এইদিন ওয়েবডেস্ক,ইসলামাবাদ,২৮ মে : ভারতের দুই প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বিভিন্ন বয়সী হিন্দু মেয়েদের অপহরণ,ধর্ষণ,জোর করে ধর্মান্তরিত করা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে । তার মধ্যে পাকিস্তানের হিন্দুদের অবস্থা সবচেয়ে করুন । পরিবারের মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে বহু পাকিস্থানি হিন্দু দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আসার জন্য তৈরি । কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভিসা । পাকিস্তান সরকার তাদের ভিসা মঞ্জুর না করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন ।
ওপি ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে,সিন্ধু প্রদেশের গাদিয়া লুহার সহায়তা কমিটির চেয়ারম্যান মানজি লুহার ওরফে কাকা বলেছেন যে তাঁর পরিচিত অন্তত চারজন হিন্দু গত ছয় মাসে আত্মহত্যা করেছেন । মৃতরা প্রত্যেকেই ভারতে পালিয়ে আসতে চেয়েছিলেন । কিন্তু তাদের ভিসা মঞ্জুর করা হয়নি । পাকিস্তানে এমন শত শত হিন্দু পরিবার রয়েছে, যারা ভারতে আসার জন্য ভিসা পাচ্ছে না এবং পাকিস্তানে তাদের পরিবার কট্টরপন্থীদের হুমকির মুখে পড়েছে । মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে, সিন্ধুর মিরপুর খাসের মোহন ভারতের জয়সলমীরে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিন বছর ধরে তিনি ভিসা পাচ্ছিলেন না। এতে তিনি হতাশ হয়ে বিষ পান করে আত্মঘাতী হন । একই কারনে পাকিস্তানের কচুরির এক হিন্দু বৃদ্ধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এদিকে পাকিস্তানি হিন্দুরা আশ্রয় প্রার্থনা করে ভারতীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছে যে বিগত ১২ বছরে হিন্দু মেয়েদের অপহরণ, গণধর্ষণ এবং ধর্মান্তরের ১৪,০০০ ঘটনা ঘটেছে । কিন্তু ভারতে এসেও নিস্তার নেই অত্যাচারিত হিন্দুদের । কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান এবং আম আদমি শাসিত পাঞ্জাবের হিন্দুদের অস্থায়ী আবাসগুলিতে বুলডোজার চালাচ্ছে সেখানকার প্রশাসন । সম্প্রতি জয়সলমের কালেক্টর টিনা ডাবির (Tina Dabri) নির্দেশে পাকিস্তানি হিন্দু উদ্বাস্তুদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে দূর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে পাকিস্তানি হিন্দুরা । দিন দুয়েক আগে একটি ৯ বছরে হিন্দু শিশুকন্যার নিকাহের ভিডিও শেয়ার করে শেফালি বৈদ্য নামে এক ইউজার্স টুইট করেছেন, ‘এটি অসুস্থ, অসুস্থতার বাইরে। পাকিস্তানি হিন্দুদের কেউ নেই! পাকিস্তানে তাদের সন্তানদের অপহরণ করা হয়,ধর্ষণ করা হয়, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়, যারা ভারতে পালিয়ে আসে তাদের মধ্যে অশোক গেহলট-এর মতো দুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী এবং ডবি টিনার মতো আইএএস অফিসার রয়েছে যারা রাজস্থানের মরুভূমির উত্তাপে তাদের বাড়িঘর মাটিতে ভেঙে ফেলা নিশ্চিত করে । তারা এবার কি করবে? কোথায় যাবে ? সিএএ মৃত এবং ভুলে গেছি । এরা কি শিশু নয় ? তাদের কি অধিকার নেই?’
আসলে শেফালি বৈদ্য যে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন সেটি টজেআইএক্স৫এ নামে এক ইউজার্স গত ২৪ মে শেয়ার করেছিলেন । ভিডিওর সাথে তিনি লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে ৯ বছর বয়সী একটি হিন্দু মেয়েকে জোরপূর্বক অপহরণ করা হয়েছিল, একটি সুফি দরগায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল এবং পাকিস্তানের সিন্ধুর জ্যাকোবাবাদের (Jacobabad) বাসিন্দা ৪৫ বছর বয়সী মুসলিম অপহরণকারী ওয়াজির হুসেনের (Wazir Hussain) সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল ।’
যদিও ওই ভিডিও প্রসঙ্গে আলি ট্রিমজি (Ali Trimzi) নামে পাকিস্তানের এক সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট লিখেছেন, ‘এটা পুরনো খবর এবং দোষী গ্রেফতার হয়েছে । আমরা সিন্ধুতে জোরপূর্বক অপহরণ এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের সিন্ধু সরকার আমাদের মেয়েদের এবং যুবতী মহিলাদের সুরক্ষার জন্য একটি হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।’
কিন্তু পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের জ্যাকোবাবাদের ওই ৯ বছরের শিশুকন্যার জীবন নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচলেও এমন অনেক নজির রয়েছে যেখানে অপহৃতা হিন্দু কিশোরীদের উদ্ধারের আগ্রহই দেখায়নি পুলিশ । রাজস্থানের জয়পুরে বসবাসকারী পেশায় দর্জি গণেশ রিকো নামে এক পাকিস্তানি হিন্দুর ৬ টি মেয়ে । তার মধ্যে তিনজনকে কট্টরপন্থী মুসলমানরা জোর করে ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছিল, আর একজনকে হত্যা করা হয়েছিল। সুযোগ পেয়ে ১০ বছর আগে তিনি পরিবার নিয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন । পাকিস্তানে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে পালিয়ে আসার এমন অসংখ্য নজির রয়েছে ।
পাকিস্তানি মৌলবাদীদের দ্বারা নৃশংসতার শিকার সেখানকার হিন্দুরা তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন । ভারতে আসতে ইচ্ছুক হিন্দু পরিবারগুলিকে ভিসা সহজ লভ্য করার আহ্বান জানিয়েছে । সেই সঙ্গে ভারতে থাকা পরিবারগুলোকে পাকিস্তানে ফেরত না পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে ।।