প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ মার্চ : ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে ইন্ডিয়ান অয়েলের পাইপ লাইন বসানোর কাজ বন্ধ করেদিল চাষিরা । আন্দোলনকারী ওই চাষিরা সকলেই পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের কৈয়র পঞ্চায়েতের গোপালপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের আন্দোলনের জেরে এখন থমকে রয়েছে বাঁকুড়া-মসাগ্রাম রেল পথের কৈয়র স্টেশন লাগোয়া লেবেল ক্রশিং এলাকায় মাটির নিচ দিয়ে তেলের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ ।বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কর্তারা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করার পরেও উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের রাস্তা বের না হওয়ায় বিপাকে পড়ে গিয়েছেন ইন্ডিয়াল অয়েল কর্তৃপক্ষ ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ কয়েক বছর আগে মাটির তলা দিয়ে তেলের পাইপলাইন নিয়ে যাবার কাজ শুরু করে । সেই পাইপ মারফত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বারাবনি থেকে পৌছাবে হলদিয়ায় । সেই কাজের জন্য ২০২০ সালে খণ্ডঘোষ ব্লকের কৈয়ড় ও গোপালপুর মৌজায় জমি চিহ্নিত করে ইণ্ডিয়াল অয়েল কর্তৃপক্ষ । তারপর চাষের জমি দিয়ে তেলের পাইপ লাইন বসানোর কাজও শুরু হয়। তখনকার মত সব কিছু ঠিকঠাক চললেও পরবর্তী সময়ে ক্ষতিপূরণ নিয়ে চাষিদের সঙ্গে ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষের বিরোধ বাধে । যে বিরোধ এখন চরমে পৌচেছে । জমির মালিকদের আন্দোলনের জেরে এখন বাঁকুড়া-মসাগ্রাম রেল পথের কৈয়র স্টেশন লাগোয়া লেবেল ক্রশিং এলাকায় মাটির নিচে দিয়ে তেলের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ থমকে রয়েছে ।
আন্দোলনকারী গোপলপুর এলাকার চাষি
এমদাদুল হক মণ্ডল জানান,তেলের পাইপ লাইন চাষের জমির মাটি খুঁড়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ কৈয়ড় ও গোপালপুর মৌজায় শুরু হয় । কিন্তু ওই কাজের জন্য সঠিক কি ক্ষতিপূরণ চাষিদের প্রাপ্য সেই সন্মন্ধে চাষিদের পরিস্কার কিছু জানায় না ইণ্ডিয়াল অয়েল কর্তৃপক্ষ বা তাঁদের অধীনস্ত লোকজন । কোন ক্ষতিপূরণ বা নগদ টাকা প্রদান কোন কিছু না করেই কাজ শুরু হয় যায়। গভীর ভাবে মাটি খুঁড়ে গোটা চাষ জমি লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে তেলের পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়ার কাজ হলেও জমি চাষের উপযুক্ত করে দেওয়ার কোন ব্যবস্থাও তেল সংস্থার লোকজন করে দেয় না । এই কারণে ওইসব জমিতে চাষও মার খায় । এলাকার অপর চাষি লাল্টু শেখ জানান,এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় ফেজে পাইপ লাইন
বসানোর কাজ শুরু করলে শুধুমাত্র একটি ফসলের জন্য যতসামান্য ক্ষতিপূণের ব্যবস্থা করে । একই ভাবে এই কাজের পরেও ইণ্ডায়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ কোন চাষির চাষ জমি-ই পুনরায় চাষের উপযুক্ত করে দেয় না । তার জন্য আবারও চাষিরা তাঁদের জমিতে চাষ করতে না পারায় চাষ মার খায় । লাল্টু শেখ বলেন ,চাষের উপর নির্ভর করেই কৈয়র , গোপালপুর সহ আশপাশ এলাকার মানুষ জনের জীবন- জীবিকা নির্বাহ হয় । ইন্ডিয়ান
অয়েল কর্তৃপক্ষের এমন কাজ কারবারে জন্য এলাকার বহু চাষি এখন মহা সংকটে পড়ে গিয়েছেন।এই পরিস্থিতিতে সঠিক ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষিরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে।ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত এলাকায় তেলের পাইপ লাইন বসানোর কাজ করতে দিতেও নারাজ চাষিরা ।
৷ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে চাষিরা এমন অনড় মনোভাব দেখিয়ে চলায় সম্প্রতি ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ ও চাষিদের নিয়ে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয় । সেই বৈঠকে ইণ্ডিয়ান অয়েলের (আই ও সি এল) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সুব্রত দুবে ,খণ্ডঘোষ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক ও পুলিশ কর্তারাও উপস্থিত থাকেন । কিন্তু সঠিক ক্ষতিপূরণ মূল্য বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো না যাওযায় অচলাবস্থা কাটে না ।
এই বিষয়ে সুব্রত দুবে যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলতে চান নি । তিনি শুধু বলেন,’বিষয়টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ লেবেল দেখছে ।’ তবে ব্লকপ্রশাসনের এক আধিকারিক ও খণ্ডঘোষের জেলাপরিষদ সদস্য অপার্থিব ইসলাম উদ্ভুত সমস্যার জন্য ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষকেই
দায়ী করেছেন । তিনি বলেন,’চাষিরা ন্যায্য
ক্ষতিপূরণের যে দাবি তুলেছেন সেটা যুক্তি সঙ্গত । ক্ষতিপূরণ মূল্য নির্ধারণ নিয়ে ইণ্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ ভুলভাল কাজ করেছে । তার জন্যই সঠিক ক্ষতিপূরণ মূল্য আসলে তা নিয়ে গ্রামবাসিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে । এই দ্বন্দ্ব দ্রুত মেটানো না গেলে জুলাই ২০২২ সালের মধ্যে তেলের পাইপ লাইন আদৌ হলদিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন বলে অপার্থিব ইসলাম মন্তব্য করেছেন।।