জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,২৯ জুলাই : রক্তদান শিবির থেকে লক্ষ্য ছিল তিরাশি ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা। লক্ষ্য পূরণ তো হলই, অনিবার্য কারণে উপস্থিত বিপুল সংখ্যক রক্তদাতাকে হতাশ হয়ে ফিরেও যেতে হলো। প্রতিশ্রুতি থাকল দ্রুত তাদের জন্য একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার। আজ শনিবার ছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার দেওয়ানদীঘি থানার কামারকিতার প্রয়াত বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা শিল্পপতি কৃষ্ণদাস পালের ৮৩ তম জন্মদিন । এলাকায় তার বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজকে স্মরণ করে কামারকিতা শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবা কেন্দ্র ও ‘পূর্ণম ফাউন্ডেশন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এবং উৎসর্গ রিলিফ ফাউন্ডেশন, ক্যামরি ব্লাডব্যাঙ্ক ও স্থানীয় গ্রামবাসীদের সক্রিয় সহযোগিতায় কামারকিতা শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবা কেন্দ্রে একটি স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির ও বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
বর্ধমানের কেমরি হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট ৮৩ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে একুশ জন ছিলেন মহিলা। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। রক্তদাতাদের হাতে একটি করে শংসাপত্র ও বিশ্বউষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি করে গাছের চারা দেওয়া হয়। পাশাপাশি চক্ষু পরীক্ষা শিবিরে মোট ৫৭ জন চক্ষু পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা শিবিরে ১৩৭ জন রক্ত পরীক্ষা এবং মেডিসিন বিভাগে ৬২ জন রোগী চিকিৎসা করান। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে এলাকাবাসী খুব খুশি ।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বাজেপ্রতাপপুর শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী অজ্ঞেয়ানন্দ মহারাজ ও কামারকিতা শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সেবাকেন্দ্রের সাধারন সম্পাদক সিদ্ধার্থ পাল, ডা. অনির্বাণ হালদার, ডা. অভিসিপ্তা সাহা, ডা. রিঙ্কু মাজি, ডা. রূপক দাস, বিবেকানন্দ মল্লিক, অয়ন সরকার, মুনমুন দে, উৎসর্গ রিলিফ ফাউন্ডেশনের সম্পাদক তথা বিশিষ্ট সমাজসেবী দিব্যেন্দু দাস সহ আরও অনেকেই।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত কৃষ্ণদাস পাল এলাকায় শিল্পপতির পরিবর্তে সমাজসেবী হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন। খেলাধুলা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রাস্তাঘাট নির্মাণ সহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান প্রশংসনীয়। দুস্থ ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিনি স্কলারশিপ চালু করেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার স্বাভাবিক মেলামেশা ছিল দেখার মত। তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা সেই সমস্ত সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডগুলি আজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশিষ্ট সমাজসেবী দিব্যেন্দুবাবু বললেন, এলাকাবাসীর অনুরোধে আমরা এই মহান মানুষটির তিরাশিতম জন্মদিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই রক্তদান শিবিরের পাশাপাশি বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করেছি। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় আগামী দিনে তাঁর দেখানো পথেই আমরা চলব।’
শুধু জন্মদিন বা অন্য পারিবারিক উৎসব উপলক্ষ্যে নয় ব্লাড ব্যাংকগুলিতে রক্তের সঙ্কট দেখা দিলেই সমস্যার সমাধানে পূর্ণম ফাউন্ডেশন ও উৎসর্গ রিলিফ ফাউন্ডেশন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, অক্সিজেন পরিষেবা, ঔষধ, বস্ত্র ও শীতবস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বই খাতা ও ভর্তির ফি এবং পুষ্টি যুক্ত খাবার বিতরণ করে থাকে ।।