হ্যাঁ রে গণশা, তোর ছেলেটা কোথায়?
বলি কতদিন হয়ে গেল ইস্কুল ফিস্কুল যায় না
ড্রপ আউট হয়ে গেল নাকি?
কোথায় চাঁদ, ডাক দিকি একটু কথা বলি ওর সঙ্গে!
মাষ্টারমশাই বলা থামালে গণশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল…মাষ্টার! ছেলে আমার মাঠে গেছে।
লাঙল দেবে, জল দেবে, ধান, বুনবে ধান!
সে কী রে! লেখাপড়া ছেড়ে এই সব?
মাষ্টার মশাই চমকে উঠলেন।
হ্যাঁ হ্যাঁ মাষ্টার আমার চাঁদ আর ইস্কুল যাবে না।
ওর পড়ালেখা মন্দ নয় পাড়ার সবাই বলে,
কিন্তু কী লাভ মাষ্টার? কী হবে এত পড়ালেখা শিখে?
বসবে তো গিয়ে সেই ধুলোয়।
বুক চিরে, কণ্ঠ ছিঁড়ে রক্ত বের করবে,
চিৎকার করে চাকরি চাইবে!
মান চাইবে, অধিকার পেতে চাইবে!
না না মাষ্টার, এর থেকে ওর মুখ্য থাকাই ভালো।
আপনি যান, আমার এখন মেলা কাজ…
মাষ্টার মশাইয়ের ভ্রুতে ভাঁজ।
একটা ভালো ছেলে এভাবে ড্রপ আউট হয়ে যাবে?
শান্ত সুরে বললেন, ওরে গণশা শোন!
এখন লেখাপড়া করলে অনেক লাভ
কত স্কলারশিপ, অনুদান…
চাই না অমন দান আমাদের! গণশার চোখে আগুন!
আমার ছেলে ফসল বুনবে, প্রাণ সৃষ্টি করবে।
ওই উপরের সিংহাসনে যারা বসে আছে
অর্থের পাহাড় গুনতে গুনতে যখনই তারা ক্ষুধার্ত হয়ে যাবে,
তখনই আমার চাঁদের বোনা ফসল ওদের পেট
ভরাবে,
ওরা ক্লান্তি মিটিয়ে নতুন করে দম্ভের পাহাড় বাঁধবে।
মাষ্টার মশাইয়ের কণ্ঠ ক্ষীণ।
তবে আর সত্যি পাঠাবি না ইস্কুল?
ওর আনন্দটা মাটি করে দিবি বাবা হয়ে?
ওর আনন্দ আছে মাষ্টার! গণশার গলা ধরে আসে।
আমার চাঁদ বাঁশি বাজায়।
অঘ্রানে পোয়াতি ধানের পাশে বসে ও বাঁশিতে
সুখ ভরে। আলো ভরে।
আনন্দ ঢেলে দেয় আমার বাড়ির দাওয়ায়,
যেদিন ধান কেটে ও ওর ছোট্ট কাঁধে করে
একরাশ খুশিতে ছুটে এসে বলে, বাবা!
আমি পেরেছি!
না মাষ্টার! এই ভিক্ষের ভবিষ্যত তৈরি করতে
ওকে আর ইস্কুলে পাঠাবো না আমি।
তাতে আমার ছেলে ড্রপ আউটই হোক।
মাষ্টার মশাইয়ের চোখে জল। তাঁর সামনে ভেসে ওঠে
পথে বসা অনিশ্চিত চিবুকের শিক্ষিত মুখগুলো।
বিড়বিড় করেন তিনি,
ঠিক ঠিক। এর চেয়ে ড্রপ আউট ভালো।
এর চেয়ে ড্রপ আউট ভালো…।।