প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৬ আগষ্ট : তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় এবার গ্রেপ্তার হলেন দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সাধারণ সম্পাদক।শহর বর্ধমানের খালাসী পাড়া নিবাসী তৃণমূল কর্মী অশোক মাঝিকে খুনের ঘটনায় ধৃত তৃণমূল নেতার নাম শিবশংকর ঘোষ। বর্ধমানের খালাসিপাড়াতেই তাঁর বাড়ি। বর্ধমান থানার পুলিশ বুধবার গভীর রাতে শক্তিগড় থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।তৃণমূল কর্মী অশোক মাঝিকে খুনের ঘটনায় এই নিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ । দলের কর্মীকে খুনের ঘটনায় তৃণমূলের জেলা নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় তীব্র কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা । যদিও তৃণমূল নেতা শিবশংকর ঘোষ দাবি করেছেন তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে ।
পুলিশ বৃহস্পতিবার ধৃত তৃণমূল নেতা শিবশংকর ঘোষকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে । বর্ধমান আদালতের এক ঝাঁক আইনজীবী তাঁর জামিন চেয়ে সওয়াল করেন ।সরকারী আইনজীবী জামিনের বিরোধীতা করলেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন শিবশংকরের আইনজীবীরা ।
দু’পক্ষের সওয়াল শুনে সিজেএম ধৃতকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর ফের ধৃতকে আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,এলাকায় রাজনৈতিক খবরদারি কায়েম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শহর বর্ধমানের ৬ নম্বর ওয়াের্ডে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ জারি রয়েছে ।গত মঙ্গলবার দুপুরে সেই গোষ্ঠীবিবাদ চরমে ওঠে । অভিযোগ ওইদিন দুপুরে এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলার সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের উপর সশস্ত্র আক্রমন চালায় বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন । তাঁকে বাঁচাতে যান খালাসী পাড়া নিবাসী তৃণমূল কর্মী অশোক মাঝি ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা মাঝি । তখন মহম্মদ সেলিম কোন রকমে নিজেকে বাঁচিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে পারলেও বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনের নির্মম আক্রমণের শিকার হন অশোক ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা । রাস্তায় ফেলে তাঁদের নির্মম ভাবে মারধোর করা হয় বলে অভিযোগে । স্থানীয়রা রক্তাত অবস্থায় তাঁদের দু’জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেড হাসপাতালে পাঠায় । সেখানেই ওই দিন সন্ধ্যায় অশোক মাঝির মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা নিয়ে প্রাক্তন কাউন্সিলার সৈয়দ মহম্মদ সেলিম বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । পাশাপাশি মৃত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী চন্দনা মাঝিও আলাদা ভাবে আভিযোগ দায়ের করেন । অভিযোগে নাম জড়িয়েছে, এনটিটিইউসি প্রাক্তন জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদ ও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রবের। পুলিশ তাদেরও খোঁজ চালাচ্ছে ।
এদিকে তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনায় তৃণমূল নেতা শিবশংকর ঘোষের গ্রেপ্তার হওয়া নিয়ে
এদিন তীর্যক কটাক্ষ করেন জেলা বিজেপির কনভেনার কল্লোল নন্দন।তিনি বলেন,’মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন খেলা হবে। সেই খেলাই শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল ভোটে জেতার পর বিজেপি কর্মীদের উপর আক্রমণ, অত্যাচার চালিয়েছে । এখন ওদের নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদন্দের খেলা হচ্ছে ।’সেই খেলাতেই অশোক মাঝিকে জীবন খোয়াতে হল বলে জানান কল্লোল নন্দন । যদিও জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানিয়েছেন, আইন আইনের পথে চলবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে পুলিশ তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। তবে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণে এই খুন বলে তিনি মানতে চান নি ।।