প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ নভেম্বর : বাংলার রসগোল্লার প্রসিদ্ধি এখন গোটা বিশ্বজুড়ে।২০১৮ সালে জিআই স্বীকৃতি মেলার পর থেকে প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর’ দিনটিতে রসগোল্লা দিবস’ পালিত হয় ঠিকই।কিন্তু এই বিশেষ দিনটির তাৎপর্য ও রসগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে গ্রামবাংলার খুদে পড়ুয়ারা এখনও সেভাবে ওয়াকিবহাল নয়।তা জানতে পেরে মঙ্গলবার শতাধীক খুদে স্কুল পড়ুয়াকে রসগোল্লা খাইয়েই রসগোল্লার সৃষ্টি ইতিহাসের পাঠ দিলেন পূর্ব বর্ধমানে খণ্ডঘোষের জনপ্রতিনিধিরা । একবারে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাঁরা খুদে পড়ুয়াদের কাছে তুলে ধরলেন রসগোল্লার সৃষ্টি কর্তার পরিচিতি ও সৃষ্টি কাহিনী।যা শুনে মুগ্ধ হয়ে খুদে পড়ুয়ারা একসুরেই বলে বসলো ’জয় বাংলার রসগোল্লার জয়’ ।
বাংলার প্রসিদ্ধ মিষ্ঠান্ন গুলির অন্যতম হল রসগোল্লা । এই রসগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাসও বহু প্রাচীন। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী নদীয়া জেলার হারাধন ময়রাকে রসগোল্লার প্রথম সৃষ্টিকর্তা বলে ধরা হয়।তবে কলকাতার বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাস ওরফে নবীন ময়রাকে আধুনিক স্পঞ্জ রসগোল্লার প্রথম সৃষ্টিকর্তা বলে ধরা হয়।সুদূর ১৮৬৮ সালে নবীন ময়রাই গোটা পৃথিবীতে রসগোল্লার পরিচিতি ঘটিয়ে ছিলেন বলে ধরা হয়। তাই তাঁকেই রসগোল্লার কলম্বাস বলে উল্লেখ করা হয় ।ছানা, ময়দা ও চিনি সহযোগে তৈরি রসগোল্লা নিয়ে গর্ববোধ করেন না এমন কোন বাঙালি মেলাই ভার।এই রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতি (Geographical Indication) পেতেও পশ্চিমবঙ্গকে মিষ্টি লড়াইয়ে সামিল হতে হয় ওড়িষ্যার সঙ্গে।শেষ পর্যন্ত বাংলাই ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর জয় করে জিআই স্বীকৃতি।
রসগোল্লার এই গর্বের ইতিহাস খুদে পড়ুয়াদের কাছে তুলে ধরতে এদিন বিকালে খণ্ডঘোষের জন প্রতিনিধিরা বাদুলিয়া গ্রামের পীড়তলার আটচালায় একটি শিক্ষা মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।সেই অনুষ্ঠানে শিক্ষকের ভূমিকায় সামিল হন খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম।তাঁর সঙ্গে সহ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেন অপর জেলা পরিষদ সদস্য তথা স্কুল শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়, সগড়াই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শুভেন্দু পাল ,স্কুল শিক্ষক অনাবিল ইসলাম এবং স্থানীয় শিক্ষানুরাগী শেখ কামাল উদ্দিন। প্রায় দেড় শতাধীক স্থানীয় স্কুল পড়ুয়া আটচালায় রসগোল্লার ইতিহাস বিষয়ের পাঠ নিতে উপস্থিত হয়। তাদের সবার হাতে প্রথমে রসগোল্লা তুলেদেন আপার্থিব ইসলাম সহ অন্য
সকল জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকরা।তাঁরা তার পর খুদে পড়ুয়াদের রসগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস নিয়ে পাঠদান শুরু করেন।তাঁরা রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তার পরিচিতি, রসগোল্লা সৃষ্টির সময়কাল,কি কি উপকরণ দিয়ে কি ভাবে রসগোল্লা তৈরি হয় এবং ওড়িষ্যার সঙ্গে কতটা মিষ্টি যুদ্ধের পর বাংলার রসগোল্লা জিআই স্বীকৃতী লাভ করে,সেইসব কিছু খুদে পড়ুয়াদের কাছে তুলে ধরেন।বাংলার গৌরবের রসগোল্লার ইতিহাস নিয়ে শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধিদের পাঠদান অভিভাবক মহলের প্রশংসা কুড়োয় ।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল তাঁদের দলীয় কর্মীদের ভোট রাজনীতির পাঠ দিচ্ছেন।তা না করে এমন সময়ে হঠাৎ করে গ্রামের আটচালায় খুদে পড়ুয়াদের রসগোল্লা নিয়ে পাঠদানের কি প্রয়োজন হল? এই প্রশ্নের উত্তরে অপার্থিব ইসলাম বলেন, “বাংলার রসগোল্লা জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। তার পর থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার রসগোল্লার প্রসিদ্ধি। তার জন্য প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর রসগোল্লা দিবস পালিত হয়।এই রসগোল্লা দিবস পালনে শহর এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা উৎসাহ দেখালেও গ্রাম বাংলায় তেমনটা হয় না। সেই কারণে গ্রামের খুদে পড়ূয়ারাও জানতে পারে না কেন বাংলার রসগোল্লা বিখ্যাত? রসগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাসটাই বা কি?অপার্থিব বাবু বলেন আজকের খুদে পড়ুয়ারা বাংলার আগামী ভবিষ্যৎ। তাঁরা যদি বাংলার গর্বের রসগোল্লা সম্বন্ধে অন্ধকারে রয়ে থাকে তবে আগামী দিনে বাংলার রসগোল্লার ইতিহাসটাই মানুষের মনথেকে মুছে যাবে।সেটা যাতে না হয় তাই এদিন খুদে পড়ুয়াদের রসগোল্লা খাইয়েই
জনপ্রতিনিধিরা মিলে রসগোল্লা নিয়ে পাঠদান
করলেন ।
শিক্ষক বিশ্বনাথ রায় এবং অনাবিল ইসলাম বলেন, বর্ধমানের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন সীতাভোগ ও মিহিদানা সহ বাংলার গৌরবের রসগোল্লার ইতিহাস ভুললে চলবে না । তাই এইসব মিষ্টির ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে আরো অনেক গ্রামে গিয়ে খুদে পড়ুয়াদের এইভাবে পাঠদান করার বিষয়টি আমরা ভাবনা চিন্তায় রেখেছি“। রসগোল্লা খাইয়ে রসগোল্লা নিয়ে পাঠদানের বিষয়টি খুদে পড়ুয়াদেরও মন জয় করে নেয়।শেখ তানজিল ও রঘুনাথ দাঁ নামে দুই খুদে পড়ুয়া বলে,এতদিন নিজেদের বাড়িতে ও অনুষ্ঠান বাড়িতে গিয়ে মন ভরে রসগোল্লা খেয়েছি । তবে বাংলার রসগোল্লার সঙ্গে যে এত গর্বের ইতিহাস জড়িয়ে আছে তা জানতাম না । যা আজ জানলাম। এই ইতিহাস বাড়ির সবাইকে জানাবো,স্কুলের অন্য বন্ধুদেরকেও শোনাবো ।’।