প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ অক্টোবর : দুর্গোৎসবেই মায়ের সঙ্গে এসেছিলেন মর্তলোকে। দেবীপক্ষের কটা দিন মর্তে মা উমার ভক্তদের সঙ্গে কাটিয়ে মায়ের সঙ্গেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন সেই কৈলাশে।তবে এবার আর মায়ের সঙ্গে নয়,এবার একাকি তিনি কোজাগরী পূর্ণীমা তথিতে মর্তলোকে আবির্ভূতা হচ্ছেন।তিনি হচ্ছেন ধন ও ঐশ্বর্য্যের দেবী লক্ষ্মী।আর্থিক মন্দা থেকে পরিত্রান লাভে আজও তিনি’ই বাঙালি গৃহস্থ কুলের একমাত্র ভরসা।আর সেই কারণেই লক্ষ্মীদের প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তিতে বাঙালির মনে কোন ভাটা পড়েনি।তাই ধন ও ঐশ্বর্য লাভ কামনায় বুধবার কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন ধনদেবী বাঙালির ঘরে ঘরে পূজিত হবেন।
সাইনিং ইন্ডিয়া গড়তে নোট বন্দির পর লাগু হয় জিএসটি।এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে ব্যবসায়ীদের এখন হাঁসফাঁস অবস্থা। সে সবকে পরোয়া না করে দেশের পুঁজির বড় রকম ভান্ডার হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বীজয় ভিত্তাল মালিয়া ,নীরব মোদি,নেহু চোকশি প্রমুখ ধনকুবেররা।দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রাতাদের স্নেহধন্য এই সব ধনকুবেরদের কীর্তিকলাপে ’জিডিপি রেট’ তলানিতে পৌঁছেচে। এত কিছুর পরেও বাঙালি ভক্তকুলের বিশ্বাস, লক্ষ্মীদেবীর কৃপা লাভ ছাড়া পরিবার কিংবা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক হাল পুনরুজ্জীবিত হওয়া সম্ভব নয় ।এমন বিশ্বাসে দৌলতেই বাংলায় লক্ষ্মী দেবীর গ্ল্যামার ও জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে রয়েছে। দেবীর কৃপা লাভের প্রত্যাশায় ভরকরে বাংলা এখন ভাসছে লক্ষ্মী উন্মাদনায় ।
ভক্তকুলে আর্থিক মন্দার প্রভাব এতটাই যে কৈলাশে পৌছাতে না পৌছাতেই অর্থিক দুর্দশায় জর্জরিত অগুনিত ভক্ত অনুরাগীর আমন্ত্রন বর্তায় ভরেযায় লক্ষ্মীদেবীর দপ্তর।আমন্ত্রন প্রত্যাখানেরও উপায় নেই । ভক্তদের স্পেশাল আমন্ত্রন বলে কথা । বাঙালির ঘরে ঘরে নিজের জনপ্রিয়তা অটুট রাখতে তাই মর্তলোকে আবারও আসছেন লক্ষ্মী দেবীকে । স্পেশাল আমন্ত্রন সফরে তাঁর সঙ্গে মর্তলোকে আসার চান্স মিলেছে শুধু মাত্র এক জনেরই । তিনি হলেন দেবীর বিশ্বস্ত সচীব পেঁচা । দেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন সেই বিষয়টি সচীব মহাশয় ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত করে ফেলেছেন ।
মর্তলোকের বাঙালি পরিবার গুলিতে লক্ষ্মীদেবীর জনপ্রিয়তা দেখে গনেশ , কার্তিক ও সরস্বতীর একটু ঈর্শা হয় ঠিকই,কিন্তু কিছুতো আর করার নেই । দেশে পুঁজির ভাণ্ডার কমতে শুরু হলে যা হয় তাই হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভ্রান্ত অর্থনীতিকে আঁকড়েই রাষ্ট্রের আর্থিক সংস্কারের পথ বাছা হয়েছে।আর সে কারনে বাজার অর্থনীতি যত তলানিতে পৌছাচ্ছে লক্ষ্মী দেবীর জনপ্রীয়তা ও গ্ল্যামার ততই হুহু করে বাড়ছে। রাষ্ট্র নায়কদের প্রতি ভরসা হারিয়ে বঙ্গবাসীর ভরসা এখন লক্ষ্মীদেবীর উপরেই বেড়েছে । আর্থিক মন্দা থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশায় বাঙালি এখন দেবী লক্ষ্মীর কৃপা লাভের উপরেই ভরসা রেখে চলেছেন । লক্ষ্মীদেবীর মর্তলোকে আসার সফর সূচী ইতিমধ্যেই চুড়ান্ত হয়েছে। দেবলোক সূত্রে খবর পঞ্জিকার বিষুদ্ধ মতের সময় সারণী মেনে বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ২৩মিনিট ৪৫ সেকেন্ড নাগাদ লক্ষ্মীদেবী মর্তলোকে অবতরণ করবেন । কোজাগরি লক্ষী পূর্ণিমা তিথির পূর্ণ সময় কাটিয়ে পরদিন বৈকাল ৫টা ১৭ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে ধনদেবী ফের কৈলাশে প্রস্থান করবেন। এই সফর সূচী যাতে দুর্গোৎসবের মতোই নর্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় তার তদারকি লক্ষ্মীদেবীর সচীব পেঁচা নিজেই করছেন ।
রাষ্ট্রের অর্থিক মন্দা দশা যাই থাক না কেন লক্ষ্মীদেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন তা অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে । দেবীর সচীব এখন শুধু নজর রাখছেন কোন ভক্তের বাড়িতে পুজো আয়োজনের জৌলুশ কতটা সেদিকে। সূত্রের খবর,পুজো আয়োজনের জৌলুশ যাচাই করে বিশেষ বিশেষ ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করতে পারেন দেবী । যদিও ধনদেবী কোন কোন ভক্তের আতিথেওতা গ্রহন করবেন তা জনপ্রিয়তা বজায় রাখার স্বার্থে দেবীর দপ্তর কর্তৃক একান্ত ভাবেই গোপন রাখা হয়েছে । ভক্তরা অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না । সেরা আতিথেওতা দিয়ে লক্ষ্মীদেবীর কৃপা লাভের মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঙালি গৃহস্থ কুল ।
কালো টাকা উদ্ধারের আশ্বাস জুগিয়ে নোট বন্দির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাষ্ট্র নায়করা । গোটা দেশবাসী এরজন্য চরম হয়রানির শিকার হলেও নোট বন্দির সিদ্ধান্ত পরবর্তি সময়ে “ফ্লপ শো” এর পরিচিতি পেয়েছে । নোট বন্দির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে রাষ্ট্র নায়কদের লাগু করা জিএসটির ধাক্কায় আরো বেসামাল হয়ে পড়ে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরা। এখন ’গুডস এ্যন্ড সার্ভিস ট্যাক্স’ ছাড়া ব্যবসা বানিজ্য যেমন করা যায় না তেমনই লক্ষ্মীদেবীর আরাধনার উপকরণও কেনা যায় না। এমন সব নানা কারণে সাধ থাকলেও যাঁক জমক পূর্ণ ভাবে বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো আয়োজনের সাধ অনেকেরই অপূর্ণ রয়ে থাকছে ।পুজো আয়োজনে ভক্তরা কোন ঘাটতি রাখতে না চাইলেও বাধ সাধছে মানি ঘাটতি । এই পরিস্থিতে দেবীর কৃপালাভ কিভাবে সম্ভব হবে সেই দুশ্চিন্তাই পিছু তাড়াকরে বেড়াচ্ছে ভক্তদের ।
দশকর্মা থেকে শুরু করে প্রতিমা , ফল, ফুল ও আনাজপাতি সবেরই বাজার দর অগ্নি মূল্য । পকেট গড়ের মাঠের চেহারা নেওয়ায় লক্ষ্মী ভক্তদের অনেক মেনুই কাটছাঁট করতে হচ্ছে । গ্রাম থেকে শহর ,দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সর্বত্রই ।বাঙালি পরিবার গুলিতে লক্ষ্মী পুজো আয়োজনের জৌলুশ যত কমছে ততই ক্ষোভ বাড়ছে বাজার দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে থাকা সরকার বাহাদুরের ওপর। আরজি কর কাণ্ড নিয়ে এমনিতেই ক্ষোভ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে রয়েছে গোটা বাংলা। তার উপর লক্ষ্মী আরাধনায় কোপ পড়ার কারণে ক্ষোভ বিক্ষোভ যে পর্যায়ে পৌছেছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।এই ক্ষোভ গণতন্রের আগামী সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে ইভিয়েমে আছড়ে পড়লে পরিণতি যে খুবই খারাপ হবে তা ভালই বুঝতে পারছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল।ভক্তদের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে,ধনদেবীর কৃপালাভ থেকে তাঁরা যত বঞ্চিত হবেন তাতই তাঁদের রোষ আছড়ে পড়বে আগামী ভোটের ইভিএমে।।