প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ জুলাই : কোভিড ভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে গোটা দেশ।এমন পরিস্থিতিতে এবার জনসমাবেশ করে তৃণমূল কংগ্রেস ২১ শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ দীবস পালন করছে না। শহীদ স্মরণ হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে । আর তার কারণেই চুড়ান্ত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের দুই ধারে থাকা ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা। কারণ প্রতি বছর এই দিনটিতেই তাদের উল্লেখযোগ্য বিক্রিবাটা হত । যা এবছর আর হবেনা । সেই কথা ভেবেই হতাশ শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা ।
রাজ্যে ক্ষমতায় অসার অনেক আগে অর্থাৎ দলের জন্মলগ্ন থেকেই ২১ জুলাই শহীদ স্মরণ দীবস পালন করে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস।যার মূল পুরোধা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার।রাজ্যবাসী তৃতীয় বারের জন্য এই রাজ্যের ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। সবারই প্রত্যাশা ছিল ২০২১ সালের ২১ শে জুলাই কলকাতায় রাজপথে তৃণমূল কংগ্রেসের শহীদ স্মরণ দীবসের সভায় যে ভিড় হবে তা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু মারণ ভাইরাস ’কোভিড ১৯’ এর জন্যে দলের কর্মী সমর্থকদের সেই প্রত্যাসা পূরণ করা থেকে পিছু হাটে দলের নেতৃত্ব । ভার্চুয়াল মাধ্যমে ২১ জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভা করার সিদ্ধান্ত নেয় দল ।
এতকাল ২১ জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ দীবসের দিনে দুই বর্ধমান,বাঁকুড়া,বীরভূম, পুরুলিয়া মুর্শিদাবাদ সহ উত্তরবঙ্গের তৃণমূল কর্মীবাহী বাসগুলি ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতা যেত । সভা শেষে ফেরার পথে তাদের স্টপেজ ’মাস্ট ছিল’ শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে ।ল্যাংচা ,ছাড়াও বর্ধমানের অপর দুই প্রসিদ্ধ মিষ্টি সীতাভোগ ও মিহিদানা কেনার জন্যে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ভিড় করতেন শক্তিগড়ের ল্যাংচার দোকান গুলির সামনে । ল্যাংচার দোকান গুলি যেন তৃণমূলের সমাবেশ স্থলের রুপ পেয়ে যেত।ভিড় সামলাতে শক্তিগড়ের ল্যাংচা বাজার এলাকায় পুলিশ পর্যন্ত মোতায়েন রাখতে হত । খরিদ্দারকে নিজেদের দোকানে টানার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করতেন ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা।তারাই জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে তৃণমূল কর্মীবাহী বাস গুলি তাঁদের দোকানের সামনে দাঁড় করানোর জন্যে আপ্যায়ন করতেন।কিন্তু এই নিয়ে দু’বছর হল সবই যেন কার্যত ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘এতকাল ২১ জুলাইয়ের একমাস আগে থেকে তাঁরা সকল ল্যাংচা ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতেন ।সমস্ত উপকরণ আগে থেকে রেডি থাকত।ওই একমাস কারিগর, কর্মচারি সবাইকে নিয়ে গমগম করতো তাঁদের দোকান ।আর ২১ জুলাইয়ের দিন তো কথাই নেই ।বল্যাংচার দোকানগুলির সামনে যেন মহাযজ্ঞ চলতো । এবার কোভিড ভাইরাসের কারণে ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হচ্ছে না । তাই শক্তিগড়ের ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের সবাই হতাশ । সবারই মন খারাপ ।’
অপর ল্যাংচা ব্যবসায়ী কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার সময় শক্তিগড়ে গাড়ি থামিয়ে টিফিন করতেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা।আবার সমাবেশ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তারা শক্তিগড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাওয়া দাওয়া তো করতেনই । পাশাপাশি তারা ল্যাংচা, সীতাভোগ, মিহিদানা কিনেও নিয়ে যেতেন । কিন্তু কোভিড মহামারী সবের উলোটপালোট ঘটিয়ে দিয়েছে ।’।