এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাদাখশান,১৩ জুন : আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের রাজধানী ফৈজাবাদ শহরে দুটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর মানুষ এখন চরম আতঙ্কিত । অনেকে মনে করেছেন যে মসজিদ এবং অন্যান্য এলাকায় আরও হামলা হতে পারে। ফলে এলাকার বহু মানুষ ভয়ে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতেই নামাজ পড়ছেন বলে খবর । গত মঙ্গলবার(৬ জুন ২০২৩) একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় বাদাখশান প্রদেশের তালেবান সরকারের ডেপুটি গভর্নর নিসার আহমদ আহমাদি নিহত হন এবং বৃহস্পতিবার তার ফাতিহা অনুষ্ঠানে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে বাঘলান প্রদেশের তালেবানের প্রাক্তন নিরাপত্তা কমান্ডার সফিউল্লাহ সামিম সহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে । দুটি ঘটনারই দায় স্বীকার করেছে আইএসআইএস।
ফৈজাবাদের নতুন শহরে সালাউদ্দিন আকবরীর একটি ফটোকপির দোকান আছে। তিনি বলেন যে ‘শহরে ভয়ের রাজত্ব চলছে । ব্যক্তিগতভাবে, আমি এবং আমি যাদের চিনি তারা এই শহরে যেতে পারব না। কারণ ঈশ্বর না করুন, আরেকটি বিস্ফোরণ যদি ঘটে যায় তাহলে বেঘোরে মারা যাবো ।’
বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণে তালেবানসহ অন্তত ১৩ জন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ফৈজাবাদ শহরের তৃতীয় জেলার আরেক বাসিন্দা সামিউল্লাহ মুবারিজ বলেন,’শহরে এখনও চরম ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং লোকেরা জামাতে নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারছে না এবং দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। আমি আশা করি ইসলামি আমিরাত জনগণের এই সমস্যার যত্ন নেবে ।’
গত প্রায় বিশ মাসে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, এটি চতুর্থ বিস্ফোরণ যা ফৈজাবাদ শহর এবং এর জনগণের শান্তিকে বিঘ্নিত করেছে ।গত বছরের ডিসেম্বরে, আইএসআইএস একটি বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে যাতে বাদাখশান প্রদেশের তালেবান নিরাপত্তা কমান্ডার নিহত হয় । ফয়েজ আবাদের নতুন শহরের বাসিন্দাদের মাহমুদ গফৌরি বলেন,’গত বিশ বছরে, ফৈজাবাদে এই ধরনের পরিস্থিতি ঘটেনি । এখন আমরা ভীত সন্ত্রস্ত । হয়তো কয়েক মিনিট পরে, বা আগামীকাল বা পরশু, অন্য মসজিদে বা অন্য ফাতিহা পাঠে ফের এই ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে । আমরা এনিয়ে খুব চিন্তিত ।’
বাদাখশানের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান মুয়াজউদ্দিন আহমাদির মতে, বৃহস্পতিবার ফাতিহা অনুষ্ঠানের সময় যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল তাতে ১৩ জন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয় । তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা ।
বাদাখশানে আইএসআইএস হামলার নিন্দা করার সময়, তালেবানের চিফ অফ স্টাফ ফসিহউদ্দিন ফিতরাত ইসলামি স্টেটের সন্দেহজনক কার্যকলাপ সম্পর্কে তালেবানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জানাতে বলেছেন । তবে স্থানীয় জনগণ চায় তালেবানরা তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবে প্রমাণ করুক যাতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে ।
বাদাখশান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ আমির আশা করেন যে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে । তিনি বলেন,’সব সময় আমরা বিপজ্জনক অনুভব করেছি, কারণ এক সপ্তাহের মধ্যে শহরে দুটি আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে আমরা চাই পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে আসুক। একই সঙ্গে মানুষ ভয় এবং আতঙ্ক মুক্ত অনুভব করুন ।’
আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট গ্রুপের খোরাসান প্রদেশ শাখা আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে । তালেবান কখনও বলে যে আইএসআইএস আফগানিস্তানে নেই এবং কখনও কখনও তারা বলে যে আইএসআইএস শুধুমাত্র একটি সমস্যা এবং তারা অচিরেই ধ্বংস হবে । কিন্তু পর্যবেক্ষক এবং কিছু আমেরিকান কর্মকর্তারা আইএসআইএসকে আফগানিস্তান এবং তার বাইরের জন্য একটি গুরুতর হুমকি বলে মনে করে ।।