প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ ডিসেম্বর : ছোট বয়স থেকেই সরকারী আমলা হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তাই ডাক্তারি পাশ করে সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়ার পরেও অরুণ কুমার বিশ্বাস সরকারী আমলা হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান ।তাঁর সেই স্বপ্নও পূরণ হয় ।তবে রোগীর চিকিৎসা করা থেকে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন নি।পূর্ব বর্ধমানের ভাতার ব্লকের বিডিও অরুণ বিশ্বাস এখন ডাক্তার বিডিও নামেই স্বনামধন্য হয়েছেন। তাঁকে নিয়ে ভাতারবাসীর গর্বের অন্ত নেই ।
মালদার মঙ্গলপুরে বাড়ি অরুণ কুমার বিশ্বাসের । তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২০০৯ সালে ডাক্তারি পাশ করেন । তারপর এক বছর মানবাজার-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি করেন । অরুণবাবু জানান,চিকিৎসক হিসাবে মানবাজারের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাকরি করলেও আমলা হওয়ার বাসনা তিনি ত্যাগ করতে পারেন নি । তাই হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি ’ইউপিএসসি’ পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন । কিন্তু ভাগ্য সহায় হয় নি । তবে ’’ইউপিএসসি’ না পেলেও ১০১৭ সালে ডাব্লুবিসিএস পরীক্ষায় পাশ করেন । ২০১৯ সালে কাজে যোগ দেন ।প্রথম পুরুলিয়ার ঝালদা ২ ব্লকের বিডিও হন । এখন তাঁর ঠিকানা ভাতার ব্লক। আমলা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই ।তবে ছুটির দিনে তিনি রোগীদের চিকিৎসা করার কাজটাও সমানতালে করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন ।২০০২ সালে ২৬ ডিসেম্বর বিডিও সাহেবের মা হেমালিনিদেবী মারা যান। রবিবার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনেই ভাতারের ব্লক অফিসের একটি ঘরে বসে রোগীর চিকিৎসা করার কাজ শুরু করেন বিডিও অরুণ বিশ্বাস । ওই দিন তিনি ২৬ জনের চিকিৎসা করেন। এখন থেকে সরকারী ছুটির দিনে রোগীর চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করবেন বলে বিডিও মনস্থির করেছেন । বিডিও অরুণবাবু এদিন বলেন, ‘প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব সামলে তবেই চিকিৎসা করবেন। যতটুকু সময় মিলবে ততটুকু সময় তিনি সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে চান । তাতে সাধারণ মানুষের উপকার হবে।’
ভাতারের কাঁচগোরিয়া গ্রামের মামনি ঘোষ ও বামশোর গ্রামের জিলাই শেখ এদিন বলেন,
‘বিডিও সাহেব চিকিৎসা করবেন জেনে ব্লক
অফিসে ছুটে গিয়েছিলেন । বিডিও সাহেব ওষুধ লিখে দিয়েছেন ।’ উনি চিকিৎসা করা শুরু করায় ভাতারবাসীর প্রভূত উপকার হবে বলে জিলাই শেখ মন্তব্য করেন ।
ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’তাঁদের কর্মীদের শারিরীক অসুস্থতা হলে কাজের ফাঁকে বিডিও সহেব চিকিৎসার পরামর্শ দিতেন। এ বার তিনি ব্লকের রোগীদের চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া শুরু করায় অনেকেই উপকৃত হবেন। এর ফলে বিডিও সাহেবের ডাক্তারি-বিদ্যাতেও মরচে পড়বে না ।’মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন,’প্রশাসনিক কাজ সামলে বিডিও তাঁর শিক্ষা প্রয়োগ করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে । এটা সত্যি ভালো উদ্যোগ ।’।