প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ মে : পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৃণমূলকে ফাঁসাতে নিজের বাড়িতে বোমা মারানোর অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের প্রার্থী দম্পতির বিরুদ্ধে।তা নিয়ে তখন তোলপাড় পড়ে যায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। সেই প্রার্থী দম্পতি সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা দেবনাথ সিপিএমের বিরুদ্ধে বিষদোগার উগরে দিয়ে চতুর্থ দফার লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে যোগদান করলেন বিজেপিতে।সোমবার ভোটের দিন জামালপুরে দোলরডাঙার এলাকার বুথে সিপিএম ও বিজেপির সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে আসরে নামবেন সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী দেবিকা। তাঁদের কে সিপিএম ও তৃণমূলের নেতারা কোন গুরুত্ব দিতে না চাইলেও বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য,এবার হবে কাঁটায় কাঁটায় টক্কর ।
পঞ্চায়েত ভোটে জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত মণ্ডল। আর তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন।ওই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর মোহনপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি।এই দম্পতি প্রার্থীকে নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও ঝড় তুলে ছিলেন সিপিএমের নেতা ও কর্মীরা।পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেবিকা ও সুশান্ত কে লাল ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে সিপিএমের মিটিং মিছিলের প্রথম সারিতেই দেখা যেত। এহেন প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে ২০২৩ সালের ২৫ জুন ভোর রাতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাড়িতে বোমা ছুড়ে মারার ঘটনা স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সুশান্ত ও দেবিকা ওইদিন স্বোচ্চার হয়।সিপিআই(এম) জামালপুর ১
এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র এলাকার দুই তৃণমূল কর্মী তারক বিশ্বাস ও দেবব্রত সেনগুপ্ত ওরফে দেবু কে দুস্কৃতি আখ্যাদিয়ে বোমা মারার ঘটনায় দায়ী করে পার্টির প্যাডে জামালপুর অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে । তারই মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় । ভোটে সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি পরাজিত হন।এদিকে ভোট মিটতেই সিপিএমের প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে।পুলিশ দাবি করে,পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠেছিল ওই প্রার্থী দম্পতি। তাই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের ফাঁসাতে দম্পতি তাঁদের পার্টির লোককে দিয়েই নিজেদের বাড়িতে বোমা মারা করায়।বোমা মারার অভিযোগে পুলিশ সুশান্তর সহযোগী স্থানীয় সিপিএম কর্মী রাম সরকার কে গ্রেপ্তার করে।এর পরেই উত্তর মোহনপুরের বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যায় দম্পতি সুশান্ত ও দেবিকা। পরে অনেক খোঁজ চালিয়ে পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা থানা এলাকা থেকে *সুশান্ত মণ্ডলকে* গ্রেপ্তার করে। সাথে সাথে পুলিশ সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি রাজ্য সরকারের ’গতিধারা’ প্রকল্পের যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন সেটিকেও বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশে দাবি করে, ওই গাড়িতে করেই নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বোমা আনা হয়েছিল।সুশান্ত ও রাম কে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত চালিয়ে আরো বোমা ও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধার হওয়ারও দাবিও ওইসময় করে পুলিশ। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পর সুশান্ত ও রাম এখন জামিনে মুক্ত ।
তবে সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী দেবিকা এখন আর সিপিএমে নেই।সিপিএমে মোহভঙ্গ হওয়ায় রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তারা যোগদান করেন বিজেপি দলে । কেন সিপিএমে মোহভঙ্গ হল ? এর উত্তরে সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকাদেবী বলেন,“সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে আমরা লড়াইয়ে নেমেছিলাম ।পঞ্চায়েত ভোটের কিছুদিন আগে আমাদের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়।কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আমাদেরকেই দায়ী করে। আমরাই নাকি আমাদের বাড়িতে বোমা মারা করিয়েছি ।এর জন্যে আমরা এনআইএ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছি।কিন্তু সবথেকে দুঃখের বিষয়,আমাদের এই দুঃসময়ে সিপিএমের কোন নেতা পাশে দাঁড়ায়নি। তাই সিপিএমের সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছি। এবার বিজেপির হয়েই লড়াই আন্দোলন করবো।”য়দিও সিপিএম পার্টির জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন,“আমাদের দল সুশান্ত ও দেবিকার পাশে দাঁড়ায়নি এই অভিযোগ সত্য নয় । আমরা সব রকম ভাবে ওদের পাশ দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিজেপিতে যাওয়ার জন্যে একটা অজুহাত তো দেখাতে হবে,সেটাই ওরা এখন করছে ।
জামালপুর নিবাসী জেলা বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন,’তৃণমূল সরকারের রাজত্বে পুলিশের করা সব মামলা “সত্য“ এমনটা ভাবার কিছু নেই। আইন আইনের পথে চলবে। দেবিকা দেবনাথ ও সুশান্ত মণ্ডল বিজেপিতে যোগদান করছেন। আমাদের কোন অসুবিধা নেই ।তারা সোমবার ভোটের দিন বিজেপির হয়েই ময়দানে নামবে ।’ আর জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন,’দুর্নীতিগ্রস্ত,দুস্কৃতি ও অপরাধীদের মিলন ক্ষেত্র হল বিজেপি দল । সেটা বুঝেই যোগ্য দম্পতি যোগ্য দলেই আস্তানা নিয়েছেন। আর যা বাম,তাইতো রাম! এতে আর আশ্চর্য্যের কি আছে ।’।