প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ জুলাই : সেই কতকাল আগে কবিগুরু লিখে গিয়েছেন,’যদি
তোর ডাক শুনে কেউ না আসে-তবে একলা চলো রে’।পঞ্চায়েত ভোট পরবর্তিতে কবিগুরুর এই লেখনির প্রতিচ্ছবি এখন যেন প্রকাশ পাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাসের কর্মকাণ্ডে । যা দেখে শাসক দলের নেতারা কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেচললেও ’কংগ্রেস বুড়ো’ নামে খ্যাত প্রভাতবাবু ’কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাব দেখিয়েই তাঁর প্রচার চলিয়ে যাচ্ছেন।’ভোট লুঠ করে পঞ্চায়েত ভোটে গণতন্ত্র কে হত্যা করা হয়েছে’।এই কথা জনতা জনার্দনের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব যেন একাই কাঁধে তুলে নিয়েছেন সত্তর উর্ধ্ব কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাস ।
ভয় ভীতির তোয়াক্কা না করে কট্টর এই কংগ্রেস
নেতা ভোট লুঠ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করার কথা
পোস্টার আকারে লিখে নিজের সাইকেলের সামনে লাগিয়েছেন।আর সেই সাইকেলে চেপেই তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ঘুরে প্রচার করছেন। প্রভাত বাবুর সাফ কথা,’যতক্ষণ ধরে প্রাণ আছে এই কথা তিনি প্রচার করেই যাবেন’।বাহাত্তর বছর বয়সে ভাঙা পায়ে সাইকেল চালিয়ে কালনা থেকে কার্শিয়াং, হাজার কিমি পথ ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় অংশ নিয়ে প্রভাত বাবু প্রামাণ করে দিয়েছেন তিনি বায়রন নন ,তিনি একজন কট্টর কংগ্রেসী ।
কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাসের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের
কালনা-১ ব্লকের সিমলন গ্রামে । বর্তমানে তাঁর বয়স ৭২ ছুঁয়েছে । সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার । বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক প্রভাতবাবু । তাঁর বাবা তারাপদ দাস কংগ্রেস পার্টি করতেন । প্রভাত বাবু বলেন,বাবার হাত ধরে স্কুল জীবন থেকেই তিনি কংগ্রেস পার্টির মিটিং মিছিলে যেতেন। সেই থেকেই কংগ্রেস পার্টির প্রতি তাঁর শ্র্দ্ধা ও ভালবাসা তৈরি হয়।সিপিএমের লোকজন মেরে তাঁর ডান পা ভেঙে দিয়েছিল । তবুও তাঁকে কংগ্রেস পার্টি করা বন্ধ করাতে পারে নি। বাহাত্তর বছর বয়সে পৌঁছে গিয়েও এখন কংগ্রেস পার্টিকেই আঁকড়ে ধরে আছেন। আমৃত্যু তাই থাকবেন। বায়রন বিশ্বাসের মত কংগ্রেস পার্টির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না বলে প্রভাত দাস জানান।তাঁর সংকল্প একটাই, কংগ্রেস পার্টির ঝাণ্ডা কাধে নিয়েই কৃষকদের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ।
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে প্রভাত দাস কালনা-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ১৯ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রভাতবাবুর অভিযোগ,’শুধু ভোটের দিনেই নয়,গণনার দিনেও রাজ্যের অন্য জায়গার মত কালনাতেও ভোট লুঠ হয়েছে ।’ সেই লুঠের ভোটের শিকার তিনিও হয়েছেন
বলে প্রভাতবাবু দাবি করেন । পাশাপাশি তিনি এও
বলেন,’ভোটের সময় আমাকেও বিচ্ছিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। শাসক দল ভোটের দিন ও গণনার দিন যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ।’ শুধু কালনায় নয় ,গোটা রাজ্যেই তা হয়েছে বলে এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতার দাবি । একই সঙ্গে প্রভাতবাবু দাবি করেন,তাঁকেও জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। লুঠের পঞ্চায়েত ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে।তাই গণতন্ত্র বাঁচানোর লক্ষ্যে এই কথাই সাইকেলে চেপে ঘুরে ঘুরে জনতা জনার্দনের কাছে গিয়ে তুলে ধরছেন বলে প্রভাত দাস জানিয়েছেন ।
শহর বর্ধমান নিবাসী প্রদেশ কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন,’প্রভাত দাস শুধু একনিষ্ট কংগ্রেস কর্মীই নন,তিনি কংগ্রেস দলের সম্পদ । প্রভাতবাবু একাই একশো। সাইকেলে ঘুরে ঘুরে তিনি যা প্রচার করছেন সেটাই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাস্তব চিত্র ছিল বলে গৌরব সমাদ্দার মন্তব্য করেন ।’
যদিও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাসের কর্মকাণ্ডকে পাগলের কর্মকাণ্ড বলে কটাক্ষ করেছেন ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শান্তি চাল । তিনি বলেন,’ওনার কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু দেখছি না। কালনাবাসী জানেন ,তৃণমূল সরকারের
রাজত্বে কালনার কতটা উন্নয়ন হয়েছে, কালনার কত মানুষ জনহিতকর প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে।
সেই কারণে কালনাবাসীর ভোটেই তৃণমূলের প্রার্থীদের জয়জয়কার হয়েছে ।’।