এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,২৭ জুন : ভিন সম্প্রদায়ে বিয়ের ৮ মাসের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে তরুনীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসী থানার কুড়মুন চন্দনপুর এলাকা । আজ শুক্রবার সকালে সুলতানা পারভীন সাথী নামে ওই বধূর মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়িতে দলবেঁধে এসে হামলার অভিযোগ উঠল মৃতার বাপের বাড়ির বিরুদ্ধে । ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি তরুনীর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ব্যাপক মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে । পালটা শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতার মা । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । পূর্ব বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার অর্ক ব্যানার্জি জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তদন্ত চলছে। সবটাই এখন প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে জানানো হবে।
জানা গেছে,মৃতা সুলতানা পারভীনের বাপের বাড়ি গলসী থানা এলাকার কুরকুবা আস্করণ গ্রামে। স্কুল কলেজে পড়ার সময় কুড়মুন গ্রামের নন্দী পাড়ার বাসিন্দা অঙ্কন নন্দীর সঙ্গে তার পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । গত বছরের অক্টোবর মাসে তারা পালিয়ে বিয়ে করেন । তারপর অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে(Link : https://www.facebook. com/share/v/1HeMfWUnnc/) এসে স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিজের দাদাসহ সমগ্র পরিবার এবং পুলিশের বিরুদ্ধে মারাত্মক সব অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি । ১৫ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দাদা তথা গলসি দু’নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ সাবীর উদ্দিন জয়,বাবা শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ,মা মেহেরুন্নেসা বেগম এবং কাকার ছেলে সেখ সাহিলের বিরুদ্ধে বিয়ে মেনে নিতে না পারায় শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তুলেছিলেন ওই তরুনী । পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন । যদিও বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন ওই তরুনী ।
জানা গেছে,বৃহস্পতিবার মেয়ের বাবা,মা, পিসি একটি গাড়ি করে খন্ডঘোষ বিধানসভার কুড়মুনা চন্দনপুরে আসে৷ তারা তরুনীকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুললে উভয়পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয় । এরপর ছেলে, ছেলের বাবা ও বোন গাড়ি ভাঙচুর করে তরুনীকে ফের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায় । খবর পেয়ে কুড়মুন থানার পুলিশ আসে । পুলিশ তরুনীর মতামত জানতে চাইলে তিনি শ্বশুরবাড়িতে “ভালো আছি” বলে দাবি শ্বশুরবাড়ির । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অঙ্কন নন্দীর এক আত্মীয়ের কথায়,’মেয়েটি সাবালিকা হওয়ায় পুলিশ তার বাপের বাড়ির লোকজনকে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন । তারা চলেও যায় । কিন্তু আজ শুক্রবার সকালে মেয়েটির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে গ্রামের লোকজনদের সাথে নিয়ে এসে অঙ্কনদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দেয় মেয়েটির বাপের বাড়ির লোকজন । ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি অঙ্কন, অঙ্কনের দিদিমা তপতী হুই, মা মনা নন্দী, দিদি প্রেরণা নন্দী ও মামা উজ্জ্বল হুইকে বেধরক মারধর করে । পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় ।’ জানা গেছে,তাদের মধ্যে অঙ্কন ও তার মামা উজ্জ্বল হুইয়ের আঘাত গুরুতর ।
যদিও মৃতার মা মেহেরুন্নেসা বেগমের দাবি, তার মেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তারা মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিলেন । কিন্তু ছেলে,তার বাবা ও বোন সবাইকে মারধর করে। গাড়ি ভাঙচুর করে। টানাপোড়েনে মেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। তার দাবি, তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চারজনে মিলেই খুন করেছে। মৃতার বাবা গলসী থানায় শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গেছে । পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।