। রাণী রুদাবাই ছিলেন গুজরাটের পাটনের রাজা বীরসিং বাঘেলার (সোলাঙ্কি) স্ত্রী । রানা বীরসিং বাঘেলার রাজত্ব ছিল গুজরাটের পাটন জেলা থেকে কর্ণাবতী বা বর্তমানে আহমেদাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত । ১৪৬০-১৪৯৮ সালে রানা বীরসিং বাঘেলার শাসনকালে তাঁর রাজ্য অনেক তুর্কি আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছিল । কিন্তু তুর্কিরা সফল হয়নি । সুলতান বেঘরা ১৪৯৭ সালে পাটন রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু রানা বীর সিং ভাঘেলার সাহসিকতার সামনে, সুলতান বেঘরার ৪০,০০০-এর বেশি বাহিনী ২ ঘন্টার বেশি টিকতে পারেনি, সুলতান বেঘরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান ।
কথিত আছে যে, সুলতান বেঘরার চোখ ছিল রানী রুদাবাইয়ের উপর, কারন রানী খুব সুন্দরী ছিলেন, তিনি যুদ্ধে রানীকে জয়ী করে নিজের হারেমে রাখতে চেয়েছিলেন। বীর সিং ভাঘেলার কাছে পরাজিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর সুলতান ফের পাটন আক্রমণ করেন । এবার রাজ্যের এক মহাজন বীর সিং ভাঘেলার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে । সে সুলতান বেঘারার সাথে দেখা করে এবং রাজ্যের সমস্ত গোপন তথ্য সুলতানকে দেয় । ফলে দ্বিতীয়বারের যুদ্ধে, রানা বীর সিং ভাঘেলা সুলতানের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে পরাজিত হন যার ফলে রানা বীর সিংকে মৃত্যু বরণ করতে হয় । এদিকে রাণী রুদাবাইকে তার লালসার শিকার করার জন্য সুলতান বেঘরা ১০,০০০ এরও বেশি সেনাবাহিনী নিয়ে রানীর প্রাসাদে আক্রমণ করে ।
তার আগেই রানী রুদা বাই প্রাসাদের উপরে একটি শিবির তৈরি করে রেখেছিলেন যেখানে ২,৫০০ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল, যারা রানী রুদাবাইয়ের কাছ থেকে সংকেত পাওয়ার সাথে সাথেই আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। লালসায় অন্ধ হয়ে সুলতান বেঘার রানীর এই পরিকল্পনার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে রানীর প্রাসাদে ঢুকে যায় । এদিকে ইসলামি হানাদারকে নাগালের মধ্যে পেতেই রানী সুলতান বেঘরার বুকে একটি খঞ্জর ঢুকিয়ে বুকে চিড়ে দেন। বুকের ভিতর থেকে বের করে নেন তার হৃৎপিন্ডটি । শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন তার মাথা । এদিকে রানীর নির্দেশ পেতেই শিবির থেকে তীর বর্ষণ করতে শুরু করে রানীর যোদ্ধারা । যার ফলে সুলতান বেঘরার বাহিনীও পালাতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে ।
এরপর রানী রুদাবাই সুলতান বেঘার হৃৎপিন্ড কর্ণাবতী শহরের মাঝখানে ঝুলিয়ে দেন । এবং তার মাথাটি পাটন রাজ্যের মাঝখানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় । সেই সাথে রানী রুদাবাই হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে যদি কোনও হানাদার ভারতের কোনও হিন্দু মহিলার প্রতি খারাপ কুনজর দেয় তবে তারও একই পরিণতি হবে।
এই যুদ্ধের পর রানী রুদাবাই রাজকীয় সিংহাসন নিরাপদ হাতে তুলে দেন এবং জল সমাধি গ্রহণ করেন, যাতে কোনো তুর্কি আক্রমণকারী তাকে অপবিত্র করতে না পারে। আজও ভারতের হিন্দুরা রানি রুদাবাইয়ের নাম পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে । পূর্বপুরুষ বীরাঙ্গনারা ক্ষত্রিয় বংশের সম্মান রক্ষা করে যেভাবে নিজের ধর্ম রক্ষা করেছেন,তার নজির বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ।।