এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ জুন : মালদা জেলার জালালপুরে ৬২৯ বছরের রথযাত্রা ও রথমেলা এবারে আয়োজন করা হচ্ছে না । কারণ পুলিশ রথযাত্রা ও রথমেলা অনুমতি দেয়নি । এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কড়া ভাষাতে আক্রমণ কথা নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে “মোল্লা ইউনূসের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়” বলে কটাক্ষ করেছেন । শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আর আজকে যেমন মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মোল্লা ইউনূস যেমন ঢাকাতে দুর্গা মন্দিরের পাশাপাশি প্রতিমাতেও বুলডোজার চালিয়ে দিয়েছে । ঠিক একই ভাবে জালালপুরে ৬২৯ বছরের রথযাত্রা ও রথমেলা করতে দেওয়া হবে না । যার উল্লেখ বেনীমাধব শীলের পঞ্জিকাতেও আছে । যদিও তৃণমূল শাস্ত্র অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী পঞ্জিকা মানেন না । আর তার বাহনদের তো মানার প্রশ্নই নেই । কারণ মুখ্যমন্ত্রী পিতৃপক্ষে দুর্গা পূজা উদ্বোধন করেন । মহরম এর জন্য বিজয়া দশমীর ডেট পরিবর্তন করেন । বিগত ১৪ বছর ধরে অনেক কান্ড করেছেন তিনি।’
জালালপুরে রথযাত্রা ইস্যুতে পাশাপাশি তিনি রাজ্য পুলিশকেও এক হাত নিয়েছেন । তিনি রাজ্য পুলিশকে ‘মুসলিম লীগ- পুলিশ’ হিসাবে অবিহিত করে বলেন,’মালদা জেলার জালালপুরে ৬২৯ বছর ধরে রথযাত্রা মেলা হয়ে আসছে এবারে মমতা পুলিশ মানে মুসলিম লীগ-২ পুলিশ, যারা সূরাবর্দীর দেখানো দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং, নোয়াখালী কিলিং, মোহাম্মদ আলী জিন্নার দেখানো পথ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, অনুমতি দেয়নি ।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতার ৬ মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আমলে তোষণের রাজনীতি এবং পুলিশকে যেভাবে মাইন্ড সেট করে দিয়েছেন তিনি তাতে হিন্দুদের সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পূজা পাঠ রীতিনীতিতে বাধা দিতেই হবে । আর সেই বাধাদানের ৮-১০ মাসের চিত্রটা যদি আমরা দেখি তাহলে দুর্গাপূজো থেকে শুরু করে রামনবমী পর্যন্ত অনেকগুলো চিত্র আমাদের চোখের সামনে এসেছে । ঠিক একইভাবে দুর্গাপূজা, লক্ষ্মী পুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, বেলডাঙ্গার কার্তিক পুজো, যোগমায়া দেবী কলেজের সরস্বতী পুজো তারপরে রামনবমী এবং অন্নপূর্ণা পূজা গেছে এবং এখন রথযাত্রা।’
তিনি বলেন,’এক বছর দুর্গাপুজোর ডেট পরিবর্তন করেছিলেন মহরমের মিছিল যাওয়ার জন্য । এছাড়া লাগাতার ১০ বছর ১০-১২ বছর ধরে পিতৃপক্ষে দুর্গাপুজোর ফিতা কাটতেন । আমাদের বারে বারে খোঁচা দেওয়াতে গত বছর থেকে একটু সংযত হয়েছেন । বুঝেছেন ওদিকে ৩০% যদি এক হয় তাহলে এদিকে ৭০ % ক্রমেই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে । তিনি কার্নিভালের নামে যেটা করেন সেটাও দুর্গাপূজো বা সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয় । ওনারা দুর্গা পুজোকে কালচারাল প্রোগ্রাম করতে চাইছেন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বাংলাটা দিয়ে গিয়েছিলেন হিন্দুদের হোম ল্যান্ডের জন্য । কিন্তু জালালপুরে ৬২৯ বছরের রথযাত্রা বন্ধ করে দেবেন আপনি ? জালালপুরে বা কালিয়াচক -৩ তো হিন্দুরা প্রায় শূন্য হয়ে গেছে । খুব বেশি হলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ হিন্দু । ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ দখল করে ফেলেছে মুসলিম । এই হচ্ছে পশ্চিমবাংলার চিত্র ।’
হাওড়া জেলার উলুবেরিয়াতেও পুলিশ রথযাত্রার অনুমতি দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেছেন, ‘উলুবেরিয়াতেও রথযাত্রার অনুমতির জন্য থানায় গিয়েছিল । কিন্তু সেই আবেদন রিসিভ করেনি পুলিশ । মৌখিকভাবে বলে দিয়েছে কোন নতুন রথযাত্রা হবে না । দিঘাতে যেটা হচ্ছে, বাজনা বাজাচ্ছেন আপনারা, সেটা কত বছর ধরে চলে আসছে ? আর উলুবেড়িয়ার রথযাত্রার অনুমোদন দেওয়া যাবে না ? আমি জালালপুর এবং উলুবেড়িয়ার হিন্দু সমাজকে বলবো আপনারা আগামীকাল মেলাও করবেন রথযাত্রাও বের করবেন,শুনবেন না । আপনাদের যদি গ্রেপ্তার করে তাহলে জামিন করানো এবং আপনারা যতদিন জেলে থাকবেন ততদিন আপনার পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব আমি এবং আমার দলের কার্যকর্তারা নেবো । কিন্তু হিন্দু ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে যেভাবে মমতা এবং তার পুলিশ বাধা দিচ্ছে, তাতে কোন নিষেধ শুনবেন না । আর আগামী পাঁচ তারিখে উল্টো রথের দিন মহরম এর কিছু কার্যক্রম আছে, সেই কারণে আপনাদের যদি রুটের পরিবর্তন করে তাহলে শুনবেন না । যেখানে পুলিশ আটকাবে সেখানে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ করবেন । আমরা আপনাদের পাশে আছি । কিন্তু পরিষ্কার বলছি শুনবেন না ।’
রাজ্য পুলিশের দুই শীর্ষকর্তা রাজীব কুমার ও বিনীত গোয়েলকেও নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’উলুবেরিয়া লোকজনদের বলবো দিঘাতে রাজীব কুমার যে রথের দড়ি টানতে গেছে তাকে আগে জিজ্ঞেস করুন অনুমতি আছে কিনা । সেখানে রাজীব কুমারকে দড়ি টানাতে নিয়ে গেছে, সঙ্গে বিনীত গোয়েলকেও নিয়ে গেছে । যে অভয়ার মৃত্যুর জন্য প্রধান দায়ী, প্রমাণ লোপাট করেছে, তাকেও সঙ্গে করে নিয়ে গেছে । কলকাতা থেকে পুলিশের সার্জেনরাও মোটরসাইকেলে করে ওখানে গেছে ।’
পাশাপাশি রাজ্যের হিন্দু সমাজের কাছে আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন,’রথযাত্রা যেন সম্পূর্ণ হিন্দু রীতিনীতি মেনে হয় । রথযাত্রার সম্পূর্ণভাবে হিন্দুদের অনুষ্ঠান । হিন্দু রীতিনীতি এবং পুরী ধামের নিয়ম অনুযায়ী যেন রথযাত্রা হয় ।’
তিনি আরও আহ্বান জানান যে রথের দড়ি টানা এবং পূজা অনুষ্ঠানে কেন অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রবেশাধিকার না দেওয়া হয় । এ বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’রথের মেলায় সবাই আসবেন কিন্তু রথের দড়ি টানাতে হিন্দু ছাড়া কারোর প্রবেশাধিকার নেই । অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে যেমন আমাদের প্রবেশাধিকার থাকেনা, ঠিক তেমনি রথের দড়ি টানা এবং পুজোতে অন্য ধর্মের মানুষ যাতে অংশগ্রহণ না করে সেটা রথযাত্রা উদযাপন কমিটিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য বলবো । হিন্দু ধর্মের বাইরে কোনো লোক যেন রথের দড়িতে স্পর্শ করতে না পারে। যদি করে থাকে তাহলে তার পবিত্রতা এবং সনাতন সংস্কৃতি অনেকাংশে ক্ষুন্ন হবে, ভগবান জগন্নাথ দেব সেটা গ্রহণ করবেন না । এটা আপনাদের আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ।’ সবশেষে তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জি যতই চেষ্টা করুন না কেন সেক্যুলারিজমের নামে, তোষনতন্ত্রের নামে কালচারাল প্রোগ্রামে পরিণত করার, কিন্তু আমরা করতে দেব না ।’।