এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৬ জুলাই : বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়েছিল কট্টর ইসলামি দল জামাই-ই-ইসলামি ও খালেদা জিয়ার বিএনপির ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা । তারা কারাগার থেকে ৮৫ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও হাজার হাজার রাউন্ড কার্তুজ লুট করে । নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে কারাগারের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে ৮২৬ জন আসামিকে কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয় ৷ ওই আসামিদের মধ্যে ছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত । কট্টরপন্থী ছাত্ররা শিশু হত্যা মামলার তিন আসামি জালাল শেখ (৪৮), তার স্ত্রী মাফুজা খাতুন (৪২) এবং তাদের ছেলে বিল্লাল হোসেন (২০)কেও মুক্ত করে । সুযোগ বুঝে ওই তিনজন পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করে । কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পদক্ষেপ দেখে ভয় পেয়ে তারা বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে । তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর কথা জানিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম।
জানা গেছে,জালাল শেখ,মাফুজা খাতুন ও বিল্লাল হোসেন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতো। তারা তিন বছরের এক শিশু হত্যা মামলার আসামি। গ্রেফতারের পর থেকে নরসিংদী জেলা কারাগারে বন্দি ছিল তারা । দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র লুটের সময় অন্যান্য বন্দিদের সঙ্গে তারাও পালিয়ে যায় কারাগার থেকে ।
জানা যায়, গত ২১ জুন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসানের (২২) তিন বছর বয়সী মেয়ে মায়শা আক্তার নিখোঁজ হয়। এই ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪ জুন র্যাব জালাল শেখ, তার স্ত্রী মাফুজা খাতুন এবং তাদের ছেলে বিল্লাল হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিশুটিকে হত্যার কথা স্বীকার করে । এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পলাশ থানায় মামলা করেন নিহতের বাবা মেহেদী হাসান। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হলে তাদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয় । তখন থেকে বাবা, মা ও ছেলে নরসিংদী জেলা কারাগারে ছিল ।
জানা যায়, নরসিংদী জেলা কারাগারটি শহরের ভেলানগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। ভেলানগর ও জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন ধরেই লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ করছিল। ঘটনার দিনও সেখানে একই রকমভাবে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছিল। হঠাৎ করেই হাজার খানেক ভিড় কারাগারের দিকে এগোতে থাকে। তারা গিয়ে সেখানে প্রথমে ইট-পাটকেল, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে।
হামলাকারীদের প্রায় সবার হাতে লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এ সময় প্রাথমিকভাবে কারারক্ষীরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত কারারক্ষীরা পিছু হটে। তখন হামলাকারীরা কারাগারের দুই দিকের ফটক অনেকটা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিসংযোগ করে। সেই সময় হামলায় চার কারারক্ষী গুরুতর আহত হয়। জেল কোড অনুযায়ী, গুলি করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি । ফলে কারাকর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা মূল কারাগারের ভেতরে ঢুকে সেলগুলো শাবল ও লোহার জিনিসপত্র দিয়ে ভেঙে কয়েদিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। কিছু কারারক্ষীর কাছ থেকে চাবি কেড়ে নিয়েও সেলের তালা খোলা হয়। হামলা ও অগ্নিসংযোগের জেরে কারাগার কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক তিনজন বন্দি কুষ্টিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।