এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১২ জানুয়ারী : পুরনো বিবাদের জেরে খুন হলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ(৪৪) ওরফে দুলাল শেখ নামে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের এক সক্রিয় কর্মী । বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় পৌনে দশটা নাগাদ কেতুগ্রাম থানার আমগরিয়া বাজারে তাঁকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী । পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় । পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত ইয়াসিন শেখ একজন দাগি অপরাধী । বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখা, ডাকাতির চেষ্টা প্রভৃতি একাধিক গুরুতর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে । আগে একাধিকবার গ্রেফতারও হয়েছিল ইয়াসিন । তবে তাকে খুনের ঘটনায় এদিন বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানা গেছে । এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে একজন খুন হওয়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । যার জেরে গোটা আমগরিয়া বাজার কার্যত অঘোষিত বন্ধের চেহারা নেয় । প্রায় দিনভর বন্ধ ছিল দোকানপাট ।
জানা গেছে,শেখ ইঁট বালি সহ ইমারতি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন ইয়াসিন শেখ । স্ত্রী নুরশোভা বেগম ও তিন ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার । বড় ছেলে সাহিল বিহারে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন । বাকি ছেলেরা বাড়িতেই থাকে । ছোট ছেলে সোহেল প্রতিবন্ধী । রতনপুরের পাশে নবস্থা গ্রামের বাসিন্দা বিধবা মহিলা জুমাতন বিবির সঙ্গে ইয়াসিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে । জুমাতন বিবির স্বামী সুকুর শেখও খুন হয়েছিলেন ।
জানা গেছে,গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে নবস্থা গ্রামের বাসিন্দা রসাই খাঁ (৫৫) নামে এক প্রৌঢ়া খুন হয়েছিলেন । ওই প্রৌঢ়াকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে মূল অভিযুক্ত ছিলেন জুমাতন বিবি । ওই ঘটনায় জুমাতন ও তার আত্মীয় রেজিনা বিবি সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । জানা যায় ধৃত সাতজনের মধ্যে জুমাতন বিবি সহ চারজন গত শুক্রবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যান । কিন্তু জামিনে মুক্ত হওয়ার পর নবস্থা গ্রামে না ফিরে মুর্শিদাবাদ জেলার পিলকুণ্ডি গ্রামে এক দিদির বাড়িতে গিয়ে ওঠেন জুমাতন বিবি । এদিকে প্রেমিকা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় বুধবার তার সাথে দেখা করতে পিলকুণ্ডি গ্রামে গিয়েছিলেন ইয়াসিন ।
জুমাতন বিবির কথায়,’রাতে আমার কাছেই ছিল ইয়াসিন । এদিকে আমাকে পোশাক কিনে দেওয়ার জন্য আমাকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে আসছিল । কিন্তু আমরা আমগরিয়ার কাছে আসতেই পাশের আন্না গ্রামের বাসিন্দা বাবু শেখ চা খাওয়ানোর অছিলায় ইয়াসিনকে দাঁড় করায় । আমরা যখন চা খাচ্ছিলাম সেই সময় নবস্থা গ্রামের দু’জন এসে ওকে গুলি করে পালিয়ে যায় ।’ যদিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি গুলি করার সময় একাই ছিল ইয়াসিন । এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিহতের প্রেমিকার বয়ানে অসঙ্গতি থাকায় ধন্দের সৃষ্টি হয়েছে । তবে
পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেন বলেন,’প্রাথমিকভাবে এই খুনের ঘটনায় পারিবারিক বিবাদ কাজ করছে বলে পর্যন্ত জানা গিয়েছে । ঘটনার তদন্ত চলছে ।’।