শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৫ মার্চ : বিশালাকৃতির এক বটবৃক্ষ । তার মূল গুঁড়ির আজ অস্তিত্ব নেই । চারিদিকে ঘিরে ধরা বটগাছের ঝুড়ির মাঝামাঝি জায়গায় একটি বেদী । আর ওই বেদীর নিচেই নাকি সমাধিস্ত করা আছে গ্রাম্য দেবতা ক্ষেত্রপালকে । প্রাচীন রীতি অনুযায়ী প্রথমে দেবতার উদ্দেশ্যে মাটি অর্পন করতে হয় । আর তারপরেই শুরু হয় আনুষ্ঠানিক পূজো পর্ব । যুগ ধরে আজও এই প্রাচীন রীতি মেনে গ্রামের গ্রাম্য দেবতা ক্ষেত্রপালের পূজো করে আসছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের বাঘাসন পঞ্চায়েতের ফুলগ্ৰামের বাসিন্দারা । বাংলা বছরের বৈশাখ , আষাঢ় ও ফাল্গুন মাসে বাৎসরিক পুজো হয় ক্ষেত্রপালের । তবে ফাল্গুন মাসের ষড়শীতি সংক্রান্তি তিথিতে ধুমধাম সব থেকে বেশী । কয়েক দিন ধরে মেলা চলে । পূজোর দিনে যাত্রাপালার আয়োজন করা হয় । প্রচুর পূণ্যার্থীর সমাগম হয় । এদিন মঙ্গলবার ষড়শীতি সংক্রান্তি তিথিতে ফুলগ্ৰামের ক্ষেত্রপালের পূজো ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা ।
ক্ষেত্রপালের সেবাইত তপব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন,
‘ক্ষেত্রপাল শব্দের অর্থ ক্ষেত্র অধিপতি ৷ অর্থাৎ তিনি গোটা এলাকার প্রভু । ক্ষেত্রপাল নিজে ভৈরব । তাঁকে কাল ভৈরবও বলা হয় । ক্রান্তি,মেধা,বল, আরোগ্য,তেজ,পুষ্টি,যশ আর শ্রী এই ৮ টি ভৈরবের সমন্বয় হলেন ক্ষেত্রপাল স্বয়ং । সেই কারনে পূজোর মন্ত্রে বলা হয়,”ক্রান্তিমেধাবল আরোগ্য তেজপুষ্টি যশশ্রীং ক্ষেত্রপালং সদা ।”
কিন্তু কেন সমাধিস্ত করা হল গ্রাম্য দেবতাকে ? গ্রামবাসী গৌতম মুখার্জী,বিশ্বজিৎ রায়,সনৎ কুমার সোমরা বলেন, ‘বংশানুক্রমিকভাবে শুনে আসছি ক্ষেত্রপালের মূর্তিটি পাথরের নির্মিত ছিল । গ্রামের
ভট্টাচার্য পরিবারের কূলদেবতা ছিলেন ক্ষেত্রপাল । কোনও এক অজ্ঞাতকারনে ভট্টাচার্য পরিবার তাঁদের কূলদেবতাকে মাঠের মাঝে পুকুরপাড়ে মাটি চাপা দিয়ে রেখে দিয়েছিলেন । মতান্তরে ডাকাত বা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতেই পরিবারের কূলদেবতাকে মাটির নিচে সমাধিস্ত করেছিল ভট্টাচার্য পরিবার । তারপর ওই জায়গাটি চিহ্নিতকরণের জন্য তাঁরা সেখানে একটি বটবৃক্ষ রোপন করেছিলেন । সেই থেকেই বাৎসরিক পূজোর দিন অন্যত্র থেকে মাটি এনে দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পনের প্রথা চালু হয় । আজও সেই প্রাচীন প্রথা মেনে ওই বটবৃক্ষের গোঁড়ায় মাটি দেওয়া হয় ।’
তাঁরা জানিয়েছেন,ফুলগ্ৰামে এক সময় শুধুমাত্র তফসিলি জাতি সম্প্রদায়েরই বসবাস ছিল । তাই পূজোতে তাঁদেরই প্রাধান্য বেশি । আজও ক্ষেত্রপালের পূজোয় তফসিলি জাতি সম্প্রদায়ের মানুষরাই কেবলমাত্র ছাগ বা মেষ বলিদানের অধিকারী ।
বাঘাসন পঞ্চায়েতের ফুলগ্ৰামের গ্রাম্য দেবতা ক্ষেত্রপালকে জাগ্রত বলে মনে করেন এলাকার মানুষ । বহু মানুষ মানত করেন । মনষ্কামনা পূর্ণ হলে দেবতাকে নৈবেদ্য অর্পন করেন । এদিন বাৎসরিক পূজোর দিন অনেক মহিলাকে প্রনাম খাটতে দেখা গেল । পূণ্যার্থীদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা ।।