প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ এপ্রিল :প্রসূতি মৃত্যুর হার উদ্বেগজন ভাবে বেড়ে চলেছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যা নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপালের ১৫০ শয্যার প্রসূতি বিভাগে প্রতি মাসে গড়ে ৪ জন ও বছরে ৫০ জনের মৃত্যু স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।সেখানে হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ বর্ষে ৪৬ জন ,২০-২১ বর্ষে ৫৩ জন ও ২১-২২ বর্ষে ৬৩ জন্য প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪ জন ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ জন আর মার্চ মাসে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছে যায় দশে।প্রসূতি মৃত্যুর হার এইভাবে বেড়ে চলা নিয়ে কয়েক দিন আগে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে বৈঠক করে যান । এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতি মৃত্যুর কারণ খুঁজতে বৈঠক করলেন ।
প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়ার জন্যে মূলত তিনটি কারণ এদিনের বৈঠকে উঠে এসেছে বলে জানা গিয়েছে । তার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসাবে উঠে এসেছে ,সঙ্কটজনক অবস্থায় ‘রেফার’ করে প্রসূতিদের বর্ধমানে হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। ’রেফার’ হয়ে আসা এমন প্রসূতি মধ্যে ৫০ শতাংশই বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও হুগলি জেলার । এইসব জেলার গ্রামীণ এলাকার প্রসূতিদেরই বেশি ‘বর্ধমান হাসপাতালে ’রেফার’ করা হচ্ছে। এছাড়াও অপ্রয়োজনে ‘রেফার’ করা অথবা ‘রেফার’ করতে দেরি হওয়ার জন্যেও প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে এমন তথ্যও বৈঠকে উঠে এসেছে। প্রসূতিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ঠিকমতো হচ্ছে না, এইসব কারণ ছাড়াও যে তথ্য উঠে এসেছে সেটিও যথেষ্ট উল্লেখ যোগ্য। সেই তথ্য অনুযায়ী প্রসবের ঠিক আগে প্রসূতির রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে। প্রসূতি ’টিন এজ’ হওয়ার জন্যেও মৃত্যু হার বাড়ছে বলেও বৈঠকে থাকা চিকিৎসকদের অনেকে মনে করছেন ।বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও গত তিন মাসে কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালেও প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে জেনেছেন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা ।
জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানান,প্রসূতি মৃত্যুর হার বাড়ার কারণ কী? মৃত্যুর হার ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে, সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে । বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন,’রেফার’ নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে । জানা গিয়েছে ,
এখন থেকে কোন প্রসূতিকে ‘রেফার’ করার আগে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দ্বিতীয় চিকিৎসকরের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তারপরেও ‘রেফার’ করার প্রয়োজনীয়তা হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। তার জন্যে জেলা শাসকের পরামর্শ মনে হোয়াটস অ্যাপ’ গ্রুপ খোলা হচ্ছে । সিএমওএইচ প্রণব রায় বলেন, ‘প্রসূতিদের সঙ্গে আরও নিবিড় ভাবে সংযোগ রেখে কাজ করার কথা আশা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের
বলে দেওয়া হবে । প্রসুতিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যাতে ঘাটতি না থাকে সেই ব্যাপারেও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।’।