মমতা ব্যানার্জির অনাচারের জন্য  রাজ্যে এত দুর্যোগ ! ফিরহাদ হাকিমের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সভায় মন্তব্য করলেন শুভেন্দু অধিকারী  

এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ অক্টোবর : এবারের দুর্গাপূজার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার দলের নেতানেত্রীর বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে । বিশেষ করে মমতা ব্যানার্জি পিতৃপক্ষে পূজোর উদ্বোধন করা থেকে শুরু করে বাম হাতে দেবী প্রতিমার দিকে ফুল নিক্ষেপ এবং সর্বশেষ সতীপীঠ কালীঘাটের দেবী কালীর দিকে উচ্ছিষ্ট প্রসাদ নিক্ষেপের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করছে বিজেপি । মমতার এই প্রচার “অনাচার”-এর কারনেই রাজ্যে একের পর দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।  

শনিবার রাতে দার্জিলিংয়ে প্রবল বর্ষণে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে । এখনো পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । যদিও শুভেন্দুর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সংখ্যা ২১ জন। এর আগে দুর্গোৎসবের আবহে প্রবল বৃষ্টিপাতে বানভাসি কলকাতায় ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে দায়ি করে তার অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ রবিবার বিকেলে ডোরিনা ক্রসিংয়ে প্রতিবাদ সভা করে বিজেপি । সেই সভায় শুভেন্দুর বক্তব্যে উঠে আসে মমতার “অনাচারের” প্রসঙ্গ । 

তিনি বলেন,’এই নির্লজ্জ মমতা দেবী দুর্গাকে অপমান করেছেন, শক্তিকে অপমান করেছেন৷ মা দেখিয়ে দিয়েছেন দেবী শক্তির ক্ষমতা কত বড়৷ আমরা সংস্কার মানি । আমরা মাকে মানি । গতকাল একটা বিসর্জন হয়েছে যাদের থিম ছিল অপারেশন সিঁদুর । একদিকে আধ্যাত্মিকতা অন্যদিকে জাতীয়তাবাদ দুটো মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে । যেখানে ভারত সরকারের মন্ত্রী ডক্টর সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির জনপ্রিয় রাজ্য সভাপতি শ্রমিক ভট্টাচার্য এবং আমাকে দেখলেন । কি দেখলেন ? মা যাচ্ছে আগে আর সন্তানরা যাচ্ছে পিছনে । আর এখনো রেড রোডে চলছে । ময়ূরপঙ্খী সিংহাসনে বসে আছেন উনি । নাম তার খালা মমতা । কলকাতা পুলিশ বা মমতা পুলিশ দড়ি দিয়ে টেনে টেনে মূর্তিগুলো নিয়ে যাচ্ছে । ওনার দম্ভ আর অহংকার এত মাকে হাঁটাচ্ছেন ওনার সামনে দিয়ে । কালকে দেখেছেন মা হেঁটেছেন আগে ছেলেরা হেঁটেছে পিছনে । আর আজকে উনি বসে আছেন আর মা যাচ্ছেন । ডান দিকে রেখেছেন নচিকেতাকে বাম দিকে রেখেছেন ইন্দ্রনীলকে । আর ইন্দ্রনীল গাইছে “আমার যাওয়ার সময় হল…” । মমতা বলছে, “দাও বিদায়” । আর নচিকেতা বলছে, “ডাইনে চল, বাঁয়ে চল, সামনে চল, পিছনে চল, চল চল চল… ” । এই হচ্ছে মমতা ।’  

তিনি বলেন,’পিতৃপক্ষে পুজোর উদ্বোধন । বৃষ্টি হলো মাথায় কাপড় দিতে হলো কিন্তু কানটা বের করে রেখে দিতে হলো । বিশেষ ভোট ব্যাংকের জন্য কানে বৃষ্টি পড়ুক । তার নাম কি ?  হিজাব ৷ হিজাব পরে পিতৃপক্ষের উদ্বোধন । এত অনাচার !’ শুভেন্দু বলেন, 

কালীঘাটে গেছে অমিত শাহজিকে নকল করে৷ আরে অমিত শাহজিকে নকল করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আইরন ম্যান । শক্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । আগে কাশ্মীর এখন রাত লাদাখ সোজা করে দিয়েছে । ইনি মোদীজির সেকেন্ড ম্যান । মমতা ব্যানার্জি কালীঘাটে গেলেন । চরণামৃত না প্রসাদ আমি জানিনা৷ দিলেন মুখে-মাথায় এবং তারপর মাকে দিয়ে দিল… “ধর” । এর আগে শামসুদ্দিনের দোকান থেকে গজা প্যারা খাইয়েছে । আমি বলিনি মুর্শিদাবাদের ভাই শামসুদ্দিন বলেছে । বলছে, আমার দোকানের সব খাবারই হালাল খাবার । আর এখন কালীঘাটের মাকে উচ্ছিষ্ট দিচ্ছে৷ দেখুন কাল রাত্রেই মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি উত্তরবঙ্গে । এই অনাচার মা সহ্য করবেন না….।’ তিনি আকাশে কালো মেঘ দেখিয়ে বলেন,’ইতিমধ্যে বৃষ্টি এসে গেছে । খালা গেল বলে । ২৬শে জনতার গর্জন, মমতার বিসর্জন । তাড়াতেই হবে । আমি করেছি আমার গ্রামে আপনাদেরও করতে হবে৷ আমি আবার করে দেখাবো ভবানীপুরে৷ নন্দীগ্রামের থেকে বেশি ভোটে হারাবো৷’ 

কলকাতায় বানভাসি ও মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারের ব্যার্থতাকে দায়ি করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’মমতা ব্যানার্জির প্রশাসনের বদান্যতায়, কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মার যৌথ ভেঞ্চারে আমরা আমাদের  সহনাগরিকদের হারিয়েছি । কলকাতার অপদার্থ মেয়র,যিনি ৫০ শতাংশ রাজ্যবাসীকে উর্দুতে কথা বলাতে চান, যিনি নিজ ধর্মের মানুষদের সৌভাগ্যশীল অন্য ধর্মের মানুষদেরকে দুর্ভাগ্যশীল বলেন । এমন বহু গুণের গুণান্বিত, যিনি কখনোই জলকে লিটার দিয়ে মাপেন না । কখনো মণে মাপেন কখনো মিটারে মাপেন । এমন বহু গুণের গুণান্বিত ছাপ্পা মারা কাউন্সিলর আর বন্দর থেকে তোষণের ভোট নিয়ে জেতা মমতার মন্ত্রী ফেরাজ হাকিমের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজকের এই মিছিল  ।’ 

শুভেন্দুর অভিযোগ,’আইএমডি-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমস্ত বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল যে কলকাতাতে কমলা সতর্কতা রয়েছে। তাই কলকাতা পুলিশ, এসডিআরএফ, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর, পুরসভা এবং রাজ্য সরকারকে সতর্ক করার পরেও খালা মমতার নেতৃত্বে চাচা হাকিম সাথে আর একটা গুন্ডা ঘোঁট পাকানো মনোজ ভার্মা যিনি সারাদিন চটি চাঁটেন, আর এখন খালা মমতার পাশে রেড রোডে বসে আছে,তারা ঘুমাচ্ছিলেন এবং কলকাতাকে ভাসিয়ে দিলেন । কলকাতা নাকি লন্ডন হওয়ার কথা । লন্ডন তো হয়ে গেছে সাথে সাথে ভেনিসও বানিয়ে দিলেন । কলকাতা ভেনিসে পরিণত হয়ে গেল ।’ 

তিনি মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ তুলে বলেছেন,’কলকাতার ৯৯ ভাগ নালা নাকি খুলে দিয়েছেন খালা মমতা৷ যিনি নিজে কালীঘাটের নালাকে বুজিয়ে সামনে টালি আর পিছনে প্রাসাদ বানিয়ে বসে আছেন । তিনি নাকি ৯৯% নিকাশি খনন করে দিয়েছেন ।’ 

উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ ও প্রাণহানি প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’আরো মনটা বিষন্ন কারণ গতকাল মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে অপরূপ সুন্দরী উত্তরবঙ্গের পাহাড় এবং তরাই ডুয়ার্স এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। কালিম্পং এবং কার্সিয়াংয়ের সঙ্গে গোটা রাজ্য এবং গোটা দেশ এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে । দার্জিলিং এর স্থানীয় সংসদ রাজু বিস্তার দেওয়া ইনফরমেশন অনুযায়ী এখনো পর্যন্ত ২১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স । তাই আমরা অত্যন্ত বেদনা নিয়ে এই কর্মসূচি করছি ।’

পাশাপাশি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সমালোচনা করে লিখেছেন,”উত্তরবঙ্গ কাল যাবো, আজ কার্নিভাল” !!! কার্নিভাল নাকি বাংলার ঐতিহ্য ! তা দশমীর চার দিন পর সরকারি অনুদান আর প্রশাসনিক চোখ রাঙানির জেরে প্রতিমা নিরঞ্জন আটকে রেখে, মিছিল করিয়ে ঘাটে যাওয়া কবে থেকে বাংলার ঐতিহ্য হয়ে গেলো? 

আর মুখ্যমন্ত্রী চটজলদি উত্তরবঙ্গ যেতে আগ্রহী নন কেন, সেখানে ডিভিসি নামক বলির পাঁঠা নেই দোষারোপ করার জন্যে? নাকি ওখানে গিয়েও চিন, ভূটান, নেপালের “বহিরাগত জল” এর তত্ত্ব দেবেন? 

ওনার একটাই উদ্দেশ্য কি করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো যায়, কখনো ডিভিসি, কখনো সিইএসসি, কখনো উত্তর প্রদেশ-বিহার… 

এই মুখ্যমন্ত্রী কোন বিষয় কে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত তা বোঝেন না, কলকাতা ভেসে যাওয়া ও কিছু নিরীহ মানুষ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার পরেও উনি পুজো উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, এখন কার্নিভাল নিয়ে ব্যস্ত। এক বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়, যখন বলেছিলেন “উৎসবে ফিরুন” ! তবেই তো লোকে আনন্দে মেতে থাকবে, ন্যায্য প্রশ্ন করবে না।

আজকে শুভেন্দু অধিকারীর সভায় উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক ডঃ রজত তা । তিনি সেই চিকিৎসক যিনি মমতা ব্যানার্জির লন্ডন ভ্রমণের সময় আরজি করের অভয়ার ধর্ষণ খুনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করে তাকে অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়েছেন । শুভেন্দু অধিকারী তার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন,’ডঃ রজত তা আজ এখানে আছেন । চিনি লন্ডনে মমতাকে অভয়া নিয়ে প্রশ্ন করেন নাকানিচুবানি খাইয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বলছেন, এইরকম একটা মিছিল হরিশ চ্যাটার্জি এবং হরিশ মুখার্জীতে কবে হবে ? আমি পুষ্প বৃষ্টি করবো ।’।