প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ মে : পঞ্চায়েতের প্যাড ও প্রধানের সই জাল করে ভুয়ো ওয়ারিশন সার্টিফিকেট তৈরির দায়ে গ্রেপ্তার হল এক যুবক। ধৃতের নাম রাহুল মণ্ডল। তাঁর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সিংহজুলি গ্রামে।একই রকম জালিয়াতি কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছে শুভজিৎ ঘোষ নামে এলাকার আরো এক যুবক। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ শুক্রবার দুই ধৃতকে পেশ করে। তদন্তের প্রয়োজনে বিচারক ধৃত দু’জনকেই ৪ দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন অভিযুক্তদের দৃষ্টান্ত মূলক সাজার দাবি করেছেন ।
পুলিশ ও নসরৎপুর পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, নসরৎপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন মুন্সি। তিনি চলতি বছরের ৪ মার্চ তাঁর পরিবারের ওয়ারিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার নসরৎপুর পঞ্চায়েতে আবেদন করেন। সেইমত সবিস্তার যাচাই করে ইয়াসিন মুন্সির পরিবারের চারজনের নাম উল্লেখ করে পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দেন।
কিন্তু পঞ্চায়েত ইয়াসিন মুন্সিকে যে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট দেন সেটি ভেরিফিকেশনের জন্য পঞ্চায়েতে পৌছাতেই চোখ কপালে ওঠে প্রধানের। একই মেমো নম্বর থাকা ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের জেরক্স কপি গত ২২ শে মে পূর্বস্থলী ১ ব্লক অফিস থেকে নসররৎপুর পঞ্চায়েতে পৌছাতে দেখা যায় ,সেখানে শুধু ইয়াসিন মুন্সির নাম রয়েছে।কিন্তু নাম নেই তাঁর পরিবারের বাকি তিনজনের।এমনটা দেখার পরেই তদন্ত নামে পঞ্চায়েত । তদন্ত করে পঞ্চায়েত নিশ্চিত হয় ,পঞ্চায়েতের প্যাড এবং প্রধানের সই নকল তৈরি করা হয়েছে ভুয়ো ওয়ারিশন সার্টিফিকেট । এডিট করে তিনজনের নাম বাদ দিয়ে ওই ওয়ারিশন সার্টিফিকেটে শুধুমাত্র ইয়াসিন মূন্সির নাম রেখে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত এও জানতে পারে, এই জালিয়াতির কাজটি করেছে স্থানীয় সিংহজুলির যুবক রাহুল মণ্ডল। এরপর পঞ্চায়েত নাদনঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ রাহুল মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে ।
অনেকটা একই রকম কায়দায় ওয়ারিশধ সার্টিফিকেট জালিয়াতি ঘটনা ঘটেছে একই পঞ্চায়েত এলাকার পারুলডাঙ্গায়। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কথায় জানা গিয়েছে, গত ১৯ মে রবি ঘোষ নামে পারুলডাঙার এক বাসিন্দা ওয়ারিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে আবেদন করেন।তিনি তাঁর আবেদনে পরিবারের চারজনের নাম উল্লেখ করলেও বাকি দুজনের নাম উল্লেখ করেন না। সেই আবেদন দেখে সন্দেহ হওয়ায় পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন আবেদন পত্রটি নিজে খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করান ।
এই ঘটনা নিয়ে তদন্তে নেমে পঞ্চায়েত নিশ্চিত হয় রবি ঘোষের পরামর্শে তাঁর ছেলো শুভজিৎ ঘোষ তাঁদের পরিবারের দু’জন ওয়ারিশনের নাম বাদ দিয়ে পঞ্চায়েতে আবেদন করে। পঞ্চায়েত এও জানতে পারে,প্রতিবেশীগণের সই জাল করে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।এই জালিয়াতির বিষয়টি নিয়েও পঞ্চায়েত পুলিশকে সবিস্তার জানায়।
এমন জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান কানন বর্মন শুক্রবার বলেন,“আমাকে ফাঁসাতে এবং পঞ্চায়েতর বদনাম করতে ইয়াসিন মুন্সি,রবি ঘোষ, রাহুল মণ্ডল ও শুভজিৎ ঘোষ নামের ব্যক্তিরা লিপ্ত হয়েছিল ।আমার স্বাক্ষরও নকল করেছে এইসব জালিয়াতরা। দু’জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।এমন জালিয়াতি চক্রের শিকড় কতদূর ছড়িয়েছে তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে ।।