প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জুন : পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে রহস্যজনক মৃত্যু হল তৃণমূল প্রার্থির প্রস্তাবকের । মৃতর নাম হান্নান শেখ (৪৭)তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি-২ ব্লকের বোহার-২ পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সিদ্ধরিয়া গ্রামে । বৃহস্পতিবার ভোরে এলাকার রায়বাটি শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার ধার থেকে উদ্ধার হয় হান্নান শেখের রক্তাত দেহ। খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তৃণমূল কর্মী হান্নান শেখের মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনা , নাকি খুন , তা নিয়ে ধন্ধ তৈরি হয়েছে।মৃতর ছেলে যদিও দাবি,তাঁর বাবাকে খুন করা হয়েছে।হান্নানের মৃত্যুর সঠিক করণ জানতে পুলিশ এদিনই তার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠাায়।
মৃত হান্নান শেখের ছেলে মেহেবুব শেখ এদিন টেলিফোনে জানান ,তাঁর বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মেমেরি-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ ইসমাইলের সঙ্গে তাঁর বাবা পার্টি করতেন। ইসমাইলের অনুগামী হিসাবেই তাঁর বাবা এলাকায় পরিচিত ছিলেন।মেহেবুব দাবি করেন,এতদিন সিদ্ধরিয়া গ্রামে তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন নূরজাহান বিবি। দল এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে। নূরজাহান বিবিকে সঙ্গে নিয়ে এদিন তাঁর বাবা মনোনয়ন দাখিল করাতে যাবে এমনটাই ঠিক হয়েছিল ।হান্নান এও জানান,বুধবার দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হবে বলে তাঁর বাবা জানায়। হেটেল থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসে রাতে বাড়িতে খেয়ে নেবে বলেও তাঁর বাবা বলে। কিন্তু সারা রাত তাঁর বাবা আর বাড়ি ফেরেনি।
মেহেবুব বলেন,এদিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তিনি তাঁর বাবার মৃত্যুর খবর পান। এর পর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন,রাস্তার ধারে তাঁর বাবার মোটর বাইক দাঁড় করানো আছে।তার খানিকটা দূরে পড়ে থাকে তাঁর বাবার রক্তাত মৃতদেহ।মেহেবুব এও জানান ,তার বাবার মৃতদেহ কবরস্থ করার আগে গোসল করার সময় তাঁরা দেখেন তাঁর বাবার মাথার পিছনের দিকে ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের গভীর ক্ষত রয়েছে। পাশাপাশি বাবার ডান হাতের তিন জায়গায় ধারলো কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।এছাড়া তাঁর বুকের পাঁজরেরও আঘাতের দাগ দেখা গিয়েছে। এইসব দেখে মেহেবুব খান দাবি করেন, কোন দুর্ঘটনায় তাঁর বাবার মৃত্যু হয় নি। পরিকল্পিত ভাবে তাঁর বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনের ঘটনাায় তাঁদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন জড়িত থাকতে পারে বলে মেহেবুব অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েদেন, মৃতদেহ কবরস্থ হয়ে যাবার পর রাতেই মেমারি থানায় গিয়ে এ বিষয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করবেন।
ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মহম্মদ ইসমাইল বলেন,
একথা ঠিক ,সিদ্ধরিয়া গ্রামের হান্নান শেখ তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। এদিন সিদ্ধরিয়া গ্রাম সংসদের তৃণমূল কংগ্রেস প্রর্থীর মনোনয়ন দাখিলের সময় প্রস্তাবক হিসাবে তার বিডিও অফিসে যাবার কথা ছিল । তারই মধ্যে এদিন ভোরে মৃতদেহ মেলে । হান্নান শেখকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করা হয়েছে বলে তার পরিবারের লোকজন দাবি করছে। পুলিশ হান্নানের মৃত দেহের ময়নাতদন্ত করিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই পুলিশ হান্নানের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সন্মন্ধে নিশ্চিৎ হয়ে যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পুলিশ যদি পরিবারের আনা অভিযোগের সত্যতা তাহলে পুলিশ নিশ্চই যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে মহম্মদ ইসমাইল মন্তব্য করেন । এসডিপিও ( বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।।