শেখ মিলন,আউশগ্রাম,১১ ফেব্রুয়ারী : পরনে মলিন কাপড় । মাথায় উসকো খুসকো চুল । বন্ধ ঘরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের জগতের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন বছর চল্লিশের এক মহিলা । যেন মুক্তির প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন ৷ এমনই চিত্র দেখতে পাওয়া গেল আউশগ্রামের বিল্লগ্রাম অঞ্চলের বড়া গ্রামের একটি বাড়িতে । গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মহিলার নাম সবিতা ঘোষ । তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন । তাই তাঁকে এক চিলতে ছোট্টো ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা হয়েছে । ওই ঘরের মধ্যেই শোয়া-বসা । ঘরের মধ্যেই শৌচকর্ম । এক-দু’দিন নয় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এমনই নরক যন্ত্রনার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সবিতাদেবী ।
মহিলার প্রতি তাঁর পরিবারের লোকজনের এই অমানবিক আচরনের তীব্র নিন্দা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । গ্রামবাসীদের দাবি,অবিলম্বে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করুক প্রশাসন । এই বিষয়ে আউশগ্রাম-২ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এলাকা থেকে কেউ জানালে মহিলাকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।’
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে,এলাকায় মেধাবী ছাত্রী হিসাবে সুখ্যাতি ছিল সবিতাদেবীর । নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভালো নম্বর পেয়ে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন । তারপর থেকে কোনও কারনে তাঁর মানসিক রোগের লক্ষন দেখা দিতে থাকে । ইতিমধ্যে সবিতাদেবীর মা মারা গেলে বাবা শিবব্রতবাবু দ্বিতীয় বিবাহ করেন । তার কয়েক বছর পরেই বাবা ও সৎ মা দুজনেই মারা যান । এদিকে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর কার্যত বিনা চিকিৎসায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সবিতাদেবী । অভিযোগ,তারপরেই সবিতাদেবীর দাদা উজ্জ্বল ঘোষ ও বৌদি চম্পা ঘোষ তাঁকে একটি ঘরে বন্দি করে রেখে দেন । যে ঘরের মধ্যে নেই আলো, বিছানা বা পানীয়জলের কোনও ব্যবস্থা । এমনকি দাদা-বউদি ঠিকমতো তাঁকে খাবার পর্যন্ত দেন বা বলে অভিযোগ প্রতিবেশীদের ।
জানা গেছে,একই গ্রামে বিয়ে হয়েছে সবিতাদেবীর সৎ বোন কাবেরী মন্ডলের । অবশ্য বাপের বাড়িতে যাতায়ত নেই কাবেরীদেবীর । তবে তিনি দিনে দু’বার করে পলিথিনে খাবার এনে জানালা দিয়ে তাঁর দিদিকে দিয়ে যান । কিন্তু সৎ বোনের কাছ থেকে খাবার পেলেও শৌচকর্ম ঘরের মধ্যেই সারতে হয় বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা । ওই অসহায় মহিলার প্রতি তাঁর দাদা-বউদির এমন অমানবিক আচরনে স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । প্রতিবেশীদের দাবি, ওই মহিলার ঠিকমত চিকিৎসা করালে হয়তো সুস্থ হয়ে যেত । কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তাঁর দাদা উজ্জ্বল ঘোষ সবিতাদেবীর চিকিৎসা পর্যন্ত করায়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।
যদিও স্থানীয়দের এই অভিযোগ অস্বীকার করে উজ্জ্বল ঘোষের স্ত্রী চম্পাদেবী জানিয়েছে, তাঁর ননদের চিকিৎসা করানো হয়েছিল । তবে গৃহবন্দি করে রাখার কারন হিসাবে তিনি বলেন, ‘সবিতা কয়েকবার পালিয়ে গিয়েছিল । তাই তাকে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে ।’।