প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ ফেব্রুয়ারী : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজোর আয়োজন নিয়ে হুমকি-ধমকি কাণ্ডের জেরে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি।এমন আবহের মধ্যেই নিজের বাড়িতে জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো আয়োজন করে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর সাইফুল বিশ্বাস।রীতিমত ঘটা করে তাঁর বাড়িতে রবিবার সরস্বতী পুজো হয়। সেই পুজোয় হিন্দুদের পাশাপাশি মূসলিম শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। দুই সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা ব্রাহ্মণ পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে গলা মিলিয়ে পুষ্পাঞ্জলীও দেয় । দেবী সরস্বতীকে আঁকড়ে সাইফুল বিশ্বাসের বাড়ি এদিন যেন সর্বধর্মের মিলন ক্ষেত্রের রুপ পেয়ে যায়।
সাইফুল বিশ্বাস পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ধারাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বাড়িতেই রয়েছে ’উৎকর্ষ বাংলা’ সেন্টার। হিন্দু,মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের সেখানে ফ্যাশন ডিজাইন ছাড়াও জামাকাপড় তৈরী সহ সেলাইয়ের নানা প্রশিক্ষণ নেন।সাইফুল বিশ্বাসের বাড়িতে চলা উৎকর্ষ বাংলা সেন্টারের সরস্বতী পুজো করার জন্য হিন্দু শিক্ষার্থীরা আবেদন রেখেছিলেন।সেই আবেদন সাইফুল বিশ্বাস ফিরিয়ে দেন নি।বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে তিনি তাঁর বাড়িতে দেবী সরস্বতীর পুজোর যাবতীয় আয়োজন করেন। দেবী সরস্বতীর প্রতিমা আনা প্রতিমার সামনে আলপনা দেওয়া কোন কিছুতেই খামতি থাকে নি।
যেহেতু সাইফুল বিশ্বাসের বাড়িতেই বিদ্যার দেবীর পুজো হচ্ছে তাই তাঁর স্ত্রী প্রতিমা সরকার বিশ্বাস,পুত্র রাহুল বিশ্বাস পুজোয় সামিল হন । পুজোর জোগাড়েও তাঁরা হাত লাগান। ব্রহ্মণ পুরোহিত বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে পুজো সারেন।পুজোর আরতি থেকে শুরু করে পুষ্পাঞ্জলী দেওয়া সবই হয় নিষ্ঠা সহকারে।ব্রাহ্মণ পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে গলা মিলিয়ে শিক্ষার্দী পূজা বিশ্বাস,কাকলি বিবি, অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা পুষ্পাঞ্জলী দেনয়হ। পুজো শেষে সকলের মধ্যে প্রসাদ বিতরণও হয়।
পুজোয় অংশ নিয়ে খুশি কাকলি বিবি। তিনি বলেন, ’সাইফুল বিশ্বাসেরর বাড়িতে চলা উৎকর্ষ সেন্টারে আমরা সেলাই শিখতে আসি।আগে এই সেন্টারে বিশ্বকর্মা পুজো হয়েছে। তাতেও আমরা সামিল হয়েছিলাম। আমরা যেহেতু শিক্ষার্থী তাই বিদ্যার দেবী সরস্বতীর কাছে আমি সহ সেন্টারের সকল শিক্ষার্থীরাই এদিন পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছি।এদিন সকল শিক্ষার্থীরা মিলে আনন্দে দিনটা কাটিয়েছি ।’ অপর শিক্ষার্থী অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পূজা বিশ্বাসরাও একই মতামত পোষণ করেছেন।
আর সাইফুল বিশ্বাস বলেন,’হিন্দু-মুসলমান সকলেই আমরা এখানে একসঙ্গে বসবাস করি। আমি মুসলিম পরিবারের সন্তান হলেও আমার বাড়িতে চলা উৎকর্ষ সেন্টারে হিন্দু ,মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা রয়েছে।যেহেতু দেবী সরস্বতী বিদ্যার দেবী তাই শিক্ষার্থীদের আবেদন মেনে আমি নিজে পুজোর আয়োজন করি। আমার আয়োজন করা সরস্বতী পুজোয় হিন্দু-মুসলিম শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সকলে অংশ নেন। পুষ্পাঞ্জলীও দেন।’।