এইদিন ওয়েবডেস্ক,রতুয়া(মালদা),১৫ আগস্ট :গঙ্গার পর এবার বিপদসীমা পেরোল ফুলহর নদী । আপার ক্যাচমেন্টে ভারি বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রবল গতিতে বাড়ছে নদীর জলস্তর । শুক্রবার ফুলহর তার বিপদসীমা ২৭.৪৩ মিটার উচ্চতা পেরিয়েছে । শনিবার বেলা ১২টায় নদীর জলস্তর ছিল ২৭.৬৫ মিটার । বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উঁচুতে। ইতিমধ্যে নদীর জল রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। কয়েক’শ হেক্টর জমি এখন জলের তলায় । জল ঢুকে গিয়েছে অসংরক্ষিত এলাকার বাড়িঘরেও। অন্তত ২০-২২টি গ্রামে এখন নদীর জল বইছে । প্রাণ বাঁচাতে মানুষ নদীবাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন । প্লাবিত সড়ক পথে নৌকায় যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ ।
এদিকে এলাকায় জল ঢোকার খবর পেয়েই রবিবার বিলাইমারি ও মহানন্দটোলার বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু । তার আগে ও পরে বিডিওর সঙ্গে দেখা করে মানুষের সমস্যা সমাধানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানান । এদিকে এখনও পর্যন্ত পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা বিধায়কের দেখা না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা । এনিয়ে কটাক্ষ করেছেন খগেনবাবুও ।
ফুলহরের চরম বিপদসীমা ২৮.৩৫ মিটার। সেই জায়গায় বেশি দেরি নেই । নদী যেভাবে ফুঁসছে তাতে দু’চারদিনের মধ্যেই ফুলহর সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যাবে বলে মনে করছেন গ্রামবাসীরা ।
রামায়ণপুর গ্রামের আশু মণ্ডলের বাড়িতে এখন নদীর জল । পরিবার ও গোরু-বাছুর নিয়ে তিনি এখন ফুলহরের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘নদীর জল ক্রমেই বেড়েই চলেছে। বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরোটাই এখন জলের নীচে । গোরু-বাছুর নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি । খোলা আকাশের নীচেই থাকতে হচ্ছে । সরকারি কোনও সাহায্য এখনও পাইনি । এমনকি একটা ত্রিপলও জোটেনি ।’
গঙ্গারামটোলার অনিল মণ্ডলও সরকারি সাহায্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই নদী ফুঁসছিল । কিন্তু চার-পাঁচ দিন ধরে প্রবল গতিতে জল বাড়তে শুরু করেছে । গঙ্গারামটোলার সঙ্গে রামায়ণপুর, ধর্মুটোলা, সবজিটোলা, শ্রীকান্তটোলা, জঞ্জালিটোলা, রুহিমারি সহ অন্তত ২০-২২টি গ্রাম এখন জলের তলায় । কিন্তু এখনও প্রশাসনের কেউ এলাকায় আসেনি । কোনও সাহায্যও পাইনি।’
বন্যা দুর্গত সুভাষ কর্মকার বলেন, ‘গ্রামের দু’পাশে দুই নদী । গঙ্গা আর ফুলহর । নদীর জলে গ্রামবাসীদের সব কিছু ভেসে গিয়েছে । হাতে গোনা কয়েকটি বাড়ি এখনও বেঁচে রয়েছে। কিন্তু যে গতিতে নদীর জল বাড়ছে তাতে এই বাড়িগুলিতেও যে কোনও সময় জল ঢুকে যাবে। গ্রামের ভিতর এখন জল । অথচ পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা বিধায়কের দেখা নেই। তাঁরা শুধু ভোটের সময় আসেন, ভোট নিয়ে চলে যান। আর তাঁদের দেখা মেলে না। আজ সাংসদ এখানে এসেছেন। তাঁকে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছি।’ একই বক্তব্য স্থানীয় বাসিন্দা রাসুরানি দাসেরও ।
এদিন বিপন্ন মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করে সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘গ্রামবাসীরা অভিযোগ জানালেন, গঙ্গা ও ফুলহরের জল এলাকায় ঢুকে পড়লেও স্থানীয় বিধায়ক কিংবা পঞ্চায়েতের কেউ এলাকায় আসেননি। মানুষের সমস্যার কথা জানার চেষ্টাও করেননি। তাঁরা হয়তো বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতীকে ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু ভোটে জেতার পর তাঁরা কোনও দলের নয়, মানুষের প্রতিনিধি। প্রতিটি মানুষের সেবা করা তাঁদের দায়িত্ব। গ্রামে জল ঢোকার খবর পেয়ে আমি এখানে ছুটে এসেছি। এখানে আসার আগে বিডিওর সঙ্গে দেখা করে এসেছি। বিডিও জানিয়েছেন, মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য তিনি ৪০০টি করে মোট ৮০০ ত্রিপল দিয়েছেন। পাঁচ টন করে মোট ১০ টন চাল দিয়েছেন । তবে এখনও পর্যন্ত কোথাও শিবিরের ব্যবস্থা করতে হয়নি বলে জানিয়েছেন বিডিও। বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে কোনও সমস্যায় না পড়ে তার জন্য তাঁকে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে এখানে এসেছি। ফেরার সময় ফের তাঁর সঙ্গে দেখা করব ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘রতুয়া মহানন্দটোলা বিলাইমারি সহ হরিশ্চন্দ্রপুর, কালিয়াচক, মানিকচকের ভাঙ্গন পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রী রাজেন্দ্র সিংহ সেখাওয়াতকে চিঠি করেছি ২৬ শে জুলাই । গত ৪ অগাস্ট তিনি তার উত্তরে জানিয়েছেন ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে রাজ্য সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত এলাকা ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হবে না । এই বিষয়ে আমি রাজ্য সরকারের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘জেলাশাসক ও সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন যেন বন্যা কবলিত এলাকার বিডিও এবং বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করুক সেই আলোচনায় আমিও থাকব । যৌথভাবে আমরা সকলে মিলে জেলার বন্যা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রীকে আবার চিঠি করবো ।’ তাঁর অভিযোগ, ‘এলাকার বন্যা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার কথা দু’বছর ধরে রাজ্য সরকারকে বলে আসছি কিন্তু রাজ্যসরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না । এই বিষয়ে রাজ্য সরকার যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ বরাদ্দ করার দায়িত্ব আমার থাকবে।’
সাংসদের কথায়, ‘গঙ্গার পর এবার বিপদসীমা পেরিয়ে গেল ফুলহর । আপার ক্যাচমেন্টে ভারি বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রবল গতিতে বাড়ছে নদীর জলস্তর। শুক্রবার ফুলহর তার বিপদসীমা ২৭.৪৩ মিটার উচ্চতা পেরিয়েছে। শনিবার বেলা ১২টায় নদীর জলস্তর ছিল ২৭.৬৫ মিটার। বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উঁচুতে। ইতিমধ্যে নদীর জল রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি ও মহানন্দটোলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। কয়েকশো হেক্টর জমি এখন জলের তলায়। জল ঢুকে গিয়েছে অসংরক্ষিত এলাকায় থাকা বাড়িঘরেও। অন্তত ২০-২২টি গ্রামে এখন নদীর জল বইছে। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ নদীবাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন ।’।