শ্রীভগবানুবাচ
ইদং তু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে।
জ্ঞানং বিজ্ঞানসহিতং যজ্জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ ।। ১।।
পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে অর্জুন! তুমি নির্মৎসর বলে তোমাকে আমি পরম বিজ্ঞান সমন্বিত সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ করছি। সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হযে তুমি দুঃখময় সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হও।
রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং পবিত্রমিদমুত্তমম্।
প্রত্যক্ষাবগমং ধর্মং সুসুখং কর্তুমব্যয়ম্ ।। ২ ।।
এই জ্ঞান সমস্ত বিদ্যার রাজা, সমস্ত গুহ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর, অতি পবিত্র এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা আত্ম-উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।
অশ্রদ্দধানাঃ পুরুষা ধর্মস্যাস্য পরন্তপ।
অপ্রাপ্য মাং নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবন্ধনি ।। ৩।।
হে পরন্তপ! এই ভগবদ্ভক্তিতে যাদের শ্রদ্ধা উদিত হয়নি, তারা আমাকে লাভ করতে পারে না। তাই, তারা এই জড় জগতে জন্ম-মৃত্যুর পথে ফিরে আসে।
ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা।
মৎস্থানি সর্বভূতানি ন চাহং তেষ্ববস্থিতঃ ।। ৪ ।।
অব্যক্তরূপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত, কিন্তু আমি তাতে অবস্থিত নই।
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্।
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমাত্মা ভূতভাবনঃ ।। ৫ ।।
যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট, তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়। আমার যোগেশ্বর্য দর্শন কর! যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং যদিও আমি সর্বব্যাপ্ত, তবুও আমি এই জড় সৃষ্টির অন্তর্গত নই, কেন না আমি নিজেই সমস্ত সৃষ্টির উৎস।
যথাকাশস্থিতো নিত্যং বায়ু সর্বত্রগো মহান্।
তথা সর্বাণি ভূতানি মৎস্থানীত্যুপধারয় ।। ৬।।
অবগত হও যে, মহান বায়ু যেমন সর্বত্র বিচরণশীল হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা আকাশে অবস্থান করে, তেমনই সমস্ত সৃষ্ট জীব আমাতে অবস্থান করে।
সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতিং যান্তি মামিকাম্ব।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্ ।। ৭ ।।
হে কৌন্তেয়! কল্পান্তে সমস্ত জড় সৃষ্টি আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।
প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ।
ভূতগ্রামমিমং কৃৎস্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ।। ৮ ।।
এই জগৎ আমারই প্রকৃতির অধীন। তা প্রকৃতির বশে অবশ হয়ে আমার ইচ্ছার দ্বারা পুনঃ পুনঃ সৃষ্ট হয় এবং আমারই ইচ্ছায় অন্তকালে বিনষ্ট হয়।
ন চ মাং তানি কর্মাণি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয়। উদাসীনবদাসীনমসক্তং তেষু কর্মসু ।। ৯।।
হে ধনঞ্জয়! সেই সমস্ত কর্ম আমাকে আবদ্ধ করতে পারে না। আমি সেই সমস্ত কর্মে অনাসক্ত ও উদাসীনের ন্যায় অবস্থিত থাকি।
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্।
হেতুনানেন কৌন্তেয় জগদ বিপরিবর্ততে ।। ১০।।
হে কৌন্তেয়! আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে। প্রকৃতির নিয়মে এই জগৎ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।
অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্ ।। ১১ ।।
আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই, তখন মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে। তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।
★ শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ
রচিত ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ’ গ্রন্থের মূল সংস্কৃত শ্লোক ও অনুবাদ ৷