এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেহেরান,০১ ফেব্রুয়ারী : ইরানের কট্টর মৌলবাদী শাসকের কঠোর দমনপীড়ন সত্ত্বেও গোটা ইরান জুড়ে চলছে বিক্ষোভ প্রদর্শন । ইরানের অনেক শহর এবং রাজধানী তেহরানের অসংখ্য এলাকায় বিক্ষোভকারীরা সোমবার রাস্তায় নেমেছিল । যার ফলে দেশের চলমান শাসন-বিরোধী বিপ্লবে একটি নতুন স্ফুলিঙ্গ প্রজ্বলিত করেছে । বিক্ষোভকারীদের আগুন জ্বেলে রাস্তা অবরোধ করতে দেখা গেছে । পাশাপাশি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু নেতা আলী খামেনি, মোল্লাদের বিপ্লবী গার্ডস (IRGC) এবং আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তেহরান, কারাজ এবং জাভানরুদ শহরের জনতা তাদের জেলাগুলিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে এবং ‘খুনি খামেনির মৃত্যু’, ‘অভিশপ্ত খোমেনী’,’একনায়কের মৃত্যু’, ‘দারিদ্র্য-দুর্নীতি-চড়া দাম,আমরা শাসনকে উৎখাত করতে যাচ্ছি’,’আমি অত্যাচারে বলবো : আমাকে স্বাধীনতা দাও অথবা আমাকে মৃত্যু দাও’ প্রভৃতি সরকার বিরোধী স্লোগান দেয় ।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ক্রিপ্টোল্যান্ড অনলাইন এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারীরা তেহরানে শাসনব্যবস্থার বিচার ভবনের বাইরে একটি সমাবেশ করে আইআরজিসিকে তাদের চুরি হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবিতে । ক্রিপ্টোল্যান্ড ব্যবহারকারীরা দুই বছর ধরে বিক্ষোভ করছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিতে পূরণ করছে না । ক্রিপ্টোল্যান্ডের প্রায় ২,৮৯,০০০ ব্যবহারকারী ছিল, যারা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে তাদের সঞ্চয়ের কয়েক মিলিয়ন অর্থ হারিয়েছে ।
দেখুন ভিডিও :-
অন্যদিকে পশ্চিম ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশের জাভানরুদ শহরের স্কুলছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে এবং ‘খামেনির মৃত্যু’, ‘অভিশপ্ত খোমেনী’ প্রভৃতি শ্লোগান দিতে শুরু করে । এই অশান্ত শহরটি গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপক বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে এবং শাসকদের নিরাপত্তা বাহিনী পাশবিক দমনপীড়ন চালাচ্ছে । যার ফলে কয়েক ডজন নিহত ও আহত হয়েছে । পাশাপাশি দক্ষিণ-মধ্য ইরানের কেরমান প্রদেশের শাহরেবাবাকের একটি তামার খনির শ্রমিকরা ধর্মঘট করছে এবং স্থানীয় গভর্নরের অফিসের বাইরে একটি সমাবেশ করছে, তাদের কম বেতনের জন্য এবং পেনশনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছে । সোমবার ভোরে দক্ষিণ-মধ্য ইরানের ফারস প্রদেশের কোপন শহরে এমইকে (MEK) প্রতিরোধ ইউনিটের সদস্যরা প্রাক্তন আইআরজিসি কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানির একটি মূর্তি আক্রমণ করে এবং এটি পুড়িয়ে দেয় । এটি সোলেইমানি এবং মোল্লাদের শাসনের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিদ্বেষের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে ।
পশ্চিম ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশের সাক্কেজ শহরের বাসিন্দা ২২ বছর বয়সী তরুনী মাহসা (ঝিনা) আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয় । গত বছর ১৩ সেপ্টেম্বর মাহাসা পরিবারের সাথে তেহরানে ভ্রমণ করেছিলেন । কিন্তু হাক্কানি হাইওয়েতে প্রবেশের সময় তাকে বোরখা নীতি না মানার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ । নৈতিকতা পুলিশ তাকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং ১৬ সেপ্টেম্বর তেহরানের একটি হাসপাতালে তিনি ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় মারা যান । এই ঘটনাটি বিক্ষোভের সূত্রপাত করে যা দ্রুত ইরান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শাসনকে উৎখাত করার জন্য বিদ্রোহ শুরু করে ক্ষিপ্ত জনতা । ইরানে বিক্ষোভ আজ পর্যন্ত অন্তত ২৮২টি শহরে বিস্তৃত হয়েছে । ইরানের বিরোধী দল পিপলস মোজাহেদিন অর্গানাইজেশন অফ ইরানের (পিএমওআই/এমইকে) সূত্রে জানা গেছে,এযাবৎ ৭৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৩০,০০০ জনেরও বেশি প্রতিবাদী মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিএমও/এমইকে দ্বারা ৬৩৭ জন নিহত বিক্ষোভকারীর নাম প্রকাশ করা হয়েছে ।।