এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৩ জুন : মালদা জেলার কালিয়াচক থানার অন্তর্গত জালালপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রায় পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় এবারে মেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ । রাজ্য বিজেপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করছেন, স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা মিলে ভাড়াটে গুন্ডা ও ভূমি মাফিয়াদের কাজে লাগিয়ে দেবোত্তর জমি লুট করে জোর করে মেলা বন্ধ করার বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র করছে । গতকাল তিনি এনিয়ে এক্স-এ মালদা সদরের এসডিও ও মেলা কমিটির আবেদপত্র পোস্ট করে লিখেছেন,’৬২৯ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক জালালপুর রথযাত্রা এবং মালদার ঠিক বাইরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মিলন মেলাকে ঘিরে এক বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাড়াটে গুন্ডা, ভূমি মাফিয়া এবং স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা মিলে এই দেবোত্তর জমি লুট করে জোর করে মেলা বন্ধ করে দিচ্ছে। তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ এক শক্তিশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তিনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে বিএলআরও অফিসকে অবৈধভাবে সরকারি এলআর রেকর্ডে ধর্মীয় জমির নাম নিজের নামে রূপান্তর করেছেন বলে জানা গেছে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এই ঘটনা আবারও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে,তৃণমূল কংগ্রেস কর্মকর্তা কি এখন গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বর দমন করা থেকে পবিত্র ভূমি দখল এবং হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংস করার দিকে এগিয়ে গেছেন? আমরা রাজ্য প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে অবিলম্বে, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। যদি অবিলম্বে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে আমরা এই লজ্জাজনক কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব। আমরা বাংলার আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য ধ্বংস করার চেষ্টাকারী প্রতিটি ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করব এবং পরাজিত করব।’
বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাঠানো মেলা কমিটির আবেদনপত্রে লেখা হয়েছে,’বিনীত নিবেদন এই যে, কালিয়াচক থানার অন্তর্গত জালালপুর গ্রামে শতাধিক বর্ষ প্রাচীন কাল হইতে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী জালালপুর ঐতিহাসিক রথযাত্রা উপলক্ষে অনুষ্ঠান বিধিসম্মত ভাবে ৯ (নয়) দিন ধরিয়া রথযাত্রা মেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দেবোত্তর শ্রীশ্রী গোপীজন বল্লভ ঠাকুর বিগ্রহের নিজস্ব জায়গার উপর। উক্ত রথযাত্রা ও মেলা পরিচালনার জন্য যথাযথ আইন সম্মত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার আয়োজন হইয়া থাকে।’
আরও লেখা হয়েছে,’উক্ত রথযাত্রা মেলা উপলক্ষে শ্রীশ্রী গোপীজন বল্লভ বিগ্রহ ইং-২৭/০৬/২০২৫ শুক্রবার হইতে ০৫/০৭/২০২৫ শনিবার পর্যন্ত ৯ (নয়) দিন মেলা প্রাঙ্গন মন্দিরে স্থাপন করত: নিত্যপূজা ও ভোগ আরতী এবং সংকীর্তনের মাধ্যমে উল্টো রথযাত্রা উৎসব সমাপান্তে শ্রীশ্রী গোপীজন বল্লভ বিগ্রহ স্থায়ী মন্দিরে স্থাপিত হবে। এমতবস্থায় মূল মন্দির হইতে বিগ্রহ আনয়ন রথযাত্রা বিহিত উৎসবে মূল মন্দিরে বিগ্রহ পুনস্থাপন ও ৯(নয়) দিন ব্যাপি মেলা পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের নিরাপত্তার বিশেষ অনুমতির প্রযোজন। অতএব মহাশয়ের নিকট বিশেষ পার্থনা উপরিক্ত রথযাত্রা ও মেলা উৎসবটি সর্বাঙ্গিন সার্থক ও সুষ্ঠ ভাবে পরিচালনার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করিয়া বাধিত করিবেন।’
যদিও মালদা(সদর) এসডিও-এর অফিস থেকে ইংলিশ বাজার ওসিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপরে উল্লিখিত বিষয়ের প্রেক্ষিতে, আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কালিয়াচক-১ দেব-এর অন্তর্গত জালালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে গৌতম মণ্ডল (যোগাযোগ নং ৯৪৩৪২০৬৯০৬) ২৬.০৫.২০২৫ তারিখে সরসরি মুখ্যমন্ত্রী পোর্টালের মাধ্যমে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি তার অভিযোগে জানিয়েছেন যে জালালপুর গ্রামের নারায়ণপুর পাড়ায় জালালপুর রথযাত্রার সাথে সম্পর্কিত ৬২৯ বছরের পুরনো একটি মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন যে মেলাটি শেষবার ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং শঙ্কর প্রসাদ চৌধুরী, প্রকাশ চন্দ্র চৌধুরী এবং অভিষেক চৌধুরী মেলার সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে তা বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, কিন্তু এখনও এর সমাধান হয়নি। তিনি বিশ্বাস করেন যে প্রায় ১৫,০০০ মানুষ এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই বিষয়ে নিম্নস্বাক্ষরকারীকে অনুরোধ করা হচ্ছে যে, আপনার বিভাগের নির্দেশিকা অনুসারে ৭ দিনের মধ্যে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করতে হবে এবং তদনুসারে একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রতিবেদন নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হবে।’
মৃণাল নামে এক ব্যক্তি সুকান্ত মজুমদারের কমেন্ট সেকশনে লিখেছেন,’আমি এই জালালপুরের এক জন বাসিন্দা। এই প্লট প্রথমে দেবোত্তর নামে ছিলো পরে এটা নিজের নামে রেকর্ড করে বর্তমান এখন প্লট করে বিক্রি করা হচ্ছে এবং এই জমির বর্তমান মূল্য প্রায় ৪০ কোটির বেশি হবে।’
মেলা বন্ধের প্রতিবাদ করেছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জিও । তিনি এনিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন,’৬২৯ বর্ষ আদি রথের মেলা বন্ধ করে দিলো রাজ্য সরকার। এখনো কি সবাই ভাববেন আপনার পাড়ার হিন্দু উৎসব বন্ধ হবার অপেক্ষায় থাকবেন? হিন্দুত্বের ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুছে দিতে চায় এই সরকার।’।