প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ সেপ্টেম্বর : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ’শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর নাম।শ্রীচৈতন্য দেবের আবির্ভাবের কিছু কাল আগে পূর্ব বর্ধমানের কুলীনগ্রামের ভূমি পুত্র মালাধর বসু এই কাব্য রচনা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে স্বয়ং শ্রীচৈতন্য দেব কুলীনগ্রামে এসে তিন দিন থাকেন বলে উল্লিখিত রয়েছে চৈতন্যমঙ্গল কাব্যে।তাই কুলীনগ্রাম শ্রীচৈতন্য দেবের পদধূলি ধন্য বৈষ্ণব তীর্থস্থান হিসাবেই দেশ জুড়ে পরিচিতি পেয়ে আসছে।এহেন কুলীনগ্রাম এবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে চলেছে।রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রবিবার কুলীনগ্রামের বিভিন্ন মন্দির ও বৈষ্ণব মঠ ঘুরে দেখার পর সেই কথাই ঘোষণা করলেন। মন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি কুলীনগ্রামের বাসিন্দারা ।
কুলীনগ্রাম হল পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আবুজহাটী-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একটি প্রাচীন জনপদ । পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এই গ্রামেই মালাধর বসু জন্মগ্রহণ করেন। তার পৌত্র রমানন্দ বসু ছিলেন চৈতন্যদের খুবই অন্তরঙ্গ। বসু পরিবারের আমন্ত্রণেই চৈতন্যদেব কুলীনগ্রামে এসে ছিলেন।বসু পরিবারের কৃষ্ণ ভক্তি দেখে খুশি হয়ে চৈতন্যদেব পুরীর রথের জন্য কুলীনগ্রাম রেশমের পট্টডোরী পাঠানোর দায়িত্ব বসু পরিবারকে দেন। এই পট্টডোরী অর্থাৎ কাছি দিয়ে পুরির রথের সঙ্গে বাঁধা হত জগন্নাথ ,বলরাম ও সুভদ্রাকে । এমনকি ওই পট্টডোরী মালার মত করে এই তিন দেবতার গলায় পরানো হত। এখন যদিও এই প্রাথা থমকে রয়েছে। তবে বহু কাল পূর্বে বসু পরিবার কুলীন গ্রামে যে রথরাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন সেই রথযাত্রা উৎসব পালনে কোন ছেদ পড়েনি ।
শুধু জগন্নাথ দেবের পুজো পাঠই নয় ,কুলীন গ্রামে আরো আনেক দেব দেবীর মূর্তি ও মন্দির রয়েছে ।
তার মধ্যে অন্যতম হল রাজা বল্লাল সেনের আমলে তৈরি গোপাল মন্দির। গোলাল মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বড় জলাশয় যা গোপাল দিঘী নামে পরিচিত । এই দিঘীতে স্নান করা গঙ্গা স্নানের সমতুল্য বলে ভক্তরা মনে করেন।এ ছাড়াও
কুলীন গ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে শিবানী,মদনগোপাল,
গোপেশ্বর,ভুবনেশ্বরী,রঘুনাথ,কৃষ্ণরায়,গোপীনাথ, কালুরায় এবং হরিদাসের আরাধ্য দেবতা গৌরাঙ্গর
পুজোপাঠ হয়। প্রতিবছর রথযাত্রা এবং জন্মাষ্টমী তিথিতে ভক্তের ঢল নামে কুলীন গ্রামে। ওই দিন গুলিতে এই রাজ্য ছাড়াও দেশ ও বিদেশের বহু ভক্ত কুলীন গ্রামে সমবেত হন।
বৈষ্ণব তীর্থ স্থান কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা দেওয়া হোক এই দাবি অনেকদিন ধরেই করে অসছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের পর্যটন দফতরও উৎসাহ দেখানোয় এদিন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কুলীন গ্রামে পৌছান।
জামালপুরের প্রাক্তন বাম বিধায়ক সমর হাজরা ,
বর্তমান বিধায়ক অলক মাজি ,পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খাঁন কে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রী কুলীন গ্রামের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন । পরে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন,“কুলীন গ্রাম বড় বৈষ্ণব তীর্থ ক্ষেত্র।কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা দেওয়ার বিধানসভায় অনেকবার তুলেছেন জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সমর হাজরা এবং
,বর্তমান বিদায়ক অলক মাঝি।এই সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে ।
আমাদের মুখ্যমন্ত্রী গ্রামীণ টুরিজম সেন্টার গড়তে চান। সরকারে আর্থিক সংকট থাকলেও কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলার যাবতীর কাজের প্ল্যান এস্টিমেট হয়ে গেছে। পর্জটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন , আমি এবং অলক মাঝি বিষয়টি দেখছি । রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে খুব শিঘ্র কুলীন গ্রাম জায়গা করে নিতে চলেছে বলে মন্তী স্বপন দেবনাথের কথায় ইঙ্গিত মিলেছে। সমর হাজরা এবং অলক মাঝি দু’জনেই আশাবাদি এবার নিশ্চয় কুলীন গ্রাম রাজ্যের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে মান্যতা পাবে।।