জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হাওড়া,০৯ ডিসেম্বর :
আদালতের বাইরে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের সম্মতিতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ, দাম্পত্য কলহ সহ বেশ কিছু দেওয়ানি মামলার বিচার কম খরচে ও দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ১৯৮৭ সালে ভারতে লোক আদালত চালু হয়। বিচারপতির সঙ্গে আইনজীবী, সাংবাদিক, সমাজসেবী, শিক্ষক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা লোক আদালতের ‘বেঞ্চ জাজ’ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আজ শনিবার দেশের বিভিন্ন নিম্ন আদালতের সঙ্গে হাওড়া জেলা ও দায়রা বিচারক তথা জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শ্রীমতী সোনিয়া মজুমদারের নেতৃত্বে এবং জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সচিব সুপর্ণা সরকারের পরিচালনায় ২১ টি বেঞ্চ বসে। এদের মধ্যে জেলার সদর আদালতে ১৮ টি এবং উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে ৩ টি বেঞ্চ হয়।
আদালতের ২ নম্বর বেঞ্চে গাড়ি দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মামলা ওঠে। নথিভুক্ত ৬০ টি মামলার মধ্যে ৪৬ টির নিস্পত্তি ঘটে। নিস্পত্তি মামলার অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
অন্যান্য বিচারপ্রার্থীদের সহমতের ভিক্তিতে এই বেঞ্চের মূল বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্লাবন মুখার্জ্জী বিচার চাইতে আসা প্রবীণ বিচারপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেন। প্রত্যেকেই বিচারকের মানবিকতায় মুগ্ধ হন । এদিন হাওড়া লোক আদালতের বিভিন্ন বেঞ্চে ট্রাফিক আইন, মানি স্যুট, টাইটেল স্যুট,ব্যাংক, এনজিআর, বিদ্যুৎ, টাইটেল স্যুট,বন্ধন ব্যাঙ্ক প্রভৃতি বিষয়ক মামলার নিস্পত্তি ঘটে।
উভয় পক্ষের সম্মতিতে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকা ৯০ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়। এরফলে প্রত্যেকের মুখে খুশির ঝিলিক দেখা যায়। হাওড়া জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের অফিস মাস্টার প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্য জানান – এদিন জাতীয় লোক আদালতে ৫ ৭১২ টি মামলা নথিভুক্ত হয়। এর মধ্যে ৪,২২০ টি মামলার নিস্পত্তি ঘটেছে। এইসব মামলায় অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকার মত।
এদিন জাতীয় লোক আদালতের ২ নম্বর বেঞ্চে একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে যায়। চা দিতে এসে অমর অধিকারী নামে জনৈক ব্যক্তি হঠাৎই মৃগী রোগে আক্রান্ত হন। বিচারক প্লাবন মুখার্জ্জী দ্রুত ওই যুবকের সেবায় হাত লাগান। এছাড়া জেলা আইনী পরিষেবা কেন্দ্রের সচিব সুপর্না সরকারের নেতৃত্বে আইনজীবী কমল সাউ, জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের কর্মী অমিতাভ হাজরা, শোভা পাত্র সহ অন্যান্যরা আক্রান্ত যুবককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তৎপর হন।
আদালতের ২ নম্বর বেঞ্চে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্লাবন মুখার্জ্জীর নেতৃত্বে দুই সদস্যর অন্যতম ‘বেঞ্চ জাজ’ ছিলেন ‘হাইকোর্ট সংবাদদাতা’ মোল্লা জসিমউদ্দিন যিনি এর আগেও দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
প্রয়াত বিচারপতির পুত্র জসিমউদ্দিন বললেন, ‘সাংবাদিকতার বাইরে সত্যিই এটা এক আলাদা অভিজ্ঞতা ।’ এই বেঞ্চে তাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।।