জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দক্ষিণেশ্বর,০৯ জানুয়ারী :সাধারণ মানুষের কাছে সেভাবে পরিচিত না হলেও নিজের সৃষ্টির মাধ্যমে কাব্য-রসিক মানুষের হৃদয়ে নিজের আসন স্হায়ী করে নিয়েছেন বিশিষ্ট রস-সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিন্ন স্বাদের প্রায় ঊনিশটি কাব্য রচনা করলেও সাধারণ মানুষের কাছে আজও তার সৃষ্টিকে সেভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়নি। কলকাতার একটি পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এবার সেই মানুষটিকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হলো একটি স্মারক সংখ্যা ।
দক্ষিণেশ্বরের ‘আয়াস’ পত্রিকা গোষ্ঠীর উদ্যোগে এবং একঝাঁক গুণী ব্যক্তির উপস্থিতিতে গত রবিবার আড়িয়াদহ এ্যাসোসিয়েশন লাইব্রেরী এণ্ড লিটারারী ক্লাবের সভাকক্ষে আয়োজিত এক ঘরোয়া অথচ মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয় বিশিষ্ট রস-সাহিত্যিক ‘কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়’ স্মারক সংখ্যা । বাহ্যিক আড়ম্বর নয় অনুষ্ঠানের পরিবেশটি ছিল ভাবগম্ভীর ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ।
প্রসঙ্গত ‘আয়াস’ পত্রিকা এবছর ত্রয়োদশ বর্ষে পদার্পণ করল। সাহিত্যকে ভালবেসে সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও পত্রিকা গোষ্ঠী প্রতিবছর ভিন্ন স্বাদের দুটি করে পত্রিকা প্রকাশ করে। এই বছরও দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে – একটি নাটক সংখ্যা এবং অপরটি রস-সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যা।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার আমতা রামসদয় কলেজের গবেষক অধ্যাপক ড. অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি সাহিত্যিক কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে গবেষণায় লিপ্ত আছেন। ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক তথা আর এক যশস্বী ব্যক্তি ড. প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ও যুগ্ম সম্পাদিকা দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন কামারহাটি পৌরসভার পৌরপ্রধান গোপাল সাহা।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক তথা সাহিত্যানুরাগী সুকান্ত বসু। এছাড়া অন্যান্যরাও সঙ্গীত পরিবেশন করেন। পাঠ করেন কবিতা।
স্বাগত ভাষণে অনুষ্ঠান আয়োজনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন ড. গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন,’দুঃখের বিষয় হলো কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত সাহিত্যিকদের আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ উনার সৃষ্টির সান্নিধ্যে যারা এসেছেন তারা প্রত্যেকেই সমৃদ্ধ হয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে ইনার কৃতিত্ব তুলে ধরা।’ ‘কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়’ গবেষক ডঃ বন্দ্যোপাধ্যায় তার দীর্ঘ বক্তৃতায় রস-সাহিত্যিকের অসাধারণ সৃষ্টি এবং কোথায় তার কাব্যরস লুকিয়ে আছে সেটা উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন। তার সরস বক্তব্যের গুণে শ্রোতারা রস-সাহিত্যিকের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করে ফেলেছিলেন।
এর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সূচনা গাঙ্গুলী উপস্থিত অতিথিদের গলায় উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেন। ভিন্ন স্বাদের ‘আয়াস’ পত্রিকাটি হলো দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের নিজস্ব পত্রিকা। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে বরাবরই এই পত্রিকা নিজস্বতা বজায় রেখে চলেছে। ড. প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে সাহিত্যের সেবা করে আসছেন। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছেন দর্পণা দেবী। বহুবার স্কুল, কলেজের পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্য পেয়েছে কন্যা সূচনা গঙ্গোপাধ্যায়। নিজেদের পারিবারিক পত্রিকা সহ অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত তার জীবনমুখী কবিতা কাব্যরসিক পাঠকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই রকম একটা সাহিত্যিক পরিবারের পত্রিকা সহজেই পাঠকদের কৌতূহলী করে তোলে।
দর্পণা দেবী বললেন, ‘আমাদের সামর্থ্য কম। তার মধ্যেও সুপরিচিত কবি ও সাহিত্যিকদের সঙ্গে সঙ্গে অতীতের বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। যদিও প্রতিটি অনুষ্ঠান আমরা বাড়িতেই করে থাকি। এই প্রথমবারের জন্য অন্যত্র করলাম এবং সাড়াও পেলাম। সহযোগিতার জন্য তিনি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।’।