প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ আগস্ট : স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অর্থ আত্মসাৎতের জন্য চলছে চুড়ান্ত দুর্নীতি ও জাল জচ্চুরি।তারই প্রতিবাদে মঙ্গরবার গর্জে উঠলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।শুধু গর্জে ওঠাই নয়,দুর্নীতি,জাল জচ্চুরি ও বঞ্চনার কথা লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে এদিন বিডিও অফিসের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সেখানেই তারা বসে পড়েন। সেখানে বসেই তারা ব্লকের প্রশাসনিক কর্তা ও শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধেও তারা ক্ষোভ উগরে দেন।পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অর্থ আত্মসাৎতের চক্রান্তে জড়িতদের শাস্তি এবং ব্লকের সমস্ত গোষ্ঠীর পরিচালন কমিটি নির্বাচন দ্রত করানোর দাবিও তারা তোলেন। দুর্নীতি নিয়ে জামালপুরের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের এভাবে এককাট্টা হয়ে আন্দোলনে নামার ঘটনা যথেষ্টই সাড়া ফেলেছে ।আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দখতে শুরু করেছেন ব্লকের শাসক দলের নেতৃত্ব।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী(Self Help Group)তৈরিতে ‘দেশের সেরা’ স্বীকৃতি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ।ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশনের বিচারে বাংলার এই শিরোপা পাওয়ার কথা গর্বের সাথে অনেক আগেই মুখ্যমন্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। ।আর এখন লোকসভা ভোটের মুখে জামালপুরের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আনা অভিযোগে সেই গর্বই যেন চুরমার হতে বসেছে।একাধীক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আনা অভিযোগ গুলিও যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতোই।তারা অভিযোগ করেছেন,প্রায় ৪-৫ বছর ধরে তারা ব্লক প্রশাসন, ব্লক তৃণমূলের সভাপতি,পঞ্চায়েতের প্রধান,উপ-প্রধান সহ লেডি গ্রাম সেবিকার (lGS) বিরুদ্ধে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মে মদত দেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।ন্যায় বিচার চেয়ে তারা জেলা প্রশাসনের নানা মহলে বহু আবেদন নিবেদন করেছেন।জামালপুর ব্লকের ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পরিচালন কমিটির নির্বাচন করানোর দাবি জানিয়ে আসছেন । কিন্তু সুবিচারও মিলছে না,কোন দাবিও মানা হচ্ছে না ।তাই বিচার পেতে এভাবেই আন্দোলনে নামতে হয়েছে বলে আন্দোলনে সামিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা জানিয়েছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলির মহিলারা লড়াকু মুডেই বিডিও অফিসের গেটের সামনে জড়ো হন । তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত হাতে লেখা পোস্টার।স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও নানা অনিয়ম বিষয়ে লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে তার প্রথমে জামালপুরের ব্লকের বিডিও অফিসের গেটের সামনে শ্লোগান দেওয়া শুরু করেন । পরে বিডিও অফিসের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ দেখান ।স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রীরা তাঁদের বক্তব্যের মাধ্যমে ব্লকের শাসক দলের নেতা থেকে শুরুকরে ব্লক প্রশাসনের কর্তা ও লেডি গ্রাম সেবিকাকে কার্যত তুলোধনা করেন।
আন্দোলনের অন্যতম ’মুখ’ শুধু গর্জে ওঠাই নয়,দুর্নীতি,জাল জচ্চুরি ও বঞ্চনার কথা লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে এদিন পথে নামেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বলেন,’স্বনির্ভর গোষ্ঠী খোলার মূল উদ্দেশ্যটাই এখন কার্যত ব্যর্থ ।এখন শাসক দলের নেতাদের কাছে অর্থ লুটের মাধ্যম হয়ে উঠেছে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। মীরাতাজ দাবি করেন ,তিনি হলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী ’নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির’ আসল নেত্রী। কিন্তু গোষ্ঠীর অর্থ লুটের পথ সুগম করতে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন তাঁর পেয়ারের কয়েকজন মহিলাকে নারী চেতনা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী সাজিয়ে দায়িত্বে বসিয়ে দেয় । একই রকম অন্যায় কাজ আরো বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাথেও করা হয়েছে বলে মীরাতাজ বেগম অভিযোগ করেন।
মীরাতাজ সহ অন্য আরো বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা তাঁদের অভিযোগে এও বলেন, স্কুল ড্রেস তৈরির নামে কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে জামালপুরে। সেলাইয়ের ট্রেনিং সম্পূর্ণ করা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে স্কুল ড্রেস তৈরি করানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয় নি।সুতির বদলে টেরিকটের কমা মানের স্কুল ড্রেস ঘুর পথে আমদানি করে সেগুলি স্কুলে স্কুলে দেওয়া হয়েছে।এছাড়াও ’বৃক্ষ পাট্টা’ পেয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা গাছ পরিচর্যা করে বড় করে ।কিন্তু পাট্টা প্রাপকদের বঞ্চিত করেই সেই গাছ শাসক দল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তা ও নেতারা বিক্রী করে দিয়েছে।এমনকি সরকারী ভাবে দেওয়া ছাগল,হাঁস,মুরগি বিলি বন্টনেও চরম অনিয়ম হয়ে চলেছে।
বিস্ফোরক অভিযোগে গোষ্ঠীর মহিলারা বলেন, কাটমানি না দিলে কোন গোষ্ঠী কাজ পায় না।আবার ’কাটমানি’ দিলেও যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা কাজ পাবে এমন নিশ্চয়তাও নেই।গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণের নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি হয়ে চলেছে।নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভোট হওয়ার সরকারী নিয়ম থাকলেও তা হচ্ছে না।অনিয়ম জারি রাখতে স্নির্ভর গোষ্ঠীর পরিচালন সমিতির ভোট বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে।এইসব অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়।তার পরথেকে বছরের পর বছর কেটে গেলেও ন্যায় বিচার মেলেনি।
বিডিও (জামালপুর) পার্থসারথি দে বলেন,’স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা অনিয়ম ও দুর্নীতির যে অভিযোগ এনেছে সুগুলি আমার সময়ে ঘটেনি। পূর্বের ঘটনা। আর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভোট যথা সময়েই হবে । ওদের ভোটার লিস্ট তৈরির কাজ এখন চলছে ।
ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন,মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে খবরদারি করার কোন ক্ষমতা প্রশাসন আমায় দেয়নি। কাজেই গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে আমার হস্তক্ষেপ করারও কোন জায়গা নেই।সিপিএম ও বিজেপির কাছথেকে মদত পেয়ে জামালপুরের কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য তৃণমূলের বদনাম করতে এইসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে ।।