এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১৫ আগস্ট : ১৬৮৭ সালে মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজাক নিউটন মহাবিশ্বের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যকার আকর্ষণ বলকে একটি সূত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করে গেছেন । যেটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র নামে পরিচিত । সূত্রটি হলো: “মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণ বলের মান বস্তু কণাদ্বয়ের ভরের গুণ ফলের সমানুপাতিক এবং এদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক এবং এই বল বস্তুদ্বয়ের কেন্দ্র সংযোজক সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে।” নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। এটি সৌরজগত, নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সির মতো মহাজাগতিক বস্তুগুলির গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করেছে। এছাড়াও, এই সূত্রটি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথে বস্তু স্থাপন এবং বিভিন্ন মহাকাশযান ডিজাইন করতেও ব্যবহৃত হয়েছে।
কিন্তু স্যার আইজাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র থেকে বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা এত কিছু সুবিধা নেওয়ার পরেও বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আফসার আলী (৬৫) নামে এক ব্যক্তি মনে করছেন সূত্রটি ভুল এবং কাল্পনিক । তার মতে, নিউটনের গতির প্রথম সূত্র সঠিক হলেও অসম্পূর্ণ, দ্বিতীয় সূত্র পুরোপুরি সঠিক এবং তৃতীয় সূত্র কেবল কাল্পনিক যুক্তি।
তবে বাংলাদেশি আফসার আলী কোনো বিজ্ঞানী নন । অল্পবিস্তর পড়াশোনা করেছেন । পরে ১৯৭৯ সালে বরাত জোরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) একটা চাকরি জুটিয়ে ফেলেন । চাকরি করতে করতেই ১৯৯৬ সালে তিনি একদিন ঘোষণা করেন যে ইঞ্জিন চলাচলের একটি নতুন সূত্র নাকি তিনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন । যদিও তার সেই সূত্র আজও কারোর কোনো কাজে আসেনি । স্বঘোষিত বিজ্ঞানী আফসার আলীর কথায়,চক্রাকারে যান্ত্রিক কৌশলে জড়ের জড়তা ধর্ম, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ামুখী বলকে একই দিকে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে গতি ও স্থিতি—এই দুই ধর্মে রূপান্তর করলেই স্থায়ী গতি শক্তি বা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন সম্ভব।
নিউটনের সূত্র নিয়ে তার বিশ্লেষণ হল—প্রথম সূত্রে বাহ্যিক বলের উৎস ব্যাখ্যা নেই, তাই এটি অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় সূত্র—ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক—তার মতে সম্পূর্ণ সঠিক। তবে তৃতীয় সূত্র—প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে—তিনি এটিকে কাল্পনিক বলে দাবি করেন। আফসার আলীর মতে, আসল সূত্র হওয়া উচিত, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থির থাকে, আর বাধাহীন পথে গতিশীল বস্তু নিজের জড়তার কারণে গতি বজায় রাখে।
নিজের গবেষণার অংশ হিসেবে তিনি একটি ইউ-আকৃতির সিলিন্ডার তৈরি করে পরীক্ষা চালান। এতে জল ঢালার পর বায়ু আটকে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। চাপ মুক্ত হলে জলের পতনে শক্তি উৎপন্ন হয়, যা দিয়ে তিনি জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ছাড়াই ইঞ্জিন চালানোর কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। এই পরীক্ষায় নিজের অর্থ ব্যয় করে একাধিক ছোট ডিজেল ইঞ্জিন কিনে কাজ করেছেন তিনি, যা করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আলী সাহেব ।
প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তার গবেষণার ফল যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলেও কেউ তা পরীক্ষা করেনি। আফসার আলী বিশ্বাস করেন, তার গবেষণা যাচাই হলে বিশ্বে অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হবে।
১৯৭৫ সালে জগদল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন আফসার আলী। তিনি বহু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন, তবে এযাবৎ কোনো প্রকাশনা সংস্থা ছাপতে রাজি হয়নি । বর্তমানে তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার সূত্রের বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সুযোগ চান। আফসার আলী বলেন, রকেট চলে প্রতিক্রিয়ার বলে—এটা ভুল। আসলে রকেট চলে ভরবেগের কারণে, যা দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। আমার মতে, তৃতীয় সূত্র শুধু যুক্তি মাত্র, বাস্তব নয়। আমি যা বলেছি, সেটাই সঠিক।
তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের আজিজনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই আফসার আলীর বাড়ই । তিনি বেশ কিছুদিন ধরে নিউটনের গতিসূত্রের মধ্যে তৃতীয় সূত্রটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এটি ভুল ব্যাখ্যা করে আসছেন। তার মতে, এই সূত্রে কিছু অসংগতির বিষয় রয়েছে। জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয় নিয়ে নিজ উদ্যোগে গবেষণা করে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, এর আগেও তিনি জ্বালানি ছাড়া কীভাবে জল তোলা যায়, কিংবা জ্বালানি ছাড়া যন্ত্র চালানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করেছেন, যদিও তাতে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য আসেনি। বর্তমানে তিনি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করছেন, যা সত্যিই বোধগম্য নয়। কারণ এই সূত্রটিই আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। তবে বিজ্ঞান প্রমাণনির্ভর। কোনো তত্ত্ব বা মতকে বিজ্ঞান তখনই গ্রহণ করে, যখন তা যথাযথ ভাবে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন, যদি আফসার তার দাবির পক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে সেটা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, আমি মনে করি তাকে কিছু সুযোগ দেওয়া যেতে পারে—হোক তা সরকারি উদ্যোগে বা সমাজের উচ্চপর্যায় থেকে। হয়তো তাতে আমরা জানতে পারব, তার গবেষণায় কোনো নতুন দিক বা সত্যতা আছে কি না,নাকি সবটাই অসাড় কল্পনা ।।