প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ ফেব্রুয়ারী : হাইস্কুল গুলিতে শিক্ষক নিয়োগ এখন বাঁও জলে। তার উপর আদালতের নির্দেশে প্রায় প্রতিদিনই চাকরি যাচ্ছে অনৈতিক উপায়ে শিক্ষকের চাকরি পাওয়াদের।এমন এক পরিস্থিতিতে মহা ফাঁপরে পড়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের নিরোলের কনকলতা জুনিয়র গার্লস স্কুল।কোন উপায় আর খুঁজে পাওয়া না জাওয়ায় ভাড়া করা দুই শিক্ষক কে সঙ্গে নিয়ে এই স্কুলের তিন শতাধীক ছাত্রীকে পাঠ দেবার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুই স্থায়ী শিক্ষিকা।স্থায়ী শিক্ষিকা ছাড়া এইভাবে আর কতদিন স্কুলে পাঠদান জারি রাখা সম্ভব হবে তা কারুরই জানা নেই।শিক্ষকের আকালে স্কুলে এমন অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।
নিরোল কনকলতা জুনিয়র গার্লস স্কুলটি ২০১০ সালে সরকারী অনুমোদন পায়।পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পঠন পাঠন হয় এই স্কুলে। প্রথম দিকে স্কুল ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় কয়েক বছর যেতে না যেতেই।দেখা দেয় শিক্ষিকার অভাব।তার কারণে স্কুলের ৩১৭ জন ছাত্রীকে পাঠ দানেও তৈরি হয়েছে সমস্যা।শিক্ষিকার অভাবে ছাত্রীদের সঠিক ভাবে পাঠদানও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।যেটা সবথেকে অবাক করার বিষয় তা হল নতুন সেশন শুরু হওয়ার পর থেকে আজ অবধি এই স্কুলে অংকের ক্লাস হয়নি।বাকি সাবজেক্টের ক্লাসও নামকাওয়াস্তে হয় । এক ক্লাসে পড়া দিয়ে দুই শিক্ষিকাকে অন্য ক্লাস সামলাতে ছুটতে হয়।এই ভাবে সব ক্লাসে নিয়মিত পাঠদানও সম্ভব হয় না দুই শিক্ষিকার।যে ক্লাস ফাঁক যায় সেই ক্লাসের ছাত্রীরা হাসি, মজা করেই কাটায়।কোন কোন দিন টিফিনের পর মিডডে মিল খাইয়েই ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে দিতে হয়।তাতেও দুর্দশার শেষ নেই।কারণ এই স্কুলের শিক্ষিকাদের কেই বাজাতে হয় স্কুল শুরু ও ছুটির ঘন্টা।
স্কুলের এমন দুর্দশা কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দুই স্থায়ী শিক্ষিকা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাজলক্ষী মন্ডল জানান,”স্কুলে শিক্ষিকার অভাবের কথা তাঁরা জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরে বহুবার জানিয়েছেন।সুরাহার জন্য গ্রামবাসী ও অভিভাবকরাও নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
কিন্তু সুরাহার কোন ব্যবস্থা আজ অবধি হয় নি। তাই স্কুলে পঠনপাঠন জারি রাখার স্বার্থে এলাকার দুই শিক্ষিত যুবক যুবতীকে সামান্য মাসোহারা দিয়ে ছাত্রীদের পাঠদানের জন্য রাখতে হয়েছে। অবিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বৈঠক করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবুও শিক্ষক শিক্ষিকার অভাবে তিন শতাধীক ছাত্রীকে যে সঠিক ভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না তাও স্বীকার করে নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা“। টাকার বিনিময়ে স্কুলে পড়াতে আসার কথা যুবক জয়ন্ত গুই স্বীকারও করে নিয়েছেন । এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে স্কুলে শিক্ষিকা নিয়োগ না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন অভিভাবকরা।তাঁদের অভিযোগ,এই স্কুলে শিক্ষার নামে ছেলে খেলা চলছে ।
কেতুগ্রাম চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শক কুন্তল দত্ত অবশ্য আাশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকা অনুমোদন হয়েছে।তবে এখনো তাদের নিয়োগ হয়নি’। যদিও টাকার বিনিময়ে স্কুলের পড়ুয়াদের পড়ানোর জন্য কাউকে রাখার ব্যাপারে তিনি আপত্তির কথা শুনিয়েছেন।মহকুমা শাসক অর্চনা পি ওয়াংখেড়ে
স্কুলটির দুর্দশার কথা শুনে বলেন,আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানাব।একই সঙ্গে তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে স্কুলে শিক্ষক রাখার বিষয়টি নিয়েও আমি খোঁজ নেব ।।