এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৯ এপ্রিল : মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে গোটা দেশ । এখনো কয়েক শত ঘরছাড়া পরিবার মালদা জেলার বৈষ্ণবনগরে একটা স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন । শুক্রবার ঘরছাড়াদের ক্যাম্পে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন । কিন্তু সেই সময় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । এই বিষয়ে রাজ্য পুলিশের অতি সক্রিয়তায় নিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । রাজ্যপালের উপস্থিতিতেই অনেক স্থানীয় মানুষও ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন । তারাও রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন । কিন্তু, সকলকেই আটকে দেয় রাজ্য পুলিশ। রাস্তাতে করে দেওয়া হয় ব্যারিকেড। এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘরছাড়ারারাও ।
এদিকে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে একটা গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর দাবি,রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য নিখুঁত অঙ্ক কষে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনাটা ঘটিয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । এনিয়ে তিনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে অভিযোগের আঙুলও তুলেছেন । কি সেই “নিখুঁত অঙ্ক”, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’একদম রাজনৈতিক কারণে মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনা ঘটানো হয়েছস । সেটা তিনি (মমতা ব্যানার্জি) নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বলেও ফেলেছেন ।’ তিনি বলেন,’নিখুঁত অংক কষে করেছে কারণ ৪৮ হাজার ভোটে মোথাবাড়িতে পিছিয়ে আছে তৃণমূল । শামসেরগঞ্জ এবং ফারাক্কায় দুটোতেই ঈসা খান চৌধুরী লিড আছে । মোথাবাড়িতে ৬৬ শতাংশ মুসলমান বুথ,৩৪ শতাংশ হিন্দু বুথ ৷ আর এই দুটোতে ২৫ শতাংশের নিচে হিন্দু ভোট । এই তিনটে বিধানসভার সিট, তার সাথে মাঝখানে পড়ছে কালিয়াচক এবং বৈষ্ণবনগর, তার মধ্যে বৈষ্ণবনগরব বিজেপি লিড আছে,একদম অংক কষে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী এটা করিয়েছেন ।’ তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস বুঝতে পারছে যে গত লোকসভাতে যে মুসলিমগুলো কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল সেই ভোট মমতা ব্যানার্জির দাঙ্গা লাগিয়ে নিয়ে নিল । আর তৃণমূল কংগ্রেস এই দাঙ্গাটা করিয়েছে । পুলিশ মন্ত্রী, যার ২২০-২৫ টা বিধায়ক, বিপুল ক্ষমতা, তিনি ওখানকার পুলিশকে মার্কেট থেকে হওয়া করে দিয়েছলেন । গত শুক্রবার বেলা ২ টো থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সেখানে কোন পুলিশ ছিল না।পরে বিএসএফের জওয়ানরা গিয়ে স্কুলের বাচ্চাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে,কারণ স্কুলের গাড়ি গুলো পুড়িয়ে দিয়েছিল । পরের দিন স্থানীয় জেলাশাসক এবং ডিআইজি বিএসএফকে সীমানায় চলে যেতে বলে ।’
নেতাজী ইন্ডোরে ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নিশানা করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । তার কারনও ব্যাখ্যা করেছেন শুভেন্দু । এই বিষয়ে তিনি বলেন,’অমিত শাহকে গালাগালি করার কারণ হচ্ছে যে গত ১১ তারিখে বিএসএফ সঙ্গে সঙ্গে চলে এলো, ১২ তারিখে যখন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতানের জন্য কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী তৎপরতা দেখিয়েছিলেন, প্রথমে পাঁচ কোম্পানি এবং পরে ১৭ কোম্পানি করে দিয়েছিলেন, আর তার এই প্রোএকটিভ রোলের জন্য মমতা ব্যানার্জি তাকে গালাগালি করছেন ।’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ভয়াবহ । গত ১১ এবং ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদে যে ক্ষতিটা করেছে তা কতটা ভয়াবহ ছিল কল্পনাও করতে পারবেন না । খুবই করুন অবস্থা । গ্রামের পর গ্রাম, হিন্দু যেখানে সংখ্যা কম, ২৮-৩০-৫০ টা বাড়ি,একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে । ওখান থেকে আমি যে ভিডিওগুলো পাচ্ছি তা খুবই ভয়ঙ্কর । এটা ছোটখাটো দাঙ্গা বা আইন-শৃংখলার অবনতি নয়,কাশ্মীরের মতো হিন্দু জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণ শূণ্য করে দেওয়াই লক্ষ্য । যে প্যানিক তারা ১১-১২ তারিখে দেখেছেন সেখান থেকে তাদের কোনভাবেই আত্মবিশ্বাস ফেরানো যাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হচ্ছে ।
আপনি ক্ষতিপূরণ বলুন, টহলদারি বলুন, সর্বদলীয় মিটিং বলুন, সর্ব ধর্মের সংহতি সভা বলুন, নেতাদের পাঠিয়ে বলুন, কিছুতেই কিছু করতে পারবেন না ।’
তিনি বলেন, আপনি ভাবতে পারবেন না গত শুক্রবার বেলা দুটো থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছটা অব্দি পুলিশ নামক কোন বস্তু ছিল না । ধুলিয়ান বাজারের একজন ভদ্রলোক বলছেন, আমি টিএমসিকে পার্টি অফিস করার জন্য বাড়ি দিয়ে রেখেছি । কিন্তু আমাকেও হিন্দু বলে ছাড়লো না, শেষ করে দিল । ধুলিয়ানের জৈন সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তারা আমাকে সাজুর মোড়, ডাকবাংলো মোড় থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত যে লিস্ট পাঠিয়েছে তা আতঙ্কিত করে দেওয়ার মত ।’
তিনি বলেন,’ওষুধ নেই, বেবি ফুড নেই, জামা কাপড় পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে । একটা পরিবারের ৫০০০ টাকার নোট পুড়িয়েছে । একটা হিন্দু পরিবারের বিড়ি শ্রমিক মহিলার মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা দেড় লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে৷ ক্ষতিটা ব্যাপক আকারে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’যদি বলেন বিজেপি হিন্দুর পক্ষে দাঁড়িয়েছে । কারণ হিন্দুরা আক্রান্ত । কোথাও দেখতে পাবেন না মুসলিমরা আক্রান্ত হয়েছে । মুসলিমরাও তো রাজ্যের কোথাও ১ থেকে ২০ শতাংশের নিচে আছে । এটাই যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন যে ১০০ টা হিন্দুর মধ্যে ৫০ টা মুসলিম সুরক্ষিত কিন্তু একটা মুসলিমের মধ্যে পাঁচজন হিন্দু যদি থাকে তারা সুরক্ষিত নয় । তাই আমাদের অবস্থান মানবতার পক্ষে৷ তার কারণ হিন্দু আক্রান্ত ।’ তিনি বলেন,’মোথাবাড়ি, ধুলিয়ান, সাজুর মোড়, ডাকবাংলা মোড়, সুতি আপনি কোথাও দেখাতে পারবেন না যে এক লাইনে দোকান পোড়ানো হয়েছে । যেখানে পাঁচটা দোকান আছে দুটো হিন্দু দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে বাকিগুলো অক্ষত আছে । এটাতো ধর্মীয় যুদ্ধ । বেছে বেছে, চিহ্নিত করে হিন্দুদের উপর আক্রমণ হয়েছে । এটা হিন্দু শূন্য করার পরিকল্পনা । তাই বিজেপির অবস্থান, আক্রান্ত হিন্দুদের পক্ষে হিন্দুরাই ।’
মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় সিপিএম ও কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’সিপিএমের অবস্থান খুব পরিষ্কার৷ তারা আনিসের জন্য ইনসাফ যাত্রা করে কিন্তু হরগোবিন্দ দাস এবং চন্দন দাসের জন্য লড়তে রাজি নয় । বরঞ্চ মোহাম্মদ সেলিম মমতা ব্যানার্জি, ধুলিয়ানের চেয়ারম্যান, ধুলিয়ানের তৃণমূল সভাপতি, শামশেরগঞ্জের এমএলএ-এর গ্রেপ্তারের দাবি না করে আমার গ্রেফতারের দাবি তুলছে । উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার । মমতা ব্যানার্জি সরাসরি তোষামোদের রাজনীতি করছে আর সিপিএম ঘুরিয়ে করছে । কংগ্রেসের অবস্থান সকলেরই জানা, নতুন করে বলার দরকার নেই ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’হরগোবিন্দ দাসদের খুন করার সময় আমি যখন দেখলাম সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না তখন আবেদন করেছিলাম রামকৃষ্ণ মিশন এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘকে । ভারত সেবাশ্রম সংঘ প্রথম দিক থেকে কাজ করেছে। আমি রামকৃষ্ণ মিশনের কাছে কৃতজ্ঞ কারণ প্রথম দিন থেকে তারা ব্যাপকভাবে কাজ করছে প্রচারের আড়ালে থেকে । রেড ক্রস সোসাইটি ও কাজ করছে, রাজ্যপাল তাদের বলে দিয়েছিলেন ।’।

