এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ জুন : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের তৃণমূল নেতা শাজাহান শেখকে নজীরবিহীন আক্রমণ করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তাকে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’, ‘মাফিয়া’ ও ‘লাল ঝান্ডা অ্যাকশন স্কোয়াড এর নাম করা হার্মাদ’ বলে অবিহিত করেছেন । সন্দেশখালি এলাকার একাধিক বিজেপি নেতা কর্মীর ‘হত্যাকারী’ বলেও শাজাহান শেখকে নিশানা করেছেন তিনি । পাশাপাশি তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা ব্যানার্জির ‘সম্পদ’ শাজাহানের মনোনয়ন পত্রে উল্লিখিত বার্ষিক আয় ও সম্পদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ।
আজ শনিবার নিজের ফেসবুক পেজে বসিরহাটের তৃণমূল নেতা শাজাহান শেখের ছবি পোস্ট করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তার মধ্যে রয়েছে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক ব্যানার্জির হাতে ফুল তুলে দেওয়া ও শাজাহানের আরাম কেদারায় বসে থাকার ছবি । সেই সঙ্গে বাংলার একটি বৈদ্যুতিক চ্যানেলে মমতা ব্যানার্জির সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপও পোস্ট করেন তিনি । ওই পোস্টের সাথে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’শাজাহান শেখ, একজন কুখ্যাত দুষ্কৃতী ও মাফিয়া। বামফ্রন্ট আমলে “লাল ঝান্ডা অ্যাকশন স্কোয়াড” এর নাম করা হার্মাদ ছিল এই শাজাহান শেখ। এর জ্বালায় বর্তমান মন্ত্রীরা যারা তৎকালীন বিরোধী নেতা থাকাকালীন কতবার ধর্না দিয়েছেন তার হিসেব নেই, সেই হার্মাদকেই বামফ্রন্ট ক্ষমতাচ্যুত হতেই মমতা ব্যানার্জী ফুলমালা দিয়ে বরণ করে নিজের দলের সম্পদ করে নেন। ধীরে ধীরে বসিরহাট মহকুমা থেকে গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটা বড়ো অংশে এই শাহজাহান শেখ নিজের আধিপত্য কায়েম করে।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের পর, বিজেপির ভোট বৃদ্ধি হওয়ার ফলে বসিরহাট জুড়ে বিজেপি কর্মীদের উপর যে নারকীয় রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল তার অন্যতম মাথা ছিল এই শাজাহান শেখ। প্রদীপ মণ্ডল, সুকান্ত মন্ডল সহ সন্দেশখালি এলাকার একাধিক নেতা কর্মীকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এই শাজাহান শেখ আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় এখনো খুললামখুল্লা ঘুরে বেড়াচ্ছে কারণ তার মাথায় রাজ্যের সবচেয়ে বড়ো প্রভাবশালীর হাত রয়েছে। আসলে মমতা ব্যানার্জী নিজের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য জেলায় জেলায় এরকম ছোটখাটো ‘কেষ্ট মণ্ডল’ তৈরি করে রেখেছেন। এদের দাপট এতটাই যে প্রশাসনের ও ক্ষমতা নেই এদের ছোঁয়ার।’

এরপর তিনি লেখেন,’এখন প্রশ্ন, আমি কেন এই ব্যক্তির সম্পর্কে এই সকল তথ্য সবার সামনে তুলে ধরছি? তার কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পত্রে এই ব্যক্তি যে তথ্য দাখিল করেছে, বলা ভালো দাখিল করেনি বা জ্ঞানত চেপে গেছে তা সর্বসমক্ষে তুলে ধরা প্রয়োজন।
আঞ্চলিক দল তোলামূলে ঢোকার পর থেকেই জেলার সমস্ত মাছের ভেড়ির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে গোটা জেলা জুড়ে নিজের রাজত্ব কায়েম করেছে এই ব্যক্তি। সন্দেশখালিতে কান পাতলেই শোনা যায় যে একাধিক ইঁট ভাটা, ফিশ প্রসেসিং প্লান্ট ও অগুনতি মাছের ভেড়ির মালিক হচ্ছে এই ব্যক্তি। সরবেড়িয়া মোড়ে ও বাজার এলাকায় একটি শপিং কমপ্লেক্স সহ কয়েকটি বিল্ডিংয়ের মালিকানা রয়েছে এনার। এছাড়াও ইনি নাকি কয়েক একর জমির মালিক।
নিজের মনোনয়ন পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন যে তার বার্ষিক আয় নাকি মাত্র ১৯ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা। সম্প্রতি কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকায় একটি বড়সড় বাড়ি তৈরি করেছেন বলে শোনা যায়। সেই ব্যক্তির মনোনয়ন পত্রে জমি এবং বাড়ির মূল্য মাত্র ৫ কোটির কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন ।’
পাশাপাশি শাসকদলের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন,’আঞ্চলিক দল তৃণমূল যথাক্রমে ১৪ই ও ১৫ই জুন মাত্র ৮ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৭৬ হাজার মনোনয়ন দাখিল করেছে, এটা যেমন মেনে নেওয়া যায় না, ঠিক তেমনই শাহজাহান শেখের উল্লেখিত সম্পদ ও আয় সংক্রান্ত বিবরণ সত্য বলে মেনে নেওয়া বড্ড কঠিন । মনোনয়ন দাখিল করার সময় তৃণমূলের বিপুল সংখ্যক প্রার্থীদের সশরীরে উপস্থিত হতে দেখা যায় নি; এর তদন্ত হওয়া যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনই শাহজাহানদের মত তোলামূলি রত্নদের দাখিল করা মনোনয়ন পত্রে উল্লেখ করা তথ্যেরও ভালো করে যাচাই করা দরকার ।’।