প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৩ মে : উন্নয়নের পরিবর্তে বিজেপি কর্নাটকে ধর্মের সুরসুরি, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও জাত পাত নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিল। তাই কর্নাটকের মানুষ ঠিক করে নিয়েছিলেন তারা বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবেন।কর্নাটকের মানুষ সেটাই করেছেন। আর তার জন্যই কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে বলে শনিবার দাবি করলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন,’২০২১ এ বাংলার মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তেইশে সেটাই করে দেখালো কর্ণাটক। বিজেপির পতনের শুরু হয়ে গেছে, এদের যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ওদের পতনের খুঁটি পুজো ২০২১ শে বাংলায় হয়ে গেছে । ২০২৪ এ গোটা দেশের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করবেন ।’
নব জোয়ার কর্মসূচিতে যোগ দিতে যেদিন বিকেলে মন্তেশ্বরে পৌঁছান তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জনসভা শুরুর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেন, বিজেপিকে ভোট না দেয়ার জন্য কর্ণাটক বাসির কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি কর্ণাটকবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,’বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু,আপনারা যাঁরা কর্নাটকের বাসিন্দা তাঁরা কংগ্রেস বা জেডিএস, যাকে পছন্দ ভোট দিন ।কিন্তু বিজেপিকে ভোট দেবেন না ।’ এদিন ভোটের ফলাফল ঘোষণা হলে দেখা যায়। কর্নাটকে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তারপরেও এই রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা টিএমসি কে আক্রমণ করে যাচ্ছে। অভিষেকের প্রশ্ন এইসব করে কংগ্রেস আসলে কার হাত শক্তিশালী করতে চাইছে?নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ যদি মানুষের কথা না ভাবে, তবে তাদের রাজনীতিতে থাকাই উচিত নয় বলে অভিষেক মন্তব্য করেন ।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস, সিপিএম ও আই এফ এফ এর জোট নিয়েও এদিন কটাক্ষ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায। তিনি বলেন,২১ শে বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম ও আই এফ এফ এর জোট বিজেপির লাভ করে দিয়েছে। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হওয়ার পরেও পশ্চিমবাংলার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী পুনরায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে আক্রমণ করে বিজেপির হাত শক্তিশালী করছে।
পাশাপাশি তিনি এও বলেন বিজেপিকে পরাস্ত করতে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে লড়ছি। যাঁরা বিজেপিকে হারাতে চায়, তাঁদেরকে আমরা সমর্থন করি। বাংলায় যে ক্যাম্পেইন চলেছিল,’নো ভোট টু বিজেপি’ কার্যত সেটাই কর্ণাটকে হয়েছে ।
বিজেপির কড়া সমালোচনা করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,ধর্ম,জাতপাত, মানুষ কি পরবে ,কি খাবে,এসব কখনো রাজনীতির ইস্যু হতে পারে না । রাজনীতির ইস্যুতে থাকবে রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্যপরিসেবা, কর্মসংস্থান। এইসব ইস্যু নিয়ে বিজেপির হাই প্রোফাইল নেতারা কোথাও কোন দিনও প্রচার করেনি। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারেও করেনি।তারা বারে বারে শুধু ধর্মের নামে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। এই ধর্মের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করা শুরু হয়েছিল বাংলার মাটি থেকে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া বাংলায় আটকে দিয়েছিলেন। বাংলার মানুষ হিসেবে আমি অত্যন্ত খুশি যে বাংলার যে পথ দেখিয়েছিল সেই পথ কর্নাটকের মানুষও অনুসরণ করেলেন। মহামতি গোখলে বলেছিলেন,’হোয়াট বেঙ্গল থিংকস টুডে, ইন্ডিয়া থিংকস টুমরো’ ।বাংলার মানুষ ২০২১ যা করেছিলেধ কর্নাটকের মানুষ সেটা করলেন তেইশে। আর গোটা ভারতবর্ষের মানুষ ২৪ শে এটাই করবেন ।
দুর্নীতি ইসুতেও এদিন বিজেপিকে কাঠগড়ায় তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন,
বিজেপি দুর্নীতি নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে। আর চল্লিশ শতাংশ কমিশন খেয়ে পাঁচ বছর কর্নাটক রাজ্যটার বারোটা বাজিয়েছে এই বিজেপি।এতদিন প্রধানমন্ত্রী যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার একটারও বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত কোথাও হয়নি।ডবল ইঞ্জিন ইঞ্জিন সরকার পাঁচ বছর কর্নাটকে ক্ষমতায় ছিল।মনিপুরে রয়েছে।তারপরেও তাহলে মণিপুরে আগুন জ্বলছে কেন?পাঁচ বছর ডবল ইঞ্জিনের সরকার দেখেও কর্নাটকের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করল কেন?অভিষেকের দাবি ,ডবল ইঞ্জিন নয়, বিজেপি নামক এই ট্রাভেল ইঞ্জিনের সরকার দেশের মানুষ আর চায় না।।

