নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরী পন্ডিতদের গনহত্যা ভারতের ইতিহাসের একটা কালো অধ্যায় । জম্মু-কাশ্মীরের ইসলামি শাসক ও কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার সেই গনহত্যা রোধে কোনো চেষ্টাই করেনি, বরঞ্চ এই গনহত্যাকে ধামাচাপা দেওয়ার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করেছিল । কিন্তু নিজের দেশেই পরবাসী কাশ্মীরি পন্ডিতরা কংগ্রেস ও আবদুল্লা সরকারদের সেই অপ প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। কাশ্মীরি পন্ডিতদের বর্ণিত এমনই এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কাহিনী হল ২২ বছরের তরুনী গিরিজা কুমারী টিকুর অপহরণ, কয়েকদিন ধরে ৫ জন মুসলিম মিলে গনধর্ষণ এবং শেষে জরায়ু থেকে শুরু করে উপরের অংশ পর্যন্ত করাত দিয়ে কেটে দেহ দ্বিখন্ডিত করে হত্যা ।
জম্মু-কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার বান্দিপোরা থানার আরিগাম এলাকার বাসিন্দা ছিলেন গিরিজা কুমারী টিকুর । মা (৬০), স্বামী (২৫), এক ছেলে(৪) এবং এক মেয়ে(২) নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার । ত্রেহগামের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন ল্যাবরেটরি সহকারী হিসাবে চাকরি করতেন গিরিজা । আজ থেকে ঠিক ৩৫ বছর আগে,১৯৯০ সালের জুন মাসের একদিন তিনি বেতন নিতে স্কুলে গিয়েছিলেন ৷ বেতন সংগ্রহের পর, একই গ্রামের বাসিন্দা তার মুসলিম সহকর্মীর সাথে পথে সাক্ষাৎ হয় গিরিজার । গিরিজার সহকর্মী ও আরও ৪ মুসলিম ব্যক্তি মিলে ছলনা করে তাকে একটি জায়গায় নিয়ে যায় ৷ সহকর্মী সাথে থাকায় গিরিজা সরল বিশ্বাসে তাদের সঙ্গে যায় । তখনো ওই হিন্দু তরুনী ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে তার সাথে কি নৃশংশ বর্বরোচিত ঘটনা ঘটতে চলেছে ।
মুসলিম সহকর্মী গিরিজাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখে । তারপর চার বন্ধুকে সাথে নিয়ে গিরিজার উপর শুরু করে পাশবিক অত্যাচার । কয়েক দিন ধরে তরুনীকে বিবস্ত্র করে লাগাতার গনধর্ষণ করে ৫ মুসলিম যুবক । তারপর আজকের দিনে (২৫.৬.১৯৯০) গিরিজাকে জীবিত অবস্থায় তার জরায়ু থেকে শুরু করে উপরের অংশ পর্যন্ত কাঠ চেরাই মেশিনের করাত দিয়ে কেটে দেহ দ্বিখন্ডিত করে ফেলে ওই ৫ অসুর । পরে দেহের দুটি টুকরো রাস্তার পাশে ছুঁড়ে ফেলে দেয় তারা ।
প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা সালমান খুরশিদ তার “বিয়ন্ড টেরোরিজম” বইতে গিরিজা টিকুর গনধর্ষণ ও নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “বান্দিপোরার গিরিজা টিকু কুপওয়ারার ত্রেহগামের গার্লস হাই স্কুলে ল্যাবরেটরি সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৯০ সালের জুন মাসে তাকে অপহরণ করা হয়, কয়েকদিন ধরে গণধর্ষণ করা হয় এবং তারপর একটি বার এবং করাত কলে টুকরো টুকরো করা হয়।”
১৯ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখটি কাশ্মীরের আদিবাসী জনগণ, বাস্তুচ্যুত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দ্বারা ৩৬ তম ‘গনহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ১৯৮৯-৯০ সময়কালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সম্প্রদায়ের উপর নৃশংস গণহত্যা চালানো হয়েছিল এবং ১৯ জানুয়ারী ১৯৯০ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় এই ধরণের জঘন্য কর্মকাণ্ড চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। গত হাজার হাজার বছর ধরে উপত্যকায় বসবাসকারী সমগ্র হিন্দু পন্ডিত সম্প্রদায়কে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে তারা যদি পাকিস্তান সমর্থিত এবং কাশ্মীর উপত্যকায় সক্রিয় সংগঠিত মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসী উপাদানগুলির সাথে না চলে তবে কাশ্মীরে তাদের গ্নহত্যা করা হবে, আর করেছিলেও তাই ।
পণ্ডিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে “রালিভ-গালিভ-চালিভ” স্লোগান প্রকাশ্যে তোলা হয়েছিল, যেখানে পন্ডিত সম্প্রদায়ের সদস্যদের ‘ইসলাম ধর্মান্তরিত হতে, মৃত্যু গ্রহণ করতে অথবা কাশ্মীর ছেড়ে যেতে’ বলা হয়েছিল। বিভিন্ন মসজিদে এই বিষয়ে হুমকি বার্তা প্রচার করা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মুসলিম রাস্তাঘাটে নেমে এসে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছিল। ১৯৯০ সালের ১৯-২০ জানুয়ারী রাতভর হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। বিশেষ করে এই অপমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের নারীদের জীবন ও সম্মান রক্ষা করার জন্য এবং কাশ্মীরের আদি বাসিন্দা, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য উপত্যকা থেকে গণ-নির্বাসনের বিষয়ে চিন্তা করার একটি স্পষ্ট কারণ তৈরি করেছিল।
জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও গণহত্যার পর, যা তৎকালীন সরকারগুলির সম্পূর্ণ ব্যর্থতার কারণেও ঘটেছিল, কিন্তু তাদের উদ্ধারে এগিয়ে না আসার কারণে, বাস্তুচ্যুত পন্ডিত সম্প্রদায় প্রতি বছর ১৯ জানুয়ারী কাশ্মীরি পণ্ডিত হলোকাস্ট দিবস (কাশ্মীরি পণ্ডিত নিষ্কাশন-দিবস) হিসেবে পালন করে আসছে। কাশ্মীর থেকে জোরপূর্বক গণহত্যার তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশের বিভিন্ন শহরে এই দিনটি পালন করে যেখানেই সম্প্রদায় আশ্রয় নিয়েছিল । কাশ্মীরি পন্ডিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলের বিষয়টি তুলে ধরার জন্য এই দিনে অভ্যন্তরীণ এবং বহিরঙ্গন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বিদেশে বসবাসকারী বাস্তুচ্যুত মানুষও গভীর নিষ্ঠার সাথে দিনটি পালন করে আসছে।।