এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ এপ্রিল : বামফ্রন্টের ‘মহান কমরেড’ জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার সময়ে পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক নৃশংস গনহত্যার ঘটনা ঘটনা ঘটেছে । কিন্তু ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতুতে আনন্দমার্গীর হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৬ জন সন্ন্যাসী ও একজন সন্ন্যাসিনীর হত্যাকান্ডের ঘটনায় সব নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গেছে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী । ৪২ বছর আগে ওই হত্যাকাণ্ডের কাহিনী শুনলে আজও শিহরণ জাগে । তৎকালীন প্রশাসনিক ভবন রাইটার্স বিল্ডিং থেকে মাত্র দেড় বা দুই কিলোমিটার দূরে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে সিপিএমের তথাকথিত ‘মহান কমরেড’ তথা মৃত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বিরুদ্ধে ওঠে মদত দেওয়ার অভিযোগ । শুধু তাইই নয়,জ্যোতি বসুর ইসারাতেই যাবতীয় প্রমান লোপাট করে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ । যেকারণে আজও ওই সমস্ত সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীদের নির্মম হত্যার ন্যায় বিচার হয়নি ।
ঠিক কি ঘটেছিল সেদিন?
১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল, শিক্ষাবিষয়ক সেমিনারে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্বে থাকা আনন্দমার্গী সাধু সন্ন্যাসীর দল কলকাতার তিলজলা আনন্দমার্গ কেন্দ্রীয় আশ্রমের অভিমুখে রওনা দিয়েছেন । ঘড়ির কাঁটায় তখন ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা নাগাদ সন্ন্যাসীদের একটি গাড়ি তখন বিজন সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছিল । তাঁরা কল্পনাও করতে পারেননি যে কি নৃসংশ পরিনতর মুখোমুখি হতে চলেছেন তারা । তখন সেতুতেই ওৎ পেতে ছিল সিপিএমের কয়েকশো নরপশু হার্মাদদের একটা দল । তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল রড,শাবল, ছোরাসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র । সন্ন্যাসীদের গাড়িটি নাগালের মধ্যে পেতেই ঘিরে ধরে সিপিএমের হার্মাদরা । গাড়ি দাঁড় করিয়ে আনন্দমার্গী সাধু-সন্ন্যাসীদের একে একে গাড়ি থেকে টেনে বের করে হাতে থাকা রড দিয়ে পিটিয়ে,ছোরা দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলে সেখানে অ্যাসিড ঢেলে, শরীর কেটে পেট্রল ঢেলে আধমরা অবস্থায় জীবন্ত জ্বালিয়ে বিজন সেতুর উপর থেকে নিচে ফেলে দেয় জ্যোতি বসুর হিংস্র হার্মাদ বাহিনী । “বাঁচাও বাঁচাও” আর্তচিৎকার করেন সন্ন্যাসীরা । কিন্তু বন্য জন্তুর থেকে নৃশংস সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীর ভয়ে কেউ তাদের বাঁচাতে ছুটে যেতে সাহস পায়নি । জনবহুল বিজন সেতুর উপর ওই নারকীয় হত্যাকাণ্ড হয়েছিল সর্ব সমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে । গোটা বিশ্বের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সরব হয় । সিপিএমের এই প্রকার নৃশংসতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা দেশ ।
ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন সরকার তদন্ত কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয় । কিন্তু ‘দেব কমিশন’ নামে গঠিত কমিশনের রিপোর্ট আজও প্রকাশ্যে আসেনি । আনন্দমার্গী সন্ন্যাসীদের নরসংহারের ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসা মমতা ব্যানার্জিও পরে নীরবতা পালন করেন । ‘লালা কমিশনের’ র রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে দোষীদের শাস্তির তার সেই প্রতিশ্রুতি আজও অধরা থেকে গেছে ।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিহত সন্ন্যাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল কলকাতার বিজন সেতুতে, আনন্দমার্গের সর্বত্যাগী নিষ্পাপ সনাতনী হিন্দু ধর্মাবলম্বী ১৬ জন সন্ন্যাসী ও ১ জন সন্ন্যাসিনীর নৃশংস হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের স্মরণ করি। ওঁ শান্তি ।’।