প্রদীপ চট্টোপধ্যায়,বর্ধমান,১৯ জুলাই : বৃদ্ধা ও তাঁর ছেলেকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠলো এক তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার শম্ভুপুর গ্রামে।অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম ফিরোজ শেখ।তিনি নিজেকে ছোট খাটো কোন নেতা ভাবতে নারাজ। রাজ্যের একাধীক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে তিনি নিজেকে মস্ত নেতা বলে দাবি করেন।এহেন নেতার মারধোর ও হুমকির জেরে এখন বাড়ি বৃদ্ধা লাখি বেগম শেখ ও তাঁর ছেলে শেখ সাইদুল মোল্লা । তাঁরা ওই তৃণমূল নেতা ও তার দলবলের শাস্তির দাবিতে জামালপুর থানা ও পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ।
জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম শম্ভুপুর ও চক্ষণজাদি । শম্ভুপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাইদুল মোল্লা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে নিজের রোজগারের অর্থে তিনি জামালপুরের শম্ভুপুর গ্রামে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন।বৃদ্ধা মা, সৎ বাবা,স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে তিনি নিজের বাড়িতেই থাকেন। গত ১৬ জুলাই তাঁর মা লাখি বেগমের সঙ্গে সৎ বাবার ঝগড়া হলে সৎ বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে যান।বাড়ির সবাই জানতো রাগ কমে গেলেই সৎ বাব ফের বড়িতে ফিরে আসবেন।
সাইদুল মোল্লা বলেন, তাঁর মা ও সৎ বাবার
ঝগড়া নিয়ে যে এলাকার তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা খবরদারি করতে নামবে এটা তাঁদের কাছে কল্পনারও অতীত ছিল । সাইদুল জানান,তাঁর সৎ বাবা ঘরথেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ হঠাৎতই পাশের গ্রাম চক্ষণজাদি নিবাসী তৃণমূল নেতা ফিরোজ শেখ ও জিয়ারুল মল্লিক দলবল সঙ্গে নিয়ে তাঁদের বাড়িতে হাজির হয় । তাদের সঙ্গে তাঁর সৎ বাবাও থাকেন। সাইদুল জানান,ওই দু’জন তাঁকে জানায় তারা এলাকার তৃণমূল নেতা । তাদের কথাই এলাকায় শেষ কথা ।শম্ভুপুর গ্রামে তাঁর থাকার আধিকার নেই বলে জানিয়ে তৃণমূল নেতা ফিরোজ, জিয়ারুল ও তাদের সঙ্গে থাকা পাঁচ জন প্রথমে তাঁকে হাত দিয়ে মারতে শুরু করে।পরে লাঠি ও দা দিয়ে তাঁকে নির্মম ভাবে পেটাতে থাকে। মারধোরে জখম হয়ে রক্তাত অবস্থায় তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তাঁর বৃদ্ধা মা তাঁকে বাঁচাতে যান । তখন তৃণমূল নেতা ফিরোজ ও তার দলবল তাঁর মাকেও ব্যাপক মারধোর করে। মায়ের বুকে আঘাত লাগে’।
সাইদুল আরো বলেন,’তৃণমূলের ওই নেতাদের ভয়ে গ্রামের কেউ আমাকে রক্ষা করতে আসে নি । তাই প্রাণে বাঁচতে কোন রকমে আমি বৃদ্ধা মা কে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়ে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে পৌছাই। সেখানে দু’জন চিকিৎসা করান ।পরে জামালপুর থানায় অভিযোগ জানান।এদিন জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও চক্ষণজাদির তৃণমূল নেতাদের সন্ত্রাসের কথা জানিয়েছেন।সাইদুল এও জানান,“ফিরোজ ও তার দলবল তাঁকে ও তাঁর মাকে প্রাণে মেরে দেবে বলে হুমকি দিয়েগেছে বলে শম্ভুপুর গ্রামে নিজের বাড়িতে ঢুকতে সাহস পাচ্ছেন না। তাই ঘটনার দিন রাত থেকে তাঁরা রায়নায় আত্মীয়র বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন বলে সাইদুল মোল্লা জানিয়েছেন ।
এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে ,ফিরোজ দলীয় ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লকের কোন নেতা নয়। তার স্ত্রী বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান । সেই সুবাদেই ফিরোজের এত বাড়বাড়ন্ত । জামালপুর নিবাসী জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক প্রদীপ পাল বলেন,’ফিরোজ শেখ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন নেতা নয় ,পঞ্চায়েত সদস্যও নয়। দলের কয়েকজন মন্ত্রী,সাংসদ ও বিধায়কের সঙ্গে ছবি তুলে ফিরোজ নিজেকে বড় তৃণমূল নেতা ভাবছে।এলাকার মানুষকে ধমকাচ্ছে,চমকাচ্ছে।এটা ঠিক নয়। ওর আরো অনেক কীর্তি আমাদের কানে এসেছে।সেইসব দলের নেতৃত্বকেও জানানো হয়েছে। কারোর পারিবারিক অশান্তির বিচার করতে যাওয়া নিয়ে দলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরেও দলের নির্দেশ অমান্য করে ফিরোজ শম্ভুপুরে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার দায় দলের নয় । পুলিশ ও প্রশাসন ফিরোজ ও তার বলবলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিলে দলের কিছু যায় আসে না ।’ ফিরোজ শেখ যদিও দাবি করেছেন,যে ব্যক্তি তাঁর নামে অভিযোগ করছে তাঁকে তিনি চেনেনই না। এমন কোন ঘটনার সঙ্গেও তিনি জড়িত নন।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন,’অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরূ করেছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলানো হচ্ছে ।’।