এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিশ্চন্দ্রপুর(মালদা), ২৩ অক্টোবর : ফিরহাদ হাকিমের জনসভায় যাওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের আবেদন জানাতে গিয়ে কার্যত ঘাড়ধাক্কা খেলেন তৃণমূল নেতারা । গ্রামবাসীরা অভিযোগ তোলেন কেবল রেশন ছাড়া আর কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধাই তাঁরা পাননা । তাই মন্ত্রীর জনসভাতেও যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন গ্রামবাসীরা । গ্রামবাসীদের রুদ্র রুপ দেখে শেষ পর্যন্ত পিটটান দেন তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা । শনিবার মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের-১ ব্লকের হরিচন্দ্রপুর অঞ্চলের অন্তর্গত গোলামোড় নবগ্রামের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । যদিও গ্রামবাসীদের যাবতীয় অভিযোগ মেনে নিয়েছেন ‘তাড়া খাওয়া’ তৃণমূলের নেতারা ।
উপনির্বাচনের আগে রবিবারই মালদায় সভা করতে চলেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম । চাঁচলের কলিগ্রাম এনবিএসটিসি বাস ডিপো উদ্ধোধন করার কথা রয়েছে তাঁর । তাই জনসভায় লোক জোটাতে শনিবার সকালে নবগ্রামে গিয়েছিলেন আফসার আলী ও আব্দুল সাত্তার নামে দুই স্থানীয় তৃণমূল নেতাসহ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী । তাঁরা গ্রামের একটা পাড়ায় ঢুকে মন্ত্রী জনসভায় যাওয়ার জন্য আবেদন জানাতেই বেশ কিছু স্থানীয় মহিলা ও পুরুষ মিলে তাঁদের ঘিরে ধরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ।
নবগ্রামের বাসিন্দা রুকমনি মিশ্র বলেন, ‘বিক্ষোভ দেখাবো না ? বারবার আসছে আর বলছে মিটিংয়ে চলো । কেন যাবো মিটিংয়ে ? আজ পর্যন্ত আবাস যোজনার অনুদান দেওয়া হল না । অথচ বারবার আসছে আর ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে । এদিকে মাটির বাড়িতে ইঁদুর আর সাপের মাঝে আমাদের বসবাস করতে হচ্ছে ।’ সেই সঙ্গে তিনি অভিযোগ তোলেন, ‘আমরা কিছুই সরকারি সুবিধা পাচ্ছি না । সামনেই বন্যা হল । অথচ একটা ত্রিপল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি । কেবল মাসে একবার রেশনে চাল পাচ্ছি । কিন্তু সেখানেও গড়বড় করে দিয়েছে । আমদের দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার । অথচ আমাদের বিপিএলের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে এপিএলের তালিকায় রাখা হয়েছে (রুকমনিদেবীর কথায় আমাদের বড়লোক করে দিয়েছে) ।’
জানা গেছে,গ্রামবাসীরা এককাট্টা হয়ে তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের ঘিরে ধরে এই সমস্ত অভিযোগ জানিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন । শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি । শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা কার্যত পালিয়ে বাঁচেন । যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ সঠিক বলে জানিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকের তৃণমূল নেতা আফসার আলী । তিনি বলেন,’এটা বাস্তব যে, হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লকের অনেক গ্রামের বহু পরিবার আবাস যোজনার অনুদান থেকে বঞ্চিত রয়েছেন । সন্তোষপুর, নবগ্রাম,গাঙরসহ ১৮-২০ টি গ্রামের মানুষের আবাস যোজনার তালিকায় নামই নেই । এনিয়ে আমরা শীর্ষ নেতাদের অনেকবার জানিয়েও ছিলাম । কিন্তু তার পরেও অনুদান না পাওয়ায় এদিন আমাদের রোষের মুখে পড়তে হল ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সব কিছু সরকারি সুযোগ সুবিধা পান । কিন্তু অনেক পরিবার আছে যারা কোনও সুবিধাই পান না । এই সমস্ত খামতিগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে আমরা বলেছি । নেতাদেরও বলেছি ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘রাজ্যে আমাদের সরকার আছে । পঞ্চায়েতও আমরা গঠন করেছি । অথচ আমাদের এলাকার মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবেন, এটা খুবই লজ্জজনক বিষয় । আমরা এনিয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে একটা স্মারকলিপি দেবো ।’ এদিকে এদিনের এই ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ।।