এইদিন ওয়েবডেস্ক,নন্দীগ্রাম(পূর্ব মেদিনীপুর),১০ মার্চ : রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে যে কেন্দ্রের দিকে নজর গোটা দেশের সেই নন্দীগ্রামের তৃণমূলের প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনয়ন জমা দিলেন বুধবার । মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে এদিন দুপুরে প্রথমে তিনি রোয়াপাড়া শিবমন্দিরে পূজো দেন । পূজো শেষে হেলিকপ্টারে হলদিয়া পৌঁছন । তারপর মঞ্জুশ্রী মোড় থেকে প্রায় এক কিমি রাস্তা র্যালি করে মহকুমাশাসকের দফতরের গিয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর মনোনয়নে চার জন প্রস্তাবক আছেন । চিফ ইলেকশন এজেন্ট হয়েছেন শেখ সুফিয়ান । কিছু কাজ থাকায় এদিন তিনি নন্দীগ্রামেই থাকবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ।
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘সিঙ্গুর অথবা নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য মাঝে মাঝে আমার মন চাইতো । এর আগে যখন নন্দীগ্রামে মিটিংয়ে এসেছিলাম তখন এখানে কোনও এমএলএ ছিল না । কারন যিনি এমএলএ ছিলেন তিনি তার আগে পদত্যাগ করেছিলেন । তাই মানুষকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কি এখান থেকে প্রতিযোগিতা করব? তখন মানুষ আমায় ইচ্ছাকে পূর্ণ সমর্থন জানায় । তাই আমি নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এদিকে একই দিনে নন্দীগ্রাম বাজারে কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী । এই উপলক্ষে এদিন নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে নন্দীগ্রাম বাজার পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করা । পদযাত্রার পুরোভাগে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । নতুন কার্যালয়ে আসার পর দলীয় নেতা ও কর্মীরা তাঁকে ফুলের মালা পড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান ।
কার্যালয়ের উদ্বোধনে এসে শুভেন্দু বলেন, ‘আমি কখনও রাজনীতির ময়দানে হিন্দু-মুসলিম- শিখ- খ্রীষ্টান করি না । আজকে যারা বিভাজনের রাজনীতি করতে করছে তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনী বৈতরণী পার করা । নন্দীগ্রামের উন্নয়নে আমার সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়েও আমি চেষ্টা করেছি ।’
এরপর তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেন, ‘নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর মালিক মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি সব সময় নন্দীগ্রামকে হিংসা করেছেন । কারন নন্দীগ্রামকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে শুভেন্দু প্রচার পেয়ে যাবে । উনি খুব বড় বড় কথা বলে গেছেন । সিঙ্গুর না হলে নাকি নন্দীগ্রাম হত না । কিন্তু সিঙ্গুর থেকে তো পালিয়ে গিয়েছিলেন আপনি । পুলিশ ভোর বেলায় আপনাকে সেকেন্ড ব্রিজে নামিয়ে দিয়েছিল ।’
এরপর গত মঙ্গলবারের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে টেনে তাঁকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘বলছেন, ‘এই বলো বলো দাঁড়াবো কি না । বলছে হ্যাঁ দাঁড়াতে হবে । আমরা তো বলছি আপনাকে দাঁড়াতে হবেই । হেরে বাড়ি যেতেই হবে।’
এদিন শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন,’৬ টি শহীদ পরিবারের ছেলেমেয়ে এসএসসির গ্রুপ ডি পরীক্ষায় পাশ করেছিল। কিন্তু তাঁদের চাকরি দেয়নি । আমি প্রমান দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবো ।’
তিনি বলেন, ‘ নন্দীগ্রামের ৩০ হাজার লোক বাইরে থাকেন শুধু মাত্র ওই ভদ্রমহিলার জন্য । গুজরাট, মহারাষ্ট্র,মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বিজেপি শাসিত রাজ্যে ওরা কাজ করেন । যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে কাজ করে । কর্ণাটকে কাজ করে । আবার উনি বলছেন চাকরি দেবেন । ওসব ঢপের চপ কেউ খাবে না ।’ এদিন শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে ।
এদিন একদিকে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচি অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নমিনেশন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দিনভর সরগরম ছিল নন্দীগ্রাম ।।